ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সোনামসজিদ বন্দরে নতুন শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে উত্তেজনা

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

সোনামসজিদ বন্দরে নতুন শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে উত্তেজনা

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ হঠাৎ করেই সোনামসজিদ স্থলবন্দর অশান্ত হয়ে উঠেছে। আর এই সঙ্কট সৃষ্টির অন্যতম কারণ হচ্ছে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ। বেশ ক’টি সংঘর্ষ হওয়ার কারণে অর্ধ শতাধিক লোক আহত হওয়ার পর থেকেই বন্দরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতীয় রফতানিকারকরা আল্টিমেটাম দিয়ে স্থানীয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছেন তাদের গ-গোলের কারণে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা মালামাল নিয়ে সোনামসজিদ বন্দরে প্রবেশ করতে ভয় পাচ্ছে। অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান না হলে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করে দিবে তারা। কারণ ইতোমধ্যেই একাধিক দিন দুই দল শ্রমিকের দ্বন্দ্বে বন্দরে টানাপোড়ন শুরু হলে পুরো দিনে একটিও ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করেনি সোনামসজিদ বন্দরে। যা অহরহ ঘটছে। এই বন্দরে অনেক আগে থেকেই ৬৯৬ জন নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক কাজ করে আসছে। এরপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরও ১২৬ জন শ্রমিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলে শুরু হয় তদবির। শ্রমিক নিয়োগের দায়িত্ব দেয়া হয় জনৈক শ্রমিক নেতাকে। সেই নেতা তার পছন্দমতো লোক নিয়োগ দিলে বন্দর সংলগ্ন একাধিক মহল্লা ও গ্রামের লোকজন বন্দরে প্রবেশে করে কাজ দাবি করে। তারা প্রায় প্রতিদিন নিয়োগ বঞ্চিত শ্রমিক হিসেবে বন্দরে প্রবেশ করে কাজ দাবি করলে নিয়োগপ্রাপ্ত পূর্বের শ্রমিকরা তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বেধে যায় সংঘর্ষ। বন্দরে লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা দ্রুত তাদের খালি ট্রাক নিয়ে কেটে পড়ে। একাধিক দিনের এই চিত্র স্থায়ী হয়ে পড়লে ভারতীয় রফতানিকারকরা ছুড়ে দেন আল্টিমেটাম। ফলে সোনামসজিদ বন্দরের শ্রমিক নেতারা বৈঠক করেন একাধিকবার উভয় পক্ষের সঙ্গে। পরে বন্দর সম্পাদক মুখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে শ্রমিক নেতারা বৈঠক করে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যোগ্যদের নিয়োগ দেয়ার আশ্বাস দিলে পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠে। কিন্তু এই আপোস স্থায়ী হয়নি। সোনামসজিদ সিএন্ডএফ এজেন্ট নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে বন্দরে কাজকাম স্বাভাবিক রাখতে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। কিন্তু বন্দর পরিচালনাকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান পানামার বক্তব্য একটু ভিন্ন। বন্দরে ইচ্ছামতো স্বজনপ্রীতি করে শ্রমিক নিয়োগ দেয়ার কারণেই বিশৃঙ্খলা ও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী প্রকৃত অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিলে সমস্যার নিরসন হতে পারত। অপরদিকে বন্দর থেকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে বন্দরের বেসরকারী সংস্থা পানামা লিমিটেডের অভ্যন্তরে নাকি শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। ফলে তাদের অনুরোধেই শ্রমিক সমন্বয় কমিটির ছয় নেতা আমিনুল, আয়েশ, বিহারী, আক্কাশ, খলিল ও মইনুল মাঠে নামে। বন্দর সংলগ্ন শিয়ালমারী গ্রামের কোন ব্যক্তি এই নতুন নিয়োগে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নতুন নিয়োগ নিয়ে বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট নেতারা হস্তক্ষেপ করায় ও শ্রমিক সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম মাস্টার নিয়োগ বিরোধ মিটিয়ে বন্দরকে স্বাভাবিক অবস্থাতে আনতে কাজ করছেন। তবে নতুন করে যাদের নিয়োগ করা হয়েছিল তাদের ব্যাপারে কেউ কোন মন্তব্য করতে চাননি। উল্লেখ্য, বন্দর ১৯৯০ সালে চালু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন শ্রমিকের পরিচয়পত্র দেয়া হয়নি। সাম্প্রতিককালে জেলা প্রশাসক বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দিয়ে শ্রমিকদের অবিলম্বে পরিচয়পত্র প্রদান করার জন্য শ্রমিক সমন্বয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। আপাতত শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি ধামাচাপা পড়লেও পানামার দাবি চাহিদা মাফিক প্রকৃত অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কারণ শ্রমিক স্বল্পতার কারণে তাদের শেডে মাল লোড-আনলোডে অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু নতুনভাবে শ্রমিক নিয়োগ করতে গেলে আবার গ-গোলের সূত্রপাত ভয়ে এই পথে যাচ্ছে না।
×