ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণ ও আমানতের সুদের হার বেড়েছে ১৫ ব্যাংকের

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঋণ ও আমানতের সুদের হার বেড়েছে ১৫ ব্যাংকের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদ হারের ব্যবধান (স্প্রেড) আবারও বাড়ছে। গত ডিসেম্বরের মধ্যে ২৩ ব্যাংকে নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বেসরকারী ও বিদেশী খাতের অন্তত ১০টি ব্যাংক এ নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে নতুন করে আরও ৫টি ব্যাংকের স্প্রেড নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। জানা গেছে, বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো স্প্রেড নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে না আনায় সম্প্রতি ‘স্প্রেডকে’ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নির্দিষ্ট সময়ান্তে যে সব ব্যাংকের স্প্রেড সীমা অতিক্রম করবে, তাদের ক্যামেলস রেটিং নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, সুলভ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামানোর দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি অনুযায়ী, ঋণের সুদহার কমাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর বিভিন্ন সময়ে চাপ সৃষ্টি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নির্ধারিত সীমার বাইরে থাকা ২৩ ব্যাংকে চিঠি দিয়ে স্প্রেড কমানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। ঐ নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৪ ব্যাংককে ৩০ সেপ্টেম্বর, ৬ ব্যাংককে ৩০ অক্টোবর, ১টি ব্যাংককে ৩০ নভেম্বর ও দুটি ব্যাংকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু গত ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে ওই নির্দেশনা পরিপালন করেনি ১০টি ব্যাংক। এর মধ্যে বেসরকারী ও বিদেশী খাতের ৫টি করে ব্যাংক রয়েছে। জানা গেছে, অগ্রণী, এবি, উরি, দ্যা সিটি, আইএফআইসি, পূবালী, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন, ব্যাংক এশিয়া, ট্রাস্ট, এনআরবি কমার্শিয়াল, মেঘনা ও মধুমতি এই ১৪ ব্যাংকে ৩০ সেপ্টেম্বর, সিটি ব্যাংক এনএ, এইচএচবিসি, ওয়ান, ইউনিয়ন ও এনআরবি এই পাঁচ ব্যাংকে ৩০ অক্টোবর, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে ১ নবেম্বর এবং স্টান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও ব্র্যাক ব্যাংক এই তিন ব্যাংকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্প্রেড সীমা ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে এ তালিকায় থাকা ১০টি ব্যাংকই তাদের স্প্রেড ৫ নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক, ডাচ্ বাংলা, আইএফআইসি ব্যাংক, ইউনিয়ন ও এনআরবি ব্যাংক। আর বিদেশী খাতের স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, সিটি ব্যাংক এনএ, উরি ব্যাংক ও এইচএসবিসি ব্যাংক। এছাড়া ডিসেম্বর শেষে এ তালিকার বাইরে আরও ৫টি ব্যাংকের স্প্রেড নির্ধারিত সীমার বাইরে রয়েছে। এগুলো হলো-রূপালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে স্প্রেড সীমা লংঘনে সবার শীর্ষে রয়েছে বেসরকারী ব্র্যাক ব্যাংক। এ সময়ে ব্যাংটির স্প্রেড রয়েছে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ স্প্রেড নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩৪, আইএফআইসি ব্যাংকের ৬ দশমিক ০১, উত্তরা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫২, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৩, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৫ দশমিক ০১, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৫, উরি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৯৮, এইচএসবিসির ৫ দশমিক ৯৪, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ৫ দশমিক ৮৩ ও সিটি ব্যাংক এনএ’র ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ স্প্রেড রয়েছে। এদিকে, সার্বিকভাবে আমানতের সুদের পাশাপাশি ঋণের সুদহার কমতে থাকায় ব্যাংকিং খাতে ডিসেম্বর শেষে গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
×