ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চার বছর পর বাজারে আসছে সরকারী শেয়ার

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৮ নভেম্বর ২০১৬

চার বছর পর বাজারে আসছে সরকারী শেয়ার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চার বছর পর অবশেষে সরকারী কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাজারে তালিকাভুক্ত ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোডের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে সরকারী কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করছে। রবিবার সরকারী মালিকানায় থাকা শেয়ারের অংশ থেকে এ শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানায় ডেসকো। ডেসকো জানায়, বর্তমানে সরকারের হাতে থাকা ডেসকোর ৭৩ দশমিক ৭২ শতাংশ শেয়ার থেকে ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে ছাড়বে কোম্পানিটি। ফলে সরকারের হাতে থাকা কোম্পানির বর্তমান ২৯ কোটি ৩১ লাখ ৪ হাজার ২৫৯টি শেয়ারের মধ্যে ২ কোটি ৯৩ লাখ শেয়ার পাবলিকের হাতে যাবে। এর আগে সরকারী কোম্পানি হিসেবে সর্বশেষ ২০১২ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড। তখন মোট শেয়ারের ২৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বা ৩ কোটি ১০ লাখ শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ১০৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। এরপর আর কোন সরকারী কোম্পানি শেয়ার অফলোড করেনি। আর তালিকাভুক্ত সরকারী কোম্পানির বিদ্যমান শেয়ারের অংশ থেকে সর্বশেষ ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ১৭ শতাংশ শেয়ার অফলোড করে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, যমুনা ও মেঘনা অয়েল কোম্পানি। এরপর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বে আসার পর শেয়ারবাজারে সরকারী বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার অফলোডের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য সে সময় প্রথমে ২৪টি সরকারী কোম্পানির তালিকা তৈরি হয়। পরবর্তীতে এ সংখ্যা ৩২-এ উন্নীত করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অফলোড নিয়ে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই সময় কোম্পানিগুলোকে ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেয়ার ছাড়তে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আরেকটি বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ছাড়ার তাগিদ দেয়া হয়। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির সময়সীমা ২০১১ সালের ১৪ ও ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে এ সময়ে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৩৪ থেকে কমে দাঁড়ায় ২৬-এ। সর্বশেষ শেয়ার ছাড়ার জন্য গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়। এর মধ্যে গত ছয় বছরে ছয়টি কোম্পানি শেয়ার ছাড়তে পেরেছে। কোম্পানিগুলো হলো : যমুনা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, রূপালী ব্যাংক ও সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। বাকি ২০টি কোম্পানিই শেয়ার ছাড়তে ব্যর্থ হয়েছে। জানা গেছে, ২০১২ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সরাসরি তালিকাভুক্তির অনুমোদন পাওয়ার পরও নানা জটিলতায় রাষ্ট্রায়ত্ত আরেক কোম্পানি এসেনসিয়াল ড্রাগস শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। লাভজনক হলেও কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সমন্বয়হীনতা, ধীরগতি, সম্পদ পুনর্মূল্যায়নে কালক্ষেপণ, নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব, স্টক এক্সচেঞ্জে সরাসরি তালিকাভুক্তির অনুমোদনের পর নতুন করে মূলধন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে এসেনসিয়াল ড্রাগসের শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। একই পরিস্থিতি সরকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক অস্বাভাবিক প্রিমিয়াম দাবি করে শেয়ার ছাড়ার আবেদন জানিয়েও পরবর্তীতে পিছিয়ে পড়ে। এসব কারণেই সরকারের নীতিনির্ধারকরা বারবার ঘোষণা দিলেও প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই নির্ধারিত সময়ে শেয়ার ছাড়তে ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে সর্বশেষ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে ডেসকো। আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য ও হুইলিং চার্জ বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের কারণে কোম্পানির পরিচালন ব্যয় ও উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে হিসাব বছর শেষে কোম্পানির টার্নওভার বাড়লেও নিট মুনাফা কমেছে। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ১২ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৪ টাকা ৩২ পয়সা। ২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ডেসকোর অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৩৯৭ কোটি টাকা। রিজার্ভ রয়েছে ৮৮৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৪। এর মধ্যে বর্তমানে সরকারের কাছে ৭৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৭ দশমিক ৬৯, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হাতে দশমিক ৫৭ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ শেয়ার।
×