ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিউল মনজুর

বুনন

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১১ নভেম্বর ২০১৬

বুনন

ছোটোকাগজকে সাহিত্যের আঁতুড়ঘর বলে আখ্যায়িত করা হয়, আখ্যায়িত করা হয় সাহিত্যের শেকড় বলেও। আবার এই কাগজকে সাহিত্যের পাঠশালা বলেও সম্বোধন করা হয়। এ সব মূল্যবান কথা এমনি এমনি উচ্চারিত হয় না। এ সব মূল্যবান কথার মধ্য দিয়ে মূলত ছোটো কাগজের ভূমিকাকেই স্মরণ করা হয়। আজও ছোটোকাগজ ছোটোকাগজের মতই সাহিত্যের ক্যানভাসে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো সাহিত্যের ছোটোকাগজের ভূমিকা বড় কাগজের ভূমিকাকেও হার মানায়। দেখা গেছে সাহিত্যের ছোটোকাগজ যে লেখককে তারকা বানায় বড় কাগজ তাকে নিয়েই টানাটানি করে, ফোকাস করে। প্রতিনিয়ত নীরবে এমন কাজই করে যাচ্ছে সাহিত্যের ছোটোকাগজ। সম্প্রতি নবেম্বরে প্রকাশিত কবি খালেদ উদ-দীন সম্পাদিত বুনন তৃতীয় সংখ্যা হাতে পেয়ে আমার মনে এমনি সব কথা জড়ো হয়েছে। তিনি অত্যন্ত যতœ সহকারে, সময় নিয়ে সাহিত্যমোদী পাঠককে যে সংখ্যাটি উপহার দিলেন তা নান্দনিকতায়, প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতা নিয়ে এ সংখ্যায় ১০টি গল্প, ৬টি প্রবন্ধ, ১টি ভ্রমণ গল্প, বিদেশী লেখককে নিয়ে দূরের বাতায়ন এবং অসংখ্য কবির কবিতা সূচিবদ্ধ করেছেন। তৌহিন হাসানের অসাধারণ প্রচ্ছদে মোড়ানো ১৭৬ পৃষ্ঠার বুনন সংখ্যাটির মূল্য মাত্র ১০০ টাকা। এ সংখ্যায় যারা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন, তাঁদের তালিকাটি নি¤œরূপ; গল্প লিখেছেন- নাসরীন জাহান, মালেকা পারভীন, এমদাদ রহমান, শিমুল মাহমুদ, স্বকৃত নোমান, শিপা সুলতানা, পাপড়ি রহমান, আনোয়ার কামাল, সারওয়ার চৌধুরী, মজিবুর রহমান। একটি ভ্রমণ গল্প লিখেছেন- শাকুর মজিদ। দূরের বাতায়ন লিখেছেন- আবুল কাইয়ুম। প্রবন্ধ লিখেছেন- তৈমুর খান, পিয়াস মজিদ, আর্যনীল মুখোপাধ্যায়, মঈন আহমেদ, ইউসুফ ইকবাল, ফজলুর রহমান বাবুল। সদ্য প্রয়াত কবি ওয়ালী কিরণ শ্রদ্ধা ও স্মরণ এবং তাঁর পাঁচটি কবিতা মুদ্রিত হয়েছে। এ সংখ্যায় গুচ্ছকবিতা লিখেছেন- হাফিজ রশিদ খান, দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু, রাসেল রায়হান, জাকির জাফরান, মাজুল হাসান, আহমাদ সেলিম, মলয় রায়চৌধুরী, ফকির ইলিয়াস, জওয়াহের হোসেন, মাসুদার রহমান, জব্বার আল নাঈম, শামশাম তাজিল, মাসুদ খান, মোস্তাক আহমাদ দীন, ফজলুর রহমান বাবুল, মুহম্মদ ইমদাদ, শামস শামীম, আলফ্রেড আমেন, শিউল মনজুর, প্রদীপ মজুমদার, মালেকুল হক, ওয়ালি মাহমুদ, জিনাত জাহান খান, তমিজ উদ্দিন লোদী, শাহ ইয়াছিন বাহাদুর, পলিয়ার ওয়াহিদ, অধরা জ্যোতি, খালেদ উদ-দীন। তা ছাড়া একটি করে কবিতা লিখেছেন- মুজিম ইরম, জফির সেতু, আবিদ ফায়সাল, শামীম হোসেন, রাজীব অর্জুনি, অশোক তাঁতী, সেজুল হোসেন, জসিম মারুফ, মিসবাহ উদ্দিন, মোকসেদুল ইসলাম, ইকবাল কাগজী, ইসরাত ঝুম। সব গল্প কবিতা প্রবন্ধ হয়তো সবার সমান মনোযোগ আকর্ষণ করতে নাও পারে তবে ভালো লাগার মতো বেশ কিছু লেখা বুননে আছে, যা পাঠককে দোলায়িত করবে, ক্ষণিক ভাবিত করবে বা আনন্দিত করবে বলে আমি মনে করি। যেমন- শাকুর মজিদ এর পোখরা ও তার আকাশচারণ ভ্রমণগল্পটি পড়তে পড়তে যে কোন পাঠককে রোমাঞ্চিত করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাঁর ভ্রমণ বর্ণনার মধ্যে এমন মোহনীয় গাঁথুনি রয়েছে যে, পাঠক পড়তে পড়তে নিজেই লেখকের ভ্রমণসঙ্গী হয়ে উঠবে এবং বলবে বাহ্ চমৎকার একটা লেখা পড়লাম। বুননে ২৯জন কবির গুচ্ছ কবিতা রয়েছে এবং ১২জন কবির একটি করে কবিতা রয়েছে। অসংখ্য কবিতা সুখপাঠ্য তবে মুজিব ইরমের মুদ্রিত একটি মাত্র কবিতা আমাদেরকে চমকে দেয়। তাঁর কবিতার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে আমাদের কৈশোরিক জীবনের ফ্রেমে বঁাঁধানো নান্দনিক চিত্র। এ কবিতাটি সকলকেই বোধ করি নাড়া দেবে। তা ছাড়া কয়েকজন তরুণ কবির কবিতায় সমসাময়িক বৃত্ত ভাঙার চেষ্টা রয়েছে। তাদের কবিতায় সম্ভাবনার আলো উঁকি দিচ্ছে। একদিন পাঠকরাই তাদের কবিতা পছন্দের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবে। বুননের গল্পগুলোও আমাদেরকে নাড়া দেয়। তৈমুর খান, পিয়াস মজিদ, আর্যনীল মুখোপাধ্যায় এর প্রবন্ধ থেকে অনেক কিছু জানার আছে। আবুল কাইয়ুম দূরের বাতায়ন বিভাগে ফিকেনীল ঘাসফুল; সের্গেই ইয়েসেনিন ও তাঁর কবিতা শিরোনামের প্রবন্ধটিও পড়ার মতো। এক কথায় ‘বুনন’ এর তৃতীয় সংখ্যায় পাঠককে আনন্দ দেবার মতো যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। এমন একটি সংখ্যা আমাদেরকে উপহার দেবার জন্যে কবি খালেদ উদ-দীনকে শুভেচ্ছা জানাই। তাঁর শ্রম স্বার্থক হোক।
×