ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাঙ্গনে শহীদ মিনার

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শিক্ষাঙ্গনে শহীদ মিনার

শহীদ মিনার বাংলা ভাষা সংগ্রামে প্রাণদানকারী শহীদদের স্মরণে স্থাপিত হলেও কালের পরিক্রমায় এটি হয়ে উঠেছে একটি অনন্য প্রতীক। বাঙালীর সকল প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে ছায়াবিস্তার করে চলেছে এই শহীদ মিনার। একইসঙ্গে বাঙালীর সংস্কৃতিচর্চা, তা কবিতা-গান-নাটক যেটাই হোক না কেন, শহীদ মিনারের পাদদেশে আয়োজন করে আমরা স্বস্তি ও শ্লাঘা অনুভব করি। শুধু একুশের প্রথম প্রহরে কিংবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দিনভর শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ নয়, যে কোন জাতীয় সাফল্যে শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে আমরা একাত্ম বোধ করি। আমাদের প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকার শাণিত ও সংহত হয় শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করেই। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের রক্তস্নাত ঘটনার পর দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। একুশের ভোরে প্রভাত ফেরিতে অংশ নিয়ে সম্মিলিতভাবে শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্পিত শ্রদ্ধা জানানো আমাদের জীবনাচরণ তথা সংস্কৃতির অংশভাগ হয়ে উঠেছে। ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি দিলে আমরা দেখব ভাষা আন্দোলনে ঢাকার বাইরে যে জেলাগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল, তার মধ্যে অন্যতম পাবনা। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টে বাংলাকে প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব নাকচ হওয়ার পর সারাদেশের মতো পাবনাতেও শুরু হয় আন্দোলন। গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৪৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে পাবনা শহরে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে সমবেত ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হলে এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অনেকে আহত হন। পুলিশ আনুমানিক ৪০ জনকে গ্রেফতার করে। ১৯৫২ সালের ৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেওয়ার পর ঢাকার মতো পাবনাতেও ছাত্রজনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ভাষা আন্দোলনে এত বড় অবদান থাকলেও ৭৫ পরবর্তী সময়ে এ জেলাতেই মাওলানা নিজামী, সুবহানের মতো যুদ্ধাপরাধীরা নানা ষড়যন্ত্রে বনে যান এমপি, মন্ত্রী। মৌলবাদীদের বাধায় প্রকাশ্যে একুশ উদযাপন করতে পারেননি প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মীরা। ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াতের অনাগ্রহে জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছিল না শহীদ মিনার। নতুন প্রজন্মকে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পাবনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাত্র এক বছরেই জেলার ১৭০১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। কোন বিশেষ বরাদ্দ ছাড়াই স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত অর্থায়নে নির্মিত এসব শহীদ মিনার নিয়ে দারুণ খুশি শিক্ষার্থীরা। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সবখানেই এবার যথাযোগ্য মর্যাদায় অমর একুশে পালিত হচ্ছে। দেশের আগামী প্রজন্মের মধ্যে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের পাশাপাশি দেশাত্ববোধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য চেতনা জাগ্রত করার প্রয়োজনে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাঞ্ছনীয়। দেশে সরকারীভাবে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করার নির্দেশনা রয়েছে। আর এ দিবস পালন মানেই শহীদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা দিবসের গুরুত্ব ও যথার্থতা জানাতে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের পাশাপাশি স্থাপিত শহীদ মিনারগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া কর্তব্য।
×