ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহনে যাত্রী ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

গণপরিবহনে যাত্রী ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর গণপরিবহনে যাত্রী ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই। সরকারের পক্ষ থেকে অনেকবার তালিকা টাঙিয়ে সে অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হলেও কেউ তা মানছে না। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও কোন কোন পরিবহন মালিকের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রভাবশালী মালিকরা যথারীতি মনগড়া ভাড়া নির্ধারণ করে তা আদায় করছেন। ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন, প্রতিটি রুটের দূরত্ব হিসাব করে কোন্ বাস কোন্ স্টপেজে থামবে এবং কোন্ দূরত্বে ভাড়া কত হবে, সেটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বাস মালিকরা ভাড়ার এই চার্ট মানতে বাধ্য। ভাড়া নিয়ে অনিয়ম ঠেকাতে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত তৎপর রয়েছে। জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে পাঁচ সহস্রাধিক বড় বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। কিন্তু এগুলোর একটাতেও ভাড়ার চার্ট নেই। মালিকদের কেউ কেউ নিজেদের সুবিধামতো কখনও ‘বিরতিহীন’, কখনও ‘ননস্টপ’ ইত্যাদি নাম দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। নগরীর ব্যস্ততম রুটগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মতিঝিল-মিরপুর। ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রুটে সব সময় বিপুলসংখ্যক যাত্রী থাকে। এ কারণে প্রতিটি স্টপেজের কত ভাড়া হবে, সেটা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু অধিকাংশ পরিবহন কোম্পানি মতিঝিল-মিরপুর ১২ নম্বর সেকশন পর্যন্ত রুটকে দুটি ভাগ করে ভাড়া আদায় করছে। এর একটি ভাগে মতিঝিল-ফার্মগেট পথে নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা এবং ফার্মগেট-মিরপুর ১২ নম্বর পথে সময়ভেদে ১৫/২০ টাকা। এ রুটের স্বল্প দূরত্বে সর্বনিম্ন ৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা থাকলেও ১০ টাকার নিচে ভাড়া নেয়া হয় না। হিসাব করে দেখা গেছে, মতিঝিল থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথের দূরত্ব ৮.২ কিলোমিটার। এ পথে ভাড়া আসে ১৩ টাকা। কিন্তু বিভিন্ন বাসে নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। এ রুটে চলাচলকারী বিকল্প অটো সার্ভিসের একটি বাসের (নম্বর ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯৩৬০) হেলপার বলেন, মতিঝিল থেকে পল্টন, শাহবাগ ও বাংলামোটর হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত যেখানেই নামেন, ভাড়া ১০ টাকা। মতিঝিল থেকে ফার্মগেটের পর মিরপুর-১২ পর্যন্ত যে কোন স্টপেজে ভাড়া ২৫ টাকা। এটা মালিকরা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সায়েদাবাদ থেকে বাড্ডার দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। মিনিবাসে এ দূরত্বে ভাড়া আসে প্রায় ১৫ টাকা। কিন্তু তুরাগ, জেএম, অনাবিল নামের বাসে রাখা হচ্ছে ২০ টাকা। একই দূরত্বে রাইদা নামের অপর একটি কোম্পানির বাসে রাখা হয় ২৫ টাকা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে শুধু মতিঝিল, মিরপুর কিংবা সায়েদাবাদই নয়, নগরীর প্রতিটি রুটের অধিকাংশ বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বিআরটিএর নির্দেশনা থাকলেও কোন বাসে ভাড়ার চার্ট টাঙানো হয়নি। কনডাক্টররা যে ভাড়া হাঁকছেন, যাত্রীরা সেটাই দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের এই দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এটা নিয়ন্ত্রণের কেউ নেই। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কোন কোন বাসে তিনগুণ বেশি ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, শহরের বাসে ভাড়ার তালিকা বেশিদিন টাঙিয়ে রাখা যায় না, যাত্রীরা ছিঁড়ে ফেলে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ আমাদের কাছেও আসে। তখন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
×