ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অধিনায়ক একাই টানলেন রাজশাহীকে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

অধিনায়ক একাই টানলেন রাজশাহীকে

মোঃ মামুন রশীদ ॥ যোগ্য নেতৃত্বের একটা আলাদা শক্তি আছে। সেই শক্তিতে বলীয়ান করে দুর্বলতর একটি দলকেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ড্যারেন সামিও যেন তাই। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) মাঝারি গড়নের দল রাজশাহী কিংসকে শেষ চারে উঠিয়েছেন যোগ্য নেতৃত্বে। আবার এলিমিনেটর ম্যাচে অভাবনীয় একটি জয় এনে দিয়েছেন ২৭ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে। কাগজে-কলমে শক্তিধর চিটাগাংকে হারিয়ে দেয়ার মূল নায়কই ছিলেন সামি। আর এর আগ পর্যন্ত এমন কঠিন ম্যাচে দলের সব ক্রিকেটারকে মানসিকভাবে চাঙ্গা ও উজ্জীবিত রেখেছেন ব্যতিক্রমী উদযাপন দিয়ে। মাঠে এমন নেতৃত্ব আর নৈপুণ্যই রাজশাহীকে ফাইনালে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে। দলকে একাই টেনে তুলেছেন ম্যাচসেরা সামি। এলিমিনেটর ম্যাচ হারলেই বিদায় নিশ্চিত। প্রতিপক্ষ চিটাগাং কিংস তারকাসমৃদ্ধ। যেখানে আছে ক্রিস গেইল, তামিম ইকবালদের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। কিন্তু দলের সতীর্থদের বিন্দুমাত্র বিচলিত হতে দেননি কিংবা সাহস হারানোর উপলক্ষ্য দেননি সামি। আগে বোলিংয়ে নামা দলকে নেতৃত্ব দিয়ে চাঙ্গা রেখেছেন। প্রাণবন্ত ও উজ্জীবিত রাখতে ব্যতিক্রমী উদযাপন করেছেন সতীর্থদের নিয়ে। চিটাগাং ব্যাটসম্যানরা কেউ আউট হতেই সেলফি তোলার ভঙ্গিমায় উদযাপন করেছেন। ¯œায়ুচাপ কাটাতে ভঙ্গিমাটা করেছেন আনন্দ, উপভোগের মাধ্যমে। দলের ফিল্ডার ও বোলারদের চাঙ্গা রাখার ক্ষেত্রে সামির এই কৌশলটা কার্যকর হলেও ব্যাটিংয়ে তেমনটা হয়নি। ১৪৩ রানের টার্গেটে নেমে মাত্র ৫৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল রাজশাহী। নিশ্চিত পরাজয় তখন দরজায় কড়া নাড়ছে। তবে দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে নামা সামি একটুও বিচলিত হননি। দ্রুতই আরও দু’জনকে সাজঘরে যেতে দেখেছেন তিনি। দলীয় ৯৪ রানেই ৭ উইকেট খুইয়ে পরাজয়ের অপেক্ষায় তখন রাজশাহী। এর আগেই সপ্তম উইকেটে ২০ বলে ৩৭ রানের জুটি গড়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে। মিরাজ ফিরে যাওয়ার পরও ব্যাটিং ঝড় থামাননি সামি। তাকে দমাতে পারেনি দুরন্ত হয়ে ওঠা চিটাগাং বোলাররা। চলতি বিপিএলের দ্বিতীয় অর্ধশতক পেয়ে যান তিনি মাত্র ২৩ বলে। তার বেপরোয়া ব্যাটিংয়ে অষ্টম উইকেটে ফরহাদ রেজার সঙ্গে ওঠে অবিচ্ছিন্ন ২৫ বলে ৪৯ রান। উঁকি দেয়া পরাজয়কে চপেটাঘাত করে উল্টো ৯ বল হাতে রেখেই রাজশাহীকে ৩ উইকেটে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছেন সামি। তিনি অপরাজিত থাকেন ২৭ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৫৫ রানে। ২০১২ ও ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপ জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারই নেতৃত্বে। এ দুটি বিশ্বকাপেই সামি ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে একেবারেই ছিলেন নিষ্প্রভ। এমনকি অনেক ম্যাচে ব্যাটিংও করেননি, বোলিংও করেননি। কিন্তু দলকে সংঘবদ্ধ রাখা, সাফল্য এনে দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত রাখার কাজটা করেছেন। সেটার নিদর্শন আরেকবার দিলেন। এবার শুধু নেতৃত্বই নয়, অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দলকে টেনে তুললেন কোয়ালিফায়ারে। অথচ এবার বিপিএল শুরুর পর ৪/৫ ম্যাচ খেলা হয়ে যাওয়ার পরও ব্যাটে কিংবা বলে কোন বিভাগেই সামির কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেখা যায়নি। তাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। সামি উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমার কাজ নেতৃত্ব দেয়া, আমি সেটাই করছি। নিজের পারফর্মেন্স নিয়ে ভাবছি না। আমি জানি আমার মধ্যে কি করার সক্ষমতা আছে। আমি সে চেষ্টায় সবসময় সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করি। এটাই আমার মৌলিক গুণাবলী।’ কাগজ-কলমের হিসেবে শক্তিমত্তায় বেশ পিছিয়ে ছিল রাজশাহী। তবু সামি দলকে ১২ লীগ ম্যাচের ৬টি জিতিয়েছেন। একাই জিতিয়েছেন দুটি। রংপুর রাইডার্সের বিরুদ্ধে ১৮ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৪৪ এবং খুলনা টাইটান্সের বিরুদ্ধে মাত্র ৩৪ বলে ৪ চার ও ৫ ছক্কায় অপরাজিত ৭১ রান করে দলকে জিতিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। এ দুটি ম্যাচের আগে এমনকি বোলিংও নিয়মিত করেননি, ব্যাটিংয়েও কোন ভাল অবদান রাখতে পারেননি। কিন্তু হাস্যোজ্জ্বল মুখে, কৌতুক করে ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার যে কাজ সেটা দারুণ সফলভাবেই করেছেন।
×