ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বার্জার পেইন্টস ৯৪ কোটি টাকা কর রেয়াত সুবিধা পেয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

বার্জার পেইন্টস ৯৪ কোটি টাকা কর রেয়াত সুবিধা পেয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির কারণে সরকার রাজস্ব কম পাচ্ছে। ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা পাওয়ায় তালিকাভুক্তির পর থেকে সর্বশেষ হিসাব বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৯৪ কোটি টাকার ওপরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর ফাঁকি ঠেকাতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম শেয়ার ছাড়ার সুযোগ দেয়া উচিত নয়। কারণ, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার ছাড়ার নির্দেশ থাকা উচিত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার বিধান রয়েছে। জানা গেছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১০ শতাংশ কর রেয়াত নিচ্ছে। ২৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের বার্জার পেইন্টস প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০টি শেয়ার ইস্যু করে। যা প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশ বা ২ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার ৪৪০টি শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতেই রয়েছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বার্জার পেইন্টস থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতীত) ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে। অপরদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ১০ শতাংশ কর সুবিধা হিসাবে কোম্পানিটিকে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার কর কম দিতে হয়েছে। ফলে নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কর সুবিধা দেয়ায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে রাষ্ট্র ৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। কোম্পানিটি ৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্ত লভ্যাংশ ও কর সুবিধায় ৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকার পার্থক্য হয়েছে। তবে কোম্পানিটি ২৫.৯৪ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করলে এ পার্থক্য শূন্য হতো। কারণ ২৫.৯৪ শতাংশ শেয়ার ধারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার লভ্যাংশ পাবে। কোম্পানিটি ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি শেয়ারে ১৯৪ টাকা করে লভ্যাংশ দিয়েছে। এ হিসাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে। আর উদ্যোক্তা/পরিচালকরা পেয়েছেন ৪২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকার লভ্যাংশ। এদিকে বার্জার পেইন্টস এই সময়ে করপূর্ব আয় করেছে ১ হাজার ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ২৭.৫ শতাংশ হিসাবে ২৫৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার কর প্রদান করেছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে না আসলে ৩৭.৫ শতাংশ হিসাবে ৩৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার কর প্রদান করতে হতো। এ হিসাবে শেয়ারবাজারে আসার কারণে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার কর সুবিধা পেয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেছেন, ৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যুতে কোন বহুজাতিক কোম্পানিকে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা প্রদান করা উচিত না। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যু বাড়ানো উচিত। অন্যথায় কর সুবিধা কমিয়ে দেয়া দরকার। এ অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে কর সুবিধা নেয়া, তালিকাভুক্তি না। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মূল্যায়ন করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।
×