ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাতক প্রেমিক!

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

ঘাতক প্রেমিক!

প্রেমিক বটে! অবশ্য প্রেমিক না বলে পাষ- কিংবা কসাই বললেও চলে। ঘটনাটি পুরনো ঢাকার লালবাগের। একুশ বছর বয়সী প্রেমিকের দাবি অনুযায়ী দু’বছর ধরে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল স্থানীয় এক কিশোরীর। হতে পারে এই প্রেম একতরফা অথবা কমবেশি উভয়ত। তবে কিশোরীর গোপন প্রেম তো মা-বাবা তথা অভিভাবকের জানার কথা নয়। কিশোরী তো দূরের কথা, প্রেমিকপ্রবরটিও এ নিয়ে কিছু বলেনি অভিভাবকদের কাছে অথবা আদৌ কোন প্রস্তাব পাঠায়নি। সম্প্রতি মেয়েটির পরিবার তার বিয়ে ঠিক করে অন্যত্র। গণমাধ্যমে কিশোরীর বয়স মুদ্রিত না হওয়ার কারণে সে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু নাকি প্রাপ্ত বয়স্ক তা জানা যায় না। যা হোক, প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হওয়ার সংবাদে প্রেমিক আর মাথা ঠিক রাখতে পারেনি। সোমবার দুপুর নাগাদ প্রেমিকার বাড়িতে ঢুকে তার গলায় উন্মুক্ত খঞ্জর ধরে বিয়ের প্রস্তাব দেয় প্রেমিকপ্রবর। তবে তার আগে ঘরের দরজা বন্ধ করে নেয়। অতঃপর পুলিশে খবর দেয়া হলে দরজা ভেঙ্গে প্রেমিককে গ্রেফতার করা হয়। প্রেমিকার মা এবং লালবাগ থানার খবর, কিশোরীটিকে আগে থেকেই উত্ত্যক্ত করত প্রেমিকপ্রবরটি। পরিবারের পক্ষ থেকে যথারীতি মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রেমিকের বিরুদ্ধে। আর এদিনই আরেক প্রেমিকের তীব্র জিঘাংসার শিকার খাদিজা রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল ছেড়ে নতুন করে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে সাভারের পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপিতে। উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর সিলেটে জনৈক ছাত্রলীগ নেতার নির্মম চাপাতির কোপে গুরুতর আহত হয়ে প্রায় দু’মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিল স্কয়ার হাসপাতালে। কথিত প্রেমিকপ্রবরটি সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার নিষ্ঠুর নির্মম উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খাদিজার বেঁচে থাকার প্রায় কোন আশাই ছিল না। আর বেঁচে গেলেও সে কোনদিন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে কিনা, সন্দেহ রয়েছে। যথারীতি মামলা হয়েছে এখানেও। সিলেটের খাদিজা কিংবা লালবাগের কিশোরীর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভালবাসা নিঃসন্দেহে মধুর; তবে এর অন্তর্জ্বালাও কোন অংশে কম বিষাক্ত নয়, যদি তার পরিসমাপ্তি ঘটে স্বপ্নভঙ্গের মাধ্যমে। তারার উপমা এমনকি স্বকীয় প্রেক্ষাপটে। এও বলা হয়েছে যে, স্বর্গ এই প্রেমই যখন ঘাতক প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার নির্মম কশাঘাতে ক্ষতবিক্ষত, আহত ও নিহত হয়, তখন তার পরিণতি হয় স্বভাবতই মর্মান্তিক ও মর্মন্তুদ। তবে দেখতে পাই আধুনিক যুগ ও সমাজে এ জাতীয় ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান-তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে, সেলফোন-ফেসবুক-ইন্টারনেটের সময়কালে প্রেম-ভালবাসাও যেন বিচিত্র পথে বিচিত্র উপায়ে রূপ পরিগ্রহ করছে। আর সে কারণেই বুঝি নিরাবেগ প্রেমিকপ্রবর ক্ষুরধার ছুরি কিংবা চাপাতি হাতে অগ্রপশ্চাত বিবেচনা না করে ঝাঁপিয়ে পড়ছে প্রেমিকার ওপর। শাহজালাল কিংবা লালবাগের প্রেমিকের যে থানা পুলিশ ও আইনের শাসনের ভয় ছিল না, তা নয়। তবে তাদের প্রতিহিংসা, জিঘাংসা ও প্রতিশোধস্পৃহা ছাপিয়ে গেছে সবকিছু। সে ক্ষেত্রে তাদের প্রেমিক না বলে আততায়ী বলাই বুঝি অধিকতর সঙ্গত।
×