ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুগের দাবি ই-ভোটিং

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

যুগের দাবি ই-ভোটিং

ইলেক্ট্রনিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে একাধারে সঠিকভাবে ভোট প্রয়োগ ও দ্রুততার সঙ্গে ভোট গণনা করা সম্ভব। ভোট গ্রহণে স্বচ্ছতা এবং উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে ক্রমশই সমগ্র বিশ্বে এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চলেছে। ভোট গ্রহণের স্থান হিসেবে ভোট কেন্দ্রেই মূলত ইলেক্ট্র্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও ইন্টারনেট, ব্যক্তিগত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, টেলিফোন ব্যবহার করেও ই-ভোটিং প্রয়োগ করা সম্ভবপর। পাঞ্চ কার্ডের মাধ্যমে ভোট প্রদানের রূপরেখা আবিষ্কারের প্রেক্ষাপটে ১৯৬০-এর দশক থেকে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগে নির্বাচন হয়ে আসছে। ১৯৬৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনে এই পদ্ধতি অনুসৃত হওয়ার মাধ্যমে দৃশ্যত প্রথমবারের মতো এটির ব্যবহার চোখে পড়ে। ই-ভোটিং অনুসৃত হয়েছে যেসব দেশে তার ভেতর রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পেরু, রোমানিয়া, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশ। সনাতনী ধাঁচের পরিবর্তে ই-ভোটিং প্রচলনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশন বেশ এগিয়ে রয়েছে। ইতোমধ্যেই আংশিক ও পরীক্ষামূলকভাবে দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এর প্রয়োগ হয়েছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশনের ১৪টি কেন্দ্রে ও সদ্য গঠিত নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের ৫৮টি কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। নির্বাচন কমিশন আরেকটি কাজ ভাল করেছে, তা হলো ভোটারের তালিকা ওয়েবসাইটে পরিপূরণ। এখন ভোট দেয়ার আগে ভোটারকে কোথায় তার ভোটকেন্দ্র, কি তার সিরিয়ালÑ এসব খুঁজে বেড়াতে হয় না। একজনের যদি জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জানা থাকে, সে ওই নম্বর নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বসিয়ে দিলেই তার ভোটার নম্বর ও অন্যান্য বিবরণ পেয়ে যায়। সম্প্রতি মোবাইল অপারেটরদের সিম বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের সময় এ ওয়েবসাইট সক্রিয় হয়েছে এবং মিল পেলেই কেবল রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে একক এখতিয়ার প্রদান করে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত যে কোন ন্যায়সঙ্গত উদ্যোগের প্রতি আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিরাজমান সব বিধিবিধানের সঙ্গে জনগণের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং চালু করা এখন সময়ের দাবি। নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থা চালু করলে (শুধু ভোটকেন্দ্রে ইভিএম নয়) অনেক সমস্যারই সমাধান হবে। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি প্রতিপক্ষের আক্রমণ বা প্রতিরোধের কোন ভয় থাকবে না। যারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, তাদেরও এ ভয় থাকবে না। তারা বাড়িতে বসেই ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। মানুষের প্রত্যাশা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনে অধিকতর সুষ্ঠু ও প্রশ্নবিদ্ধহীন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে বিজ্ঞ রাষ্ট্রপতি সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।
×