ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইন নারীদের হাতে কাঁটার বদলে ফ্রেম

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

রাখাইন নারীদের হাতে কাঁটার বদলে ফ্রেম

সাগরপাড়ের ঐতিহ্য রাখাইনদের তাঁত শিল্প এখন আর চোখে পড়ে না। কিন্তু রাখাইন নারীরা বসে নেই। তারা উল বোনার কাজে ঝুঁকে পড়েছে। উলের চাঁদর বিক্রি করে শতাধিক রাখাইন নারী জীবিকার চাকায় গতি এনেছে। প্রয়োজনীয় পুঁজির সঙ্কট থাকলেও ধার-দেনা কিংবা দাদন নিয়ে এসব রাখাইন নারী উল বোনার কাজ করছে। অধিকাংশ রাখাইন পল্লীতে ৫/৬/৭ পরিবার উল বুনছে। আর শীত মৌসুমে অপেক্ষাকৃত কম দামে এই চাদর বিকিকিনি হওয়ায় এর চাহিদাও বাড়ছে। রাখাইন পাড়ায় ঘুরলে এখন চোখে পড়ে রাখাইন নারীরা ব্যস্ত উলের চাদর বোনার কাজে। স্থানীয়ভাবে বাড়িতে বসে এই চাদর বিক্রির সুযোগ রয়েছে। কুয়াকাটায় আগত পর্যটক দর্শনার্থীরা উলের চাদর কেনার কারণে কুয়াকাটার দোকানিদের কাছে পাইকারি বিক্রির সুযোগ রয়েছে। মূলত দারিদ্র্য ও জমিজমা অন্যায়ভাবে দখলের কারণে এককালের সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী রাখাইন জনগোষ্ঠী পরিণত হয়েছে ক্ষয়িষ্ণু সম্প্রদায়ে। সরেজমিনে দেখা যায়, রাখাইন নারী চিনচিন তার সহযোগীকে নিয়ে উলের চাদর বুনছেন। বিভিন্ন রঙের সুতায় চাদর বোনার ফাঁকে ফাঁকে জানালেন, দু’জনে মিলে সারাদিনে একটি চাদর বোনা যায়। একটি চাদর বুনতে প্রায় পাঁচশ’ গ্রাম সুতা লাগে। তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকায় বিক্রি করা যায়। আর চাদর বোনার ফ্রেম বানাতে কাঠ, লোহা ও মিস্ত্রি খরচ নিয়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। চিনচিনের ভাষ্য, কোন ট্রেনিং লাগে না। আমরা সবাই বানাতে পারি। মিশ্রিপাড়ার রাখাইন মাদবর আফ্রু মং জানান, তাদের পাড়া ছাড়াও আমখোলাপাড়া, কেরাণীপাড়া, কালাচানপাড়া, বৌলতলীপাড়া, মেলাপাড়া, হাড়িপাড়া, সোনাপাড়া, পক্ষিয়াপাড়া, মধুপাড়া, নতুনপাড়ায় অন্তত ৬০টি পরিবার চাদর বোনার কাজ করছে। তবে সুতার চরম সঙ্কট রয়েছে বলে আরেক রাখাইন নারী লাউচিং জানালেন। তিনি জানান, ঢাকা থেকে সুতা কিনতে কেজি প্রতি প্রায় চারশ’ টাকা খরচ হয়ে যায়। পুঁজির চরম সঙ্কট থাকায় আগেভাগে শীতের প্রথম দিকে সুতা কেনা সম্ভব নয়। তাই বেশি আয় করা যায় না। রাখাইন মাদবর আফ্রু মং আরও জানান, প্রয়োজনীয় সুতা আর উল বোনায় জড়িত প্রত্যেক রাখাইন নারীকে ২০ হাজার টাকা করে পুঁজির জোগান দিতে পারলে একেকটি পরিবার শীতের এক মৌসুমে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করতে পারত। Ñমেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×