ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

গৌতম পাণ্ডে

সুরাসুরের দ্বন্দ্ব ‘সুরগাঁও’

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

সুরাসুরের দ্বন্দ্ব ‘সুরগাঁও’

নাটকের কাহিনী আবর্তিত সুরগাঁও নামের একটি গ্রামে। যে গ্রামটিকে তুলনা করা যেতে পারে একটি দেশের সঙ্গে। যেখানের সমাজব্যবস্থা ভঙ্গুর, ক্ষমতার রোষানলে নিষ্পেষিত গরিব ও সাধারণ মানুষ। কাহিনীটি এমন সুরগাঁওয়ে আনাল ফকির, আসমান, সুহি, হাক্কা ব্যাপারী, বাঁশিবুড়ি, ওষ্ঠকালা, নিহাররঞ্জন, কাবিল, কুসি ও মুজহেবদের বাস। সুরগাঁওয়ের পত্তনকারী আনাল ফকির একশ আশি বছর আগে এক রাতে গ্রাম থেকে উধাও হন। উধাও হয়ে যাবার আগে কোন একদিন বাঁশিবুড়ির হাতে দিয়ে যান এক মোহন বাঁশি। বলে যান, বাঁশির সুর দিয়ে মানুষের ভিতরের অসুরটাকে দূর করতে। সেই থেকে বাঁশিবুড়ি থানা থেকে আসামিদের চেয়ে নিয়ে এসে বাঁশি বাজানো শেখায়। আসমান তার চার পুরুষ পরের বংশধর এবং ভবিষ্যতদ্রষ্টা। সে দেখে যে তার চাইর দাদা আনাল ফকির একশ’ আশি বছর পর সুরগাঁওয়ে ফিরছেন। আসমানের ভবিষ্যতবাণীকে সত্য করে আনাল ফকির সুরগাঁওয়ে ফিরে আসেন। এর পরই নতুন এক সঙ্কটের মুখোমুখি হয় সুরগাঁও। সময়ের বিপরীতে একশ’ আশি বছর আনাল ফকির প্রতœকাল ভ্রমন করেন। তার ইচ্ছায় তিনি ভ্রমণ করেন ব্যাবিলন, স্যার টমাস মুরের সময়কালের ইংল্যান্ড, কুরুরাজ্য, দামেস্ক, সক্রেটিসের সময়কালের গ্রীসসহ অনেক জায়গা। এসব স্থান ভ্রমণকালে ব্যাবিলনের রানি, স্যার টমান মুর, পান্ডবভার্যা দ্রৌপদী, সক্রেটিসের বন্ধু ক্রিটো এবং দামেস্কের আমীর অমূল্য কিছু উপহার দেন আনাল ফকিরকে। কালের বিপরীতে ভ্রমণ এবং কালের গর্ভ থেকে মূল্যবান সামগ্রী চুরির অভিযোগে তাম্রসেনার দল ঢুকে পড়ে সুরগাঁওয়ে। কালরক্ষী বলে নিজেদের পরিচয় দেওয়া সেনারা সময়কে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে চায়! সুরগাঁওয়ে শুরু হয় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা; সুর আর অসুরের দ্বন্দ্ব। গত ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যমঞ্চের প্রায় ৮৫০ জন দর্শক উপভোগ করেছেন দেশনাটকের ২২তম প্রযোজনায় নাটক ‘সুরগাঁও’। ফ্লোরে বসে নাটকটি উপভোগ করেছেন প্রায় দেড় শতাধিক দর্শক। টিকিট না পেয়ে প্রায় তিন শতাধিক দর্শক ফিরে গেছেন। দীর্ঘদিন পর মঞ্চ নাটকের জন্য টিকিটের হাহাকার দেখতে পেয়েছেন আয়োজকরা। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ‘সুরগাঁও’ নাটকের মধ্য দিয়ে নির্দেশনায় ফিরলেন দেশের খ্যাতিমান নাট্যকার মাসুম রেজা। পেয়েছেন দর্শকের ভালবাসা এবং গুণীজনদের প্রশংসার বাণী। নাটকের মূল্যায়ন করতে এসে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, অনেকদিন পর একটি থিয়েটার দেখে মন ভরে গেছে। পুরো নাটকজুড়েই ফুটে উঠেছে অতীত ও বর্তমান সমাজের নানা অসঙ্গতি। ধর্মযুদ্ধ, অবিচার থেকে শুরু করে শাসক গোষ্ঠীর নানা অত্যাচারের দৃশ্য। নাট্যমঞ্চের লাইটিং, ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড সবই মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। অভিনয় আর সুরের মূর্ছনায় দু’ঘণ্টা কখন শেষ হয়ে গেল তা বুঝতেই পারেননি দর্শকরা! দীর্ঘদিন পর মঞ্চ নাটক দেখে দর্শকরা বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় শিল্পীরা হলেন- মামুন চৌধুরী, কুদ্দুছ মাখন, শাহেদ নাজির, মেঘলা মায়া, তামিমা তিথি, নয়ন মাহমুদ শূন্য, জলি চৌধুরী, শাফিজ আল মামুন, সমাপন সরকার, মেহনাজ পারভিন বনী, ফাহিম মালেক ইভান, রোশেন শরিফ, মাইনুল হাসান মাঈন, মিশু চৌধুরী, সোমা ফেরদৌস, কামাল আহমেদ, আশরাফুল আশীষ, ফিরোজ আলম, সাদিয়া আহম্মেদ, সালমান লিমন, নাঈম জিহাদ, মাসুম রাজ, খায়রুল আলম, সেলিম মিয়া ও মাইনুল হাসান মাঈন। এছাড়া শিমুল ইউসুফ (সুর), ইমানুর রশিদ খান (আবহসঙ্গীত), দিলরুবা খান, শিমুল খান, ইমানুর রশিদ খান (কণ্ঠ), ওয়াহিদা মল্লিক জলি (পোশাক), জলি চৌধুরী, রোশেন শরিফ, মিশু চৌধুরী (পোশাক সহযোগী), মুনমুন আহমেদ (নৃত্য), নাসিরুল হক খোকন (আলোক পরিকল্পনা), ফারুক খান টিটু (আলোক সহযোগী), প্রাণ রায় সেট ও প্রপস), সালমান লিমন, শাফিজ আল মামুন, আবেদুর রহমান আদর, মাসুম রাজ (সেট সহযোগী), আশরাফুল আশীষ, নয়ন মাহমুদ শূন্য, সাদিয়া আহম্মেদ (প্রপস সহযোগী), অয়ন চৌধুরী (সহকারী নির্দেশক), মামুন চৌধুরী রিপন (নির্দেশনা সহযোগী), সেলিম শেলী ও অনন্ত মাহফুজ (প্রচার ও প্রকাশনা), এহসানুল আজিজ বাবু (প্রযোজনা নিয়ন্ত্রক) ও আনিসুর রহমান বিপ্লব (প্রযোজনা অধিকর্তা)। এদিকে দর্শকদের আগ্রহে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি শিল্পকলা একাডেমিতে নাটকটি আবারও প্রদর্শিত হবে।
×