ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইসলামে মৃত্যুর ধারণা

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইসলামে মৃত্যুর ধারণা

(গত শুক্রবারের পর শেষাংশ) সাধারণত এই আলমে র্বযখকে বলা হয় কবরের জগত, আদতে এই ‘আলমে র্বযখের ব্যাপ্তি গোরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, যেমনটা আমরা একটা কক্ষে বসবাস করেও পৃথিবী নামক জগতের বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত হই। তাই কবরে রাখা হোক কিংবা সমুদ্র তলদেশেই ফেলে দেয়া হোক কিংবা পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে উড়িয়ে দেয়া হোক- মৃত্যুর পরে আবার তাকে সেই ‘আলমে র্বযখেই জীবিত করা হয়। মৃত্যু যখন আসে তখন যদি কেউ দুর্ভেদ্য ও নিñিদ্র দুর্গেও পালায়- সেখানেও মৃত্যু তাকে পাকড়াও করে। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : অবশেষে যখন তোমাদের কারও মৃত্যুকাল এসে হাজির হয় তখন আমার প্রেরিতরা (ফেরেশ্তা) তার মৃত্যু ঘটায় এবং তারা কোন ত্রুটি করে না। (সূরা আন’আম : আয়াত ৬১)। ‘আলমে র্বযখে জীবিত করার পর সেই ব্যক্তির কতকগুলো জিজ্ঞাসার মোকাবেলা করতে হয়। সঠিক জবাব দিতে পারলে মুক্তির আস্বাদন লাভ করা সম্ভব হয়। হাদিস শরীফে আছে যে, মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় তখন তার নিকট কালো ও নীল বর্ণের দুজন ফেরেশতা হাজির হয়। তাদের একজনের নাম মন্কির, অপরজনের নাম নকীর। তারা তাঁকে (হযরত মুহম্মদ সা.কে) দেখিয়ে বলে, এই লোকটি কে? যদি সেই ব্যক্তি মুমিন হয় তাহলে জবাব দেবে, ইনি আল্লাহ্র বান্দা ও রসূল। সে আরও বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরিক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহম্মদ (সা) তাঁর বান্দা ও রসূল। তাঁরা বলবেন, আমরা জানতাম তুমি এটাই বলবে। অতঃপর তাঁর কবরকে ৭০ গজ করে চারদিকে প্রশস্ত করা হবে এবং সমুজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করা হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে ঘুমাও। সে বলবে, আমার পরিজনদের কাছে আমি ফিরে যেতে চাই এবং আমার এ অবস্থা তাদের জানাতে চাই। তারা বলবে, বরের যেমন সর্বাপেক্ষা প্রিয়জন ছাড়া অন্য কেউ তার ঘুম ভাঙায় না, তেমনি আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে জাগিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তুমি সুখে নিদ্রা যাও। আর যদি মৃত ব্যক্তি মুনাফিক হয় তবে সে বলবে, মানুষকে যেরূপ বলতে শুনেছি আমিও সেরূপ বলি- আমি জানি না। তাঁরা বলবেন, আমরা জানতাম তুমি এটাই বলবে। অতঃপর যমিনকে বলা হবে, তুমি তার জন্য সঙ্কীর্ণ হয়ে যাও। অতঃপর তা তার জন্য অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হবে, তার দুই পাশ পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং আল্লাহ্ সেই শয্যা থেকে তাকে উত্থিত না করা পর্যন্ত সে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। (তিরমিযী শরীফ)। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও। (সূরা তাকাছুর : আয়াত ১-২)। আর কবরে যারা আছে তাদের নিশ্চয়ই আল্লাহ্ উত্থিত করবেন। (সূরা হজ্জ : আয়াত ৭)। যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে তখনই তারা কবর থেকে ছুটে আসবে তাদের রবের দিকে। (সূরা ইয়াসিন : আয়াত ৫১)। অপমানে অবনত নেত্রে সেদিন ওরা কবর হতে বের হবে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায়। (সূরা কামার : আয়াত ৭)। এবং কবর যখন উন্মোচিত হবে তখন প্রত্যেকে জানবে সে অগ্রে কি পাঠিয়েছে এবং পশ্চাতে কি রেখে গেছে। (সূরা ইনফিতার : আয়াত ৪-৫)। প্রত্যেক মানুষের তার কর্ম কিরামান কাতিবীন ফেরেশ্তাগণ গ্রীবাদেশে অবস্থান নিয়ে অবিরত লিখে চলেছেন। বাম গ্রীবার ফেরেশতা সব মন্দ কর্মের ফিরিস্তি লিখে চলেছেন এবং ডান গ্রীবার ফেরেশ্তা ভাল কর্মগুলো লিখছেন। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : স্মরণ রেখ, দুই গ্রহণকারী ফেরেশতা তার দক্ষিণে ও বামে বসে তার কর্ম লিপিবদ্ধ করে। (সূরা কাফ : আয়াত ১৭)। রোজ হাশরে ওই কর্মতালিকা বা ‘আমলনামা অনুযায়ী আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু বিচার করবেন। অতএব মৃত্যু আসার আগেই ‘আমলনামা যাতে সৎকর্মে ভরপুর হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা ও তৎপর হওয়া বাঞ্ছনীয়। মরতে হবেইÑ এই অতি সত্যকে স্মরণে রেখে পৃথিবীর জীবনটাকে আখিরাতের জন্য কল্যাণকর করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। যেজন মরে যায় সে অলক্ষ্যে বলে যায়- আমি চললাম, তোমাদেরও এই মরণের পথ ধরতে হবে। সব ধরনের আপদে আল্লাহ্ পড়তে বলেছেন : ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ্রই জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাব। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৫৬)। লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা) সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×