ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বার্লিনে ট্রাক হামলার ঘটনায় অভিবাসীদের প্রতি তিক্ত হবে জার্মানদের মনোভাব

ইউরোপের প্রাণকেন্দ্রে অস্থিরতা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

ইউরোপের প্রাণকেন্দ্রে অস্থিরতা

জার্মানির ছুটির দিনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান ক্রিসমাস মার্কেটে সোমবার রাতে ভয়াবহ ট্রাক হামলায় দেশটিতে শঙ্কা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অথচ সন্ত্রাসী হামলা ও রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মধ্যেও ইউরোপ মহাদেশের প্রাণকেন্দ্র জার্মানিকে স্থিতিশীলতার ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। জার্মানিতে বড়দিনের ঐতিহ্য হিসেবে সেই মার্কেটে কয়েক শতক ধরে খোলা আকাশের নিচে মদ, সসিজ ও মিষ্টির পাশাপাশি চারুশিল্প ও অলঙ্কার সামগ্রী বিক্রি হয়। দেশটির ছোট-বড় প্রায় সব শহরেই স্থানীয় ও পর্যটকরা দলে দলে উৎসবুখর মেলাগুলোতে সমবেত হয়। ইউরোপ জুড়ে সম্প্রতি সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়তে থাকায় কোন ক্রিসমাস মার্কেটে হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা চলছিল। গত বছর ২০১৫-এর নবেম্বরে ইসলামী চরমপন্থীদের প্যারিস হামলার পর অনেক জার্মান মার্কেটেও এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু সোমবার বার্লিনে সংঘটিত হামলার মোটিভ অস্পষ্ট থেকে গেলেও এর বিরাট লোক ক্ষয়- ১২ ব্যক্তি নিহত ও অন্তত ৪৮ জন আহত হওয়ার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগের সঞ্চার করতে বাধ্য। বার্লিনে সপরিবারে বসবাসরত চারালামপস কোওটালাকিস বলেন, আমি ক্রিসমাস মার্কেট ভালবাসি, কিন্তু আজ রাতে যা ঘটেছে তাতে আমি ভয় পাচ্ছি। তিনি চলতি বছর আরও বড় কোন ক্রিসমাস বাজারে যাবেন না বলে জানান। তিনি বলেন, আমি বিশেষত আমার শিশুদের নিয়ে ভয়ে রয়েছি। জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের নয় মাস আগে বার্লিনের ঘটনাটি ঘটল। এ নির্বাচনে চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল চতুর্থবারের মতো লড়বেন। এটি সহজ হবে না বলে তিনি গত মাসে সতর্ক করে দেন। দেশে নিরাপত্তাহীনতাবোধ বেড়ে যাওয়ার মধ্যে মেরকেলের পুনঃনির্বাচনের প্রয়াস আরও কঠিন হতে পারে। কারণ গত বছরের শুরু থেকে ১০ লাখেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থীর আগমনে ভোটাররা এরই মধ্যে অস্বস্তিত্বে রয়েছেন। শরণার্থীদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত। তিনবার সফল নির্বাচন এবং এক দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর মেরকেলের জনসমর্থন তার ইউরোপীয় সহকর্মীদের জন্য ঈর্ষার কারণ। দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে প্রকাশিত ইনফ্র্যাস্ট ডিম্যাপ-এর জরিপে তার জনসমর্থকের হার শতকরা ৫৭ ভাগ বলে দেখানো হয়। কিন্তু অতীতের ঘটনাবলী থেকে দেখা যায়, মেরকেলের প্রতি জনগণের আস্থা হঠাৎ পড়ে যেতে পারে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তার জনসমর্থন শতকরা ৪৫ ভাগে নেমে এসেছিল। এটি ইউরোপীয় মাপকাঠিতে উঁচু হার হতে পারে, কিন্তু তার ২০১৫-এর এপ্রিলের শতকরা ৭৫ ভাগ জনসমর্থনের তুলনায় অনেক কম। পপিউলিজমের মাত্রা বৃদ্ধি চলতি বছর ব্রিটেন ও ইতালির রাজনীতিকে প্রচ-ভাবে ঝাঁকুনি দেয় এবং এটি ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসের আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। মেরকেল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) এস্টাব্লিশমেন্ট বিরোধী বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন। এ সংগঠন চলতি বছর আইনশৃঙ্খলা, অভিবাসন-বিরোধিতা, ইসলাম বিরোধিতা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধিতার কর্মসূচী নিয়ে আঞ্চলিক আইনসভাগুলোতে কয়েকটি আসন লাভ করে। ঠিক তখন এএফডি এতই ক্ষুদ্র দল যে, এটি জাতীয় ভিত্তিতে ক্ষমতার কাছাকাছিই আসতে পারবে না। ৮ ডিসেম্বর থেকে ইনফ্রাটেস্ট ডিম্যাপের চালানো এক জরিপে দলটি শতকরা ১৩ ভাগ ভোট পেতে পারে বলে দেখানো হয়। কিন্তু জার্মানির সমানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থায় দলটির সামান্য উত্থানই মেরকেলের কোন কোয়ালিশন গঠনের সামর্থ্যকে দুর্বল করে দিতে পারে। যদি ট্রাক দুর্ঘটনাটি কোন হামলা বলে প্রমাণিত হয় এবং তদন্তে কোন শরণার্থী জড়িত ছিল বলে দেখা যায়, তা হলে অভিবাসীদের প্রতি জার্মানদের মনোভাব আরও তিক্ত হয়ে ওঠবে। কোন কোন জার্মান মিডিয়া মঙ্গলবার সকালে এমনই আভাস দেয়। সেপ্টেম্বরে স্পাইজেল/টিএনএস জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৮২ ভাগ জার্মান চায়, মেরকেল তার অভিবাসী নীতি পরিবর্তন করুন। মেরকেল তার বর্তমান অবস্থানে অনড় থাকুন বলে শতকরা মাত্র ১৫ ভাগ জার্মান মনে করেন।
×