ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসীদের টার্গেট ভারত

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সন্ত্রাসীদের টার্গেট ভারত

পাকিস্তানের পাঞ্জাবের গুমতলা গ্রামের তিনটি মসজিদের একটি জামিয়া মসজিদ উসমানিয়াতে জানুয়ারির শেষ শুক্রবার জনতা নামাজের জন্য সমবেত হয়। ভারতের কোন স্থানে নিহত তাহির নামে উল্লিখিত এক ব্যক্তির স্মরণে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ওই জামায়াতের ইমাম বলেন, ইসলাম এক বিশ্ব শক্তি এবং তা ধ্বংস করা যাবে না। যেই তা ধ্বংস করার চেষ্টা করুক না কেন, সে নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে। গত তিন মাস ধরে ওই ইমাম জাইশ-ই-মোহাম্মদের জেনারেল পাকিস্তান জুড়ে প্রকাশ্যে নতুন ক্যাডার রিক্রুট ও তহবিল সংগ্রহ করতে অনুরূপ সমাবেশ করে চলেছেন। সন্ত্রাসী দলটির মুখপাত্র আল কালামে তাকে জাইশ-ই-মোহাম্মদের মুফতি জেনারেল মুফতি আবদুল রউফ আসগর নামেও অভিহিত করা হয়। ইসলামাবাদ গত মাসে লস্কর-ই-তৈয়বা প্রধান হাফিজ মোহাম্মদ সাঈদকে আটক করে এবং এর মূল রাজনৈতিক সংগঠন জামাত উদ-দাওয়াকে নিষিদ্ধ করছে বলে ঘোষণা দেয়। এভাবে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিশ্ব ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে এর প্রতিশ্রুতির আভাস দেয়। কিন্তু জাইশ পাকিস্তানে জিহাদীদের প্রধান সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাইশ পাকিস্তানে নিষিদ্ধ এবং এর প্রধান ও আসগরের বড় ভাই মাসুদ আজহার আলভিকে ইসলামাবাদে গৃহবন্দী করা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ দলটি গত বছর ভারতের পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল বলে স্বীকার করেন। কিন্তু দলটি বাস্তবে বিনা বাধায় এর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের ওপর দৃশ্যত নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এর মুখপাত্র আল কালাম ১০ রুপীতে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে জাইশের সদস্য সংগ্রহ অভিযান কত জোরদার হয়েছে, তার স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। এর ফেব্রুয়ারি ৩-৯ ইস্যুতে এমন এক সমাবেশের বর্ণনা দেয়া হয়, যাতে বাহাওয়ালপুরের মারকাজ উসমান ওয়া আলী মাদ্রাসায় ১৬ ব্যক্তি জিহাদ সম্পর্কিত ধর্মীয় উক্তিগুলো ব্যক্ত করেন। মাসুদ আজহার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। মুখপত্রে এ তাকে আমির-উল-মুজাহিদীন বা মুজাহিদদের নেতা বলে বর্ণনা করা হয়। আল কালামের সর্বশেষ কার্টুনে শান্তি চুক্তিগুলোর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা হয় এর ক্যাপশন ছিল ‘আমরা শান্তির জন্য আফগানিস্তানের সঙ্গে কাজ করতে চাই : সরকার।’ এতে দেখানো হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র আশরাফ মোদি নামের এক সৈন্যকে ব্যবহার করে পাকিস্তানের দিকে কামান দাগছে। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম যুক্ত করে আশরাফ মোদি করা হয়। লস্কর-ই-তৈয়বা ২০০৮ সালের ২৬ নবেম্বরের হামলার ভারত বিরোধী জিহাদীদের সবচেয়ে দৃশ্যমান মুখ হয়ে রয়েছে। কিন্তু জাইশ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাঠানকোট ও নাগরোটাতে খুবই জটিল ও গুরুতর হামলা চালিয়েছিল। অপরদিকে, লস্কর উরিতে মাত্র একটি চমক লাগানো হামলা চালাতে পেরেছিল, যাতে অনেক বেশি লোক মারা গিয়েছিল। এর বদলে লস্কর লোকজনকে সংগঠিত করার দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। দলটি তেহরিক-ই-আজাদি কাশ্মীর বা কাশ্মীর মুক্তি আন্দোলন নামে কাশ্মীর দিবস উপলক্ষে রবিবার পাকিস্তান জুড়ে সমাবেশের আয়োজন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাইশকে দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণে রাখা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিংজেন্স আইএসআই ডিরেক্টরেটের এক সুচিন্তিত কৌশলের অংশ হতে পারে। বিশিষ্ট গবেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, জাইশ লস্করের মতো প্রচারমুখী নয় এবং এটি জিহাদীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাওয়ার প্রতিযোগিতা থেকে কয়েক বছর দূরে থাকতে সক্ষম হন। সেই কারণে এটি ভারত ও কাশ্মীরের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধকারী বলে পরিচিতি পেয়েছে। জাইশ দিল্লীর পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালালে ভারত ও পাকিস্তান ২০০১-০২ সালে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জাইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ভারতের চেষ্টা চীন ব্যর্থ করে দেয়। জাইশের পুনরুত্থান পাকিস্তানেরই জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলে সন্দেহ করার অন্তত কিছু কারণ ইতিহাস থেকে উদঘাটন করা যায়। সংগঠনটি একটি ভারতীয় বিমান ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার পরও আইএসআই এটিকে নিরাপত্তা দেয়। কিন্তু জাইশ পরে সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের উপর ক্ষুব্ধ হয়। তারা তাকে হত্যা করার চেষ্টায় জড়িত ছিল বলে তিনিই উল্লেখ করেন। পাকিস্তান এয়ারফোর্সের একটি বাসে চালানো হামলা ও অন্যান্য হামলায় জাইশ-ই-মোহাম্মদ কর্মীরা জড়িত ছিল। পাঞ্জাব পুলিশের ২০১১ সালের রেকর্ডে ওইসব কর্মীদের মধ্যে মতিউর রহমান আরাইন, মোহাম্মদ হারুন আকবর খান ও মোহাম্মদ তৈয়বের নামও ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের পাঞ্জাব পুলিশের হাতে সংরক্ষিত সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী তালিকা থেকে জাইশের নাম বিলুপ্ত হয়েছে। এতে আভাস পাওয়া যায় যে, মাসুদ আজহার তার সংগঠন থেকে পাকিস্তান বিরোধী জিহাদীদের নাম বাদ দিয়েছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
×