ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলছড়ি মুক্ত করতে জীবন দিলেন ৫ মুক্তিযোদ্ধা

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

ফুলছড়ি মুক্ত করতে জীবন দিলেন ৫ মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর কাছে ত্রাস রোস্তম আলী খন্দকারের নেতৃত্বাধীন ‘রোস্তম কোম্পানীর’ দুঃসাহসী যোদ্ধারা রক্তক্ষয়ী সম্মুখযুদ্ধে ফুলছড়িকে হানাদার মুক্ত করে। আর ওই যুদ্ধে রোস্তম কোম্পানির সহকারী কোম্পানি কমান্ডার গৌতম চন্দ্র মোদক ছিলেন অন্যতম যোদ্ধা। তিনি জানান, ৩ ডিসেম্বর রাতে কোম্পানির হাইড আউট গলনারচরে বিশেষ সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে, ফুলছড়ি থানা সদর (টিটিডিসি) ও তিস্তামুখ ঘাটে পাকসেনা ছাউনির কিছু সেনাকে গাইবান্ধা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কোম্পানির দুঃসাহসী প্লাটুন কমান্ডার সামছুল আলমকে ফুলছড়িতে পাঠানো হয়। শামছুল আলম রেকি করে ফেরার পথে সুযোগ পেয়ে ফুলছড়ি থানা রেইড করে থানার মালখানা থেকে বিপুল সংখ্যক রাইফেল ও গুলি নিয়ে আসেন। ফুলছড়ি অভিযানের উদ্দেশ্য, এ্যাকশন, যাতায়াতের রাস্তা, পাসওয়ার্ড, সংকেত, করণীয় বিষয় অভিযান শেষে মিলিত হওয়ার আরভি ও বিকল্প আরভি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্রিফিং করা হয়। প্লাটুন কমান্ডারদের নেতৃত্বে যুদ্ধ সাজে যোদ্ধারা ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে ফুলছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ফুলছড়ি পৌঁছে পরিকল্পনা অনুযায়ী ইপিআর হাবিলদার তছলিম ও ময়েজ উদ্দিনের প্লাটুন ঘাঘট রেল ও সড়ক সেতুতে অবস্থান নেয়। শামছুল আলম, মহসিন, নাজিম ও এনামুলের প্লাটুন থানা সদরের পাশে অবস্থান নেয়। আবদুল জলিল তোতা, আবু বক্কর সিদ্দিক, হামিদুল হক কাদিরীকে কোম্পানি সদরের সঙ্গে প্লাটুন কমান্ডারদের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। গাইবান্ধা হতে সড়ক পথে আসা ও বোনারপাড়া হতে রেলে আসা পাকসেনাদের সঙ্গে তছলিম ও ময়েজের প্লাটুনের যোদ্ধাদের গোলাগুলি হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে সড়ক সেতুতে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধারা আকস্মিক অবস্থান প্রত্যাহার করলে গাইবান্ধা ও বোনারপাড়া হতে অগ্রসরমান পাকসেনারা এই সুযোগ ফুলছড়ি থানা সদরে ঢুকে পড়ে। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। রেল ও সড়ক সেতুর যোদ্ধারাও পেছন থেকে পাক বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিমুখী আক্রমণে টিকতে না পেরে তারা ওয়াপদা বাঁধ দিয়ে তিস্তামুখ ঘাটের দিকে পিছু হটে। তিস্তামুখ ঘাটেও পাকসেনাদের আর একটি ক্যাম্প ছিল। ওই সময় তিস্তামুখ ঘাটের অবস্থান ছিল পাখিমারার চরে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর পিছু ধাওয়া করে। ওয়াপদা বাঁধের গোবিন্দীতে উভয় পক্ষের মধ্যে ফের যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে রোস্তম কোম্পানির সাহসী যোদ্ধা বাদল, ছোবাহান, আফজাল, ওসমানগণি ও কাবেজ আলী শাহাদৎ বরণ করেন। অপর পক্ষে ২৩ পাকসেনা নিহত ও অর্ধশতাধিক পাকসেনা আহত হয়। পাঁচ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সুবাদে স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে ১৯৮৫ সালে সরকারী গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সগুনা ইউনিয়নের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিনগর নামকরণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণীয় করে রাখতে কোন ইউনিয়নের নামকরণ বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত। -আবু জাফর সাবু গাইবান্ধা থেকে
×