ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিটিইউকে কর্তৃপক্ষ করা হচ্ছে ॥ সরকারী ক্রয় কার্যক্রমে পরিবর্তন আসছে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

সিপিটিইউকে কর্তৃপক্ষ করা হচ্ছে ॥ সরকারী ক্রয় কার্যক্রমে পরিবর্তন আসছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বদলে যাচ্ছে সেন্টাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ সংস্থাটি বর্তমানে অনলাইনে সরকারি কেনাকাটার (ই-জিপি) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইউনিটের কার্যক্রম আরও সফলভাবে পরিচালনা করতে পৃথক কর্তৃপক্ষ করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সিপিটিইউ’র মহাপরিচালক ফারুক হোসেন বলেন, সরকারী ক্রয়ের পরিধি এখন অনেক বড় হয়েছে। এক সময় ২০-৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থাকলেও বর্তমানে তা ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকায় ছাড়িয়ে গেছে। এর বাইরে অনুন্নয়ন ব্যয় তো আছেই। তাছাড়া প্রকিউরমেন্ট এনটিটির সংখ্যাও গত দশ বছরে অনেক বেড়েছে। সরকারী ক্রয় কার্যক্রম একটি লিগ্যাল ফাংশন হওয়ায় তা মন্ত্রণালয়ের একটি উইং থেকে চালানো যায় না। এ জন্য সিপিটিইউকে কর্তৃপক্ষ করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সিপিটিইউ সূত্র জানায়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করছে সিপিটিইউ। এর প্রধান হচ্ছে মহাপরিচালক। সিপিটিইউ’র কার্যক্রম হিসেবে ই-জিপি (ই-টেন্ডারিং) পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিটটিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারী ক্রয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে রেগুলেটরি ভূমিকা পালন করার জন্য সিপিটিইউকে কর্তৃপক্ষে রূপান্তর করা হবে। এর নাম হবে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (সরকারী ক্রয় কর্তৃপক্ষ)। এর প্রধান থাকবেন একজন চেয়ারম্যান। এ জন্য অর্গানোগ্রাম তৈরি এবং আইনী ভিত্তি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। রিভিউ প্যানেলের অর্ডার (আদেশ) অনেক সময় সংস্থাগুলো মানে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ হলে তারা তা মানতে বাধ্য থাকবে। এ ছাড়া ই-জিপি অংশকে একটি কোম্পানিতে রূপান্তরের কার্যক্রম চলছে। এর জন্য একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকবেন। কোম্পানি হলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। এ বিষয়ে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল নিয়োগের জন্য কোম্পানি আইনের অধীন এর কর্পোরেটাইজেশনের আলোচনা চলছে। বর্তমানে ধার করা জনবল নিয়ে চলছে ই-জিপি কার্যক্রম। সূত্র জানায়, গত ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-জিপিতে আহ্বানকৃত দরপত্রের সংখ্যা হচ্ছে ৭৮ হাজার ৬৪৬টি। এগুলোর মোট মূল্য ৭০ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া নিবন্ধিত দরদাতার সংখ্যা ২৭ হাজার ৯৯৯। নিবন্ধিত ক্রয়কারী সংস্থা ৯৪৮টি (মোট ১ হাজার ২৩৩টির মধ্যে)। নিবন্ধিত ব্যাংকের সংখ্যা ৪৪টি। বিশ্বব্যাংকের লিড প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট ড. জাফরুল ইসলাম গত ডিসেম্বর মাসে এক অনুষ্ঠানে জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আওতায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রকিউরমেন্টের ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয়। প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে এখানে অর্থের অপচয় হয়। যদি ১ শতাংশ অর্থেও অপচয়ও রোধ করা যায়, সেটির পরিমাণ হবে ১০০ মিলিয়ন ডলার। এটা দিয়ে দুই হাজার প্রাইমারি স্কুল বা এক হাজার কিলোমিটার পল্লী সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও সরকারী অর্থ ব্যয়ে অধিকতর স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য ই- টেন্ডারিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। ২০১১ সালের ২ জুন এ প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ক্রয় প্রক্রিয়া ছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি দূর করতে অনেক আগে থেকেই দাতা সংস্থাগুলো চাপ দিয়ে আসছিল। এ অবস্থায় প্রথম পর্যায় সরকারী চারটি সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে পরীক্ষামূলকভাবে ই-টেন্ডারিং চালু করা হয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, প্রতি বছর সরকারীভাবে যে ক্রয় কাজ করা হয় তার অধিকাংশই এ চারটি সংস্থা সম্পন্ন করে থাকে। তাই এ ৪টি বৃহৎ সংস্থাকেই পাইলট প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছিল। বর্তমানে সব সরকারী সংস্থাকে ই-জিপির আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×