ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তামিলনাড়ুর ‘আম্মা’ জয়ললিতা সমাহিত

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

তামিলনাড়ুর ‘আম্মা’ জয়ললিতা সমাহিত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ তামিলনাড়ুর খেটে খাওয়া মানুষের দরদী নেত্রী সাধারণের ‘আম্মা’ খ্যাত রাজনীতিক ও প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা জয়রামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মঙ্গলবার চেন্নাই শহর যেন শোক সমুদ্রে পরিণত হয়। চেন্নাইয়ের এ্যাপোলো হাসপাতালে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ছয়বারের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। গত কয়েক মাস এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন ৬৮ বছর বয়সী এই নেত্রী। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল সাগে চারটায় চেন্নাইয়ের মরিনা বিচে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এরপরই তার মরদেহ সমাহিত করা হয়। খবর এনডিটিভি, বিবিসি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে। এর আগে লাখ লাখ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তামিলনাড়ুর সদ্য প্রয়াত এই প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রীর মরদেহে সম্মান জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। বিমানে গোলযোগের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে না পারলেও এক শোকবার্তায় তার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালসহ অন্যান্য রাজনীতিবিদ। পাশাপাশি ভারতের রুপালী পর্দার অনেক তারকা ও ক্রিকেটার সাবেক এই অভিনেত্রীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। খবরে বলা হয়েছে, জয়ললিতার মরদেহ দাহ নয়, সমাধিস্ত করা হয়েছে। এম জি রামাচন্দ্রনের সমাধির পাশেই জয়ললিতার দেহ শায়িত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তার লাশ ভারতের জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে সরকারী রাজাজি হলে রাখা হয়। অসংখ্য মানুষ লাইন ধরে প্রিয় নেত্রীর কফিনের পাশ দিয়ে হেঁটে যায়। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আবার অনেকে কষ্টে নিজের কপাল চাপড়ান, কেউ বিলাপ করেন। প্রিয় নেত্রীর ছবি নিয়ে এক অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরেন অনেকে। অভিনেত্রী থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা জয়ললিতা তার লাখ লাখ সমর্থকের কাছে ‘আম্মা’ নামেই পরিচিত ছিলেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর জ্বর ও ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জয়ললিতা। দীর্ঘদিন রোগভোগের পরে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন এমন দাবি করা হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় জানা যায়, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার সারা দিনই মানুষের মাঝে এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। সন্ধ্যায় গুজব ছড়ায়, মারা গিয়েছেন জয়া। কিন্তু পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এই খবর সত্য নয়। তবে শেষ পর্যন্ত রাত সোয়া বারোটা নাগাদ ঘোষণা করা হয়, রাত সাড়ে এগারোটায় মারা গেছেন রুপালি পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী থেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ জয়ললিতা। খবর পেয়ে শোকবার্তা পাঠান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘ভারতীয় রাজনীতিতে বিপুল শূন্যতা তৈরি করল এই মৃত্যু।’ এছাড়া শোকবার্তা পাঠান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীসহ অন্যারা। প্রিয় নেতার মৃত্যুতে তামিলনারুতে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মঙ্গলবার সরকারী ছুটির দিন ঘোষণা করেছে। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও সম্পন্ন করবে কেন্দ্র। সোমবার রাতেই লাশ নেয়া হয় জয়ললিতার বাড়ি পোজ গার্ডেনে। সোমবার রাতে রাজ্য সরকার এই শোক ঘোষণা করে। রাজ্যের মুখ্যসচিব পি রামা মোহনা রাও এক প্রজ্ঞাপনে সাত দিনের এই শোক ঘোষণা করেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে সাত দিনের শোক পালন শুরু হবে। শোক চলাকালে রাজ্যের সব সরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এ ছাড়া তামিলনাড়ুর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। জয়ললিতার মৃত্যুর পর তার দল অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগামের (এআইএডিএমকে) নতুন নেতা নির্বাচন করা হয়েছে পনিরসেলভামকে। গত রাতেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। শোক বইয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বাক্ষর ॥ কূটনৈতিক রিপোর্টার জানান ভারতের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা জয়রামের মৃত্যুতে ভারতীয় হাইকমিশনের খোলা শোকবইতে সই করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশনে গিয়ে তিনি এই শোক বইয়ে সই করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। শোক বইতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী লিখেছেন, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। তামিলনাড়ুর জনগণের সঙ্গে আমরা এই বিষাদময় ঘটনায় একাত্মতা প্রকাশ করছি। জয়ললিতা সাধারণ মানুষের নেতা ছিলেন। তিনি গরিব মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। বিশেষ করে সমাজের নারী ও প্রান্তিক মানুষের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। তার মৃত্যুতে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে শূন্যতার সৃষ্টি হলো। সাধারণ মানুষের মনে তিনি ‘আম্মা’ হিসেবেই বেঁচে থাকবেন। আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। আমাদের প্রত্যাশা তামিলনাড়ু ও ভারতের জনগণ তার মৃতুর এই অপূরণীয় ক্ষতি যেন বহন করতে পারেন।
×