ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. আর এম দেবনাথ

বাজার অর্থনীতি ॥ ভুল সবই ভুল, ... যা লেখা সব ভুল

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

বাজার অর্থনীতি ॥ ভুল সবই ভুল, ... যা লেখা সব ভুল

কিছু রাজনৈতিক দল আছে যাদের সম্পর্কে জনমনে একটা ধারণা কাজ করে। ধারণাটা হচ্ছে, তাদের পরিস্থিতি মূল্যায়ন সব সময়ই ভুল। এক সম্মেলন বা কংগ্রেসে তারা কিছু মূল্যায়ন উপস্থাপন করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরের সম্মেলনে তারা অকপটে স্বীকার করে যে, আগের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ছিল ভুল। এভাবেই তারা চলে। এটা শুনে শুনে আমি মোটামুটি অভ্যস্ত। কিন্তু এই দলে যে আরও একটি পেশার লোক পড়ে তা জানা ছিল না। আর এই পেশার লোকদের নাম অর্থনীতিবিদ। ভাবতে অবাক লাগে তারা ক’দিন আগে কী বললেন, আর এখন কী বলছেন। ক’দিন আগেও তাদের বিশিষ্টজনরা বলেছিলেন, ‘ব্রেক্সিট’ ভাল জিনিস নয়। অর্থাৎ গ্রেট ব্রিটেনের ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। এতে বিশ্বায়ন নীতির (গ্লোবালাইজেশন) বরখেলাপ হবে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাথায় আঘাত পড়বে। দুদিন পর তারাই বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, বাজার অর্থনীতির বারোটা বাজবে। আরও কত কী তারা লিখলেন এবং বললেন। এখন দেখছি তারা বলছেন ভিন্ন কথা। ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ থেকে গ্রেট ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া (ব্রেক্সিট) এবং বিপুল ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তারা এখন বলছেন উন্নত দেশে ‘বিশ্বায়নের’ (গ্লোবালাইজেশন) প্রতি সাধারণ মানুষের অসন্তোষ আছে। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদরা যার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদগণও আছেন, তারা বলছেন উন্নত বিশ্বের লোকেরা স্থবির আয় পরিস্থিতি, বর্ধিষ্ণু বেকারত্ব এবং বর্ধিষ্ণু নিরাপত্তাহীনতার জন্য ‘বিশ্বায়ান’কে দোষারোপ করছেন। অর্থনীতিবিদগণের মতে ‘বিশ্বায়ন’ নিজে না হয়ে এটা হতে পারে ‘বিশ্বায়ন নীতিমালার ব্যবস্থাপনা’Ñ সে যাই হোক উন্নত বিশ্বের লোকেরা মনে করে বিশ্বায়নই তাদের দুর্ভোগের জন্য দায়ী। তারা আরও বলছেন, উন্নয়নশীল বিশ্বের লোকেরা এ কথা আগে থেকেই বলে আসছেন। তারা আরও বলছেন, ‘ওয়াশিংটন কনসেন্সাস’ বিশ্বের সমালোচনার মুখে পড়েছে। ‘ওয়াশিংটন কনসেন্সাস’ কী বলে? এটা বলে অবাধ ও মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা, বলে বেসরকারীকরণের কথা, বলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজেটের কথা, যাতে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ওপর জোর কম। অতএব বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদরা এখন বলছেন ‘ব্রেক্সিট’ এবং ডোনাল্ড বিজয় থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এবং অর্থনীতির পুরনো চিন্তাভাবনা বাদ দিতে হবে। ‘সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেপমেন্ট কর্পোরেশন এজেন্সি (সিডা)’ নামীয় একটি সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ এবং অন্য প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদদের একটা কাজ দেন। ‘বেক্সিট’ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতে কী করণী আছে তা খুঁজে বের করাই তাদের দায়িত্ব ছিল। এই উপলক্ষেই তারা এখন বলছেন- ‘ভুল, সবই ভুল; জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা তার সবই ভুল।’ বলছেন বিশ্বায়নের ফলে মানুষের আয় স্থবির হয়েছে, বেকারত্ব বাড়ছে, মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে। ‘ওয়াশিংটন কনসেন্সাস’ প্রসূত মুক্তবাজার অর্থনীতি মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। এসব বলে তারা ৮ দফা কর্মসূচী দিয়েছেন। বলাবাহুল্য, ‘ব্রেক্সিটের ধাক্কা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধাক্কা’ না পেলে উন্নয়নশীল দেশের মানুষের ক্ষোভের কারণে তারা এ কথা বলতেন না। শত হোক পুঁজিবাদের নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এখন বিশ্বায়নের বিরোধিতা দেখা দিয়েছে। তীব্র বিরোধিতা। ‘বিশ্বায়ন’ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, করল আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক দিয়ে; আর এর ফল খায় চীন-ভারত ইত্যাদি দেশ! আর যায় কোথায়? বিশ্বায়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতি, অবাধ বাণিজ্য সবকিছু আজ প্রশ্নবিদ্ধ এবং তা বিশ্বায়নের পিতৃভূমিতেই। অর্থাৎ আমেরিকাতেই। ‘বিশ্বায়ন নীতিতে’ কী ছিল তা আর জানতে বাকি নেই। কারও বিশ্বায়ন নীতি কার্যকর করা হলো বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ইত্যাদি জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো। ভাড়াটে অর্থনীতিবিদরা পৃথিবীর দেশে দেশে বিশ্বায়নের গুণগান গাইল। কীসের জন্য? তারা বলল, সরকারের কোন ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প থাকবে না। এটা থাকত মিশ্র অর্থনীতিতে, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে। এর বিরুদ্ধেই বিশ্বায়নের অবস্থান। বলা হলো, সরকার কোন জিনিসের মূল্য নির্ধারণ করবে না, সরকার কোন জিনিসের সরবরাহে হাত দেবে না। সরকার কৃষি, সার, খাদ্য, জ্বালানিসহ কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে ভর্তুকি দিতে পারবে না, অথচ যা দিত উন্নয়নশীল দেশের সরকার গরিব মানুষকে বাঁচাতে। আইএমএফ বাংলাদেশে এসেই বলত জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কেন, খাদ্যে ভর্তুকি কেন, সারে ভর্তুকি কেন। এটা চলবে না। কোন সাহায্য দেয়া হবে না, অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়া হবে না। রেশন কী? ওটা থাকবে না। এই ব্যবস্থা বাজার অর্থনীতির বিরুদ্ধে। বাজার অর্থনীতি কী? বাজারই ঠিক করবে সবকিছু। চাহিদা ও সরবরাহ অর্থনৈতিক বিষয়। এসব ঠিক হবে নিজস্ব নিয়মে। এতে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ চলবে না। বলা হলো, সরকারের ব্যবসা যা আছে, শিল্প যা আছে তা সব বিক্রি করে দিতে হবে। নাম হলো সুন্দর সুন্দর। ‘প্রাইভেটাইজেশন’ ‘কর্পোরেটাইজেশন’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ এসব জলের দামে বিক্রি করে দিতে হবে। কার কাছে? বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পোষ্যদের কাছে যারা সারাদিন শুধুই বেসকারী খাতের গুণগান করবে। থাকবে না কোন সমবায় খাত। অথচ আমাদের বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু উন্নয়নশীল দেশেই ছিল রাষ্ট্রীয় খাত, বেসকারী খাত ও সমবায় খাত। গুরুত্ব দেয়া হলো শুধু বেসরকারী খাতকেই। এই খাতকেই করা হলো ‘উন্নয়নের’ হাতিয়ার। ব্যাংক চলবে সারা বিশ্বে একই নিয়মে, বীমা কোম্পানি চলবে সারা বিশ্বে একই নিয়মে। দেশে দেশে যে পার্থক্য আছে, অর্থনীতির যে বিভিন্ন স্তর আছে, উন্নয়নের যে বিভিন্ন স্তর আছে তার কোন মূল্য নেই। বাঁচ অথবা মর, সবার জন্যই একই আইন। কোন ব্যতিক্রম নেই। আর করা হলো কী? বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেল সারা বিশ্ব। তার জন্য তৈরি করা হলো ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’ (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন)। কোন্্ দেশ বাঁচল, কোন্্ দেশ মরল, কোন্্ দেশের নিজস্ব শিল্প রইল, কোন্্ দেশের শিল্প মরল তাতে কিছু যায় আসে না। অবাধে মাল আমদানি হবে, অবাধে মাল রফতানি হবে, কোন বাধা নেই। বর্ডার বা সীমান্ত আছে নামে, কামে তা উঠে গেল। অর্থাৎ অর্থনৈতিক সীমান্ত উঠে গেল। থাইল্যান্ডের কুলবরই ঢাকায়, ইন্দোনেশিয়ার কাঁঠাল দিল্লীতে। কিন্তু বাংলাদেশের কাঁঠাল ইন্দোনেশিয়ায় নেই। শক্তিশালী দেশের মাল ঢোকে সকল দেশে। তাদের দেশে মাল ঢোকার ক্ষেত্রে কোটা। মাল অবাধে ঢোকার জন্য রাস্তা দরকার। করা হলো বিশ্ব রোড, পৃথিবীর দেশে দেশে। নাম কানেকটিভিটি। মিলিয়ে দাও, মিশিয়ে দাও সকল দেশ। নাম অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ব্যবসায়িক সহযোগিতা। সিল্ক রোড, পুরনো সিল্ক রোড পুনরার তৈরি করতে হবে। সমুদ্রপথ বড় করতে হবে। সবকিছুই চলবে মেধা প্রতিযোগিতা, শ্রমের ভিত্তিতে যা আছে কেবল কিছু দেশের। বিশ্ব হবে জ্ঞানের রাজ্য। হবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও অর্থনৈতিক। ওপরে যা বললাম তার প্রচারে বিশ্বায়নের ধারণা দেশে দেশে জনপ্রিয়তা পেল। বিগত ৩০-৪০ বছরে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই বিশ্বায়ন নীতি গ্রহণ করল। ‘প্রাইভেটাইজেশন’ হলো। টাকা দিল বিশ্বব্যাংকওয়ালারা। কী উৎসাহ, তারা টাকা দিয়ে আদমজী জুটমিল বন্ধ করাল। শুধু আমরা নই, সকল দেশেই গড়ে উঠল নব্য ধনিক শ্রেণী, বিশাল এক ব্যবসায়িক শ্রেণী। তৈরি হলো রফতানি খাত। দেশে দেশে পরিবর্তন হলো। শ্রমিক গেল এক দেশ থেকে আরেক দেশে। শিল্প হলো। সার্ভিস বা সেবা খাত বড় হলো। ম্যানুফ্যাকচারিং খাত ছোট হলো। মধ্যবিত্তের জন্ম হলো। দৃশ্যত উন্নয়ন হচ্ছে বোঝা যাচ্ছিল। রাস্তাঘাট হচ্ছে। দালান-কোঠা হচ্ছে। অনেক দেশের উন্নতিও হচ্ছিল। চীন ও ভারত বেশ উপকৃত হয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। বাংলাদেশেও তাই। দারিদ্র্যও হ্রাস পেয়েছে অনেক দেশে, বেশ অনেকটাই। চাকরিজীবী শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছে। দিকে দিকে উন্নতির লক্ষণ। গড় আয়ু অনেক দেশেই বেশ বেড়েছে। সুপেয় জলপ্রাপ্তি ঘটেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। ছেলেমেয়েরা অনেক দেশেই স্কুলে যাচ্ছে। খেয়ে-পরে বাঁচার বিষয়টাতে বেশ উন্নতিই হয়েছে। কিন্তু এসবই ওপরে ওপরে। অন্তরে ধীরে ধীরে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে- এটা বোঝা যাচ্ছিল না। যদিও উন্নয়নশীল দেশে অনেকেই বলছিলেনÑ এই ‘উন্নতি’ উন্নতি নয়। এই উন্নতি কিছু দেশের জন্য। শতকরা এক শতাংশ লোক উন্নয়নের ফসল আত্মসাত করে ফেলছে। বৈষম্য ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে। বৈষম্য আগেও ছিল। কিন্তু এখন তা চরম আকার ধারণ করেছে। উন্নত দেশে লোক চাকরি হারাচ্ছে। চাকরি নিয়ে নিচ্ছে অভিবাসীরা। সেখানে শ্রমিকদের আয় ও মজুরি হ্রাস পেয়েছে, বিশেষ করে আমেরিকায়। ম্যানুফ্যাকচারিং খাত সঙ্কুচিত হচ্ছে, সেবা খাত বড় হচ্ছে। তাদের সহায়সম্পদ চলে যাচ্ছে বিদেশীদের হাতে। সারা বিশ্বের ধনীরা টাকা পাচার করে রাখছে ভিন্ন দেশে। সবাই শুধু রফতানি করতে চায়। দেশীয় বাজার কেউ সৃষ্টি করতে চায় না। চীন সবেমাত্র তা শুরু করেছে। চারদিকে বেকারত্ব। চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই, ঘরবাড়ি নেই। যার আছে তো আছেই। টেকনোলজির উন্নয়নের ফলে লোক চাকরিচ্যুত হচ্ছে। প্রতিযোগিতায় বাঁচতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। শ্রমিককে উচ্চতর মজুরি দিলে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। অতএব অনেক দেশ করছে ‘অটোমেশন’, রোবট দিয়ে কাজ হচ্ছে। এর অর্থ মানুষের চাকরি নেই। তাহলে কী দাঁড়ায়? উন্নয়ন মানুষের জন্য, অথচ উন্নয়নের ফলে মানুষের চাকরিচ্যুতি। চুরি-চামারি-ডাকাতির পরিমাণ বেড়ে গেছে। চীন, রাশিয়া, ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশে ঘুষ খাওয়া, দুর্বৃত্তপনা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। মাফিয়া রাজত্ব কায়েম হয়েছে অনেক দেশে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নামে জমি দখল বহু দেশে। রাজনীতি চলে গেছে একটা শ্রেণীর কাছে, ব্যবসায়ীদের কাছে। ‘ক্ষত্রিয়’ হয়ে গেছে বৈশ্যরা। ভীষণ বিপদের কথা। অর্থবিত্ত ও ক্ষমতা দুটো এক হাতে বিশ্বের দেশে দেশে। গণতন্ত্র বিপর্যস্ত। বিশ্ব সংস্থাগুলো অকার্যকর। বার্মার রোহিঙ্গা নির্যাতনেও জাতিসংঘ নড়ে না। এসব দেখেশুনে স্বয়ং ট্রাম্পই বলেন, জাতিসংঘ হচ্ছে একটা ক্লাবÑ আড্ডা মারার জায়গা। একই অবস্থা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের। বস্তুত বিশ্ব এক ক্রান্তিলগ্নে। কোন প্রতিষ্ঠানই কাজ করছে না। কোন প্রতিষ্ঠানই মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। সব প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র, বাজার ও সমাজ চলে গেছে এক শতাংশ লোকের নিয়ন্ত্রণে। আগে যুদ্ধ হতো দেশে দেশে। সাধারণ মানুষের অসুবিধা হতো; কিন্তু নির্বিচারে কারও প্রাণ যেত না। ছিল শীতল যুদ্ধÑ রাশিয়া ও আমেরিকায়। মানুষ এর মধ্যেই বেঁচেছে। পবিত্র মসজিদ, গির্জা, মন্দিরে বোমা মারা হতো না। এক গোষ্ঠী আরেক গোষ্ঠীকে মারত না। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের কারণে এখন কেউ নিরাপদ নয়, কারও জীবিকার নিশ্চয়তা নেই। সারা বিশ্বেই এই অবস্থা। লাগামহীন বাজার অর্থনীতি, প্রাইভেটাইজেশন, ভর্তুকিহীন ব্যবস্থা, কর্পোরেট বাণিজ্য ব্যবস্থার নীতি অকার্যকর। কে বলছে? বলছেন বিশ্বব্যাংকেরই প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা। বলছেন মার্কিনী নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তিনিই বলছেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি তিনি বাতিল করবেন। তিনি রক্ষণশীল বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করবেন। অভিবাসীদের বের করে দেবেন। দেশের চাকরি বিদেশে যেতে দেবেন না। আরও কত কী? পুঁজিবাদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা আজ অচল হয়ে পড়েছে। সমাজতন্ত্রও হলো না, মিশ্র অর্থনীতিও চলল না। তা হলে আগামী দিনে কী হবে- এই হচ্ছে প্রশ্ন, খুবই বড় প্রশ্ন। লেখক : সাবেক শিক্ষক, ঢাবি
×