ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধীদের ভবনও প্রতিবন্ধী

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

প্রতিবন্ধীদের ভবনও প্রতিবন্ধী

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ ছাত্র শিক্ষক না থাকলেও এক কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থায়ী নিজস্ব ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। মাটি কিনতে (প্রায় ৭ কাঠা) কিনতে ব্যয় হয়েছে ৭০ লাখ টাকা। আর অবকাঠামো অর্থাৎ বিশাল দ্বিতল ভবন নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে এক কোটি টাকা। শাহ নিয়মতউল্লাহ কলেজ সংলগ্ন জেলা ঠিকাদার সমিতির পেছনে এই অবকাঠামো নির্মাণ করেছে সমাজকল্যাণ বিভাগ বা মন্ত্রণালয়। এই ভবনে আবাসিক ছাত্রদের জন্য সিট রাখা হয়েছে সাতটি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের ৩৭টি জেলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাম হোস্টেল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এই বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। কিন্তু নেই শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। ৪১ বছর আগে ১৯৭৫ সালে সমাজসেবা অধিদফতরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এ জন্য কামাল উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ অস্থায়ীভাবে নেয়া হয়েছিল। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের লক্ষ্যে প্রথমে ২২ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বছর দশেকের মধ্যেই ধস নামে এই শিক্ষা অঙ্গনে। একে একে শিক্ষক বদলি করায় প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকবিহীন হয়ে পড়ে। বর্তমানে মাত্র দুই শিক্ষার্থী থাকলেও কোন শিক্ষক নেই। শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে স্থানীয় সমাজকল্যাণ বিভাগের ৪র্থ শ্রেণীর এমএলএসএস বা পিয়ন। শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে পালিয়েছে। কারণ তাদের মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করা বা শিক্ষা দেবার কোন শিক্ষক না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি একেবারে বন্ধ হবার পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে সমাজকল্যাণ অধিদফতর দুই কোটি টাকার অনুদান দিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া করাবার নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পুরো জেলায় মোট দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে শিশু অন্ধের সংখ্যা ৪৬২, তারা কোন শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা সাইটসেভার্সের জরিপে। অন্ধরা বহুবার চেষ্টা করেছে শিক্ষা গ্রহণের। কিন্তু চাঁপাইয়ের সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি শিক্ষকের অভাবে। সমাজসেবা অধিদফতর তারপরও ভুয়া তালিকায় ৩০ বছরের ৗপর পাঠ দানের নানান উপকরণ, পোশাক, মাসিক ভাতা নিয়ে এসেছে। কারা এতদিন ধরে এসব আত্মসাত করেছে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। এসব ব্যাপারে বিভাগীয়, জেলা ও থানা পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও শিক্ষক না থাকার পরও সাত কাঠা জমির ওপর কোটি টাকা ব্যয়ে যে বিশাল দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে তাতে সাতের অধিক আবাসিক শিক্ষার্থী থাকতে পারবে। ইতোমধ্যেই কয়েক লাখ টাকার ফার্নিচার এসে পৌঁছে ভবনে। নিয়োগ দেয়া হয়েছে একাধিক বাবুর্চি ও তৃতীয়, ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী। এরা এই বিশাল ভবনে প্রবেশ করে কার সেবা দেবে? এখানে প্রথমেই প্রয়োজন শিক্ষকের। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এমনকি পুরান কোন শিক্ষকও এসে যোগ দেয়নি। এই বিশাল ভবনে শিক্ষক না এলে কোন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না।
×