ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প

কক্সবাজারে বিশ্বমানের ‘বীচ ওয়াকওয়ে’

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৫ নভেম্বর ২০১৬

কক্সবাজারে বিশ্বমানের ‘বীচ ওয়াকওয়ে’

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বের কাছে আরও বেশি পরিচিত করে তোলা এবং বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে নির্মিত হচ্ছে বীচ ওয়াকওয়ে সড়ক। কক্সবাজার সৈকতকে আরও আর্কষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করতে বালিয়াড়ি আর ঝাউবীথির বুক চিরে নির্মিত হচ্ছে বিশ্বমানের ওই বীচ ওয়াকওয়ে। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। দুই কিলোমিটার পর্যটকবান্ধব প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবি। পর্যটন শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত কলাতলী মোড়কে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে। নেয়া হয়েছে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প। এখানে বসে পর্যটকরা নিজের সঙ্গীকে নিয়ে সমুদ্র দেখতে দেখতে মনের আনন্দে পান করতে পারবেন চা ও কফি। এমনকি অনুকূল আবহাওয়ায় মুক্ত আকাশে বসে মোবাইল ও ল্যাপটপও ব্যবহার করতে পারবেন পর্যটকরা। এই বীচ ওয়াকওয়ে সড়কের দুই পাশে ফুলের টব, কফিশপ, চেঞ্জিংরুম, সাইকেল ক্যান্টিন, বাথরুমের ব্যবস্থা অবশ্যই থাকবে। সূর্য পড়ন্তে পর্যটকদের জন্য স্পেশাল বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সড়কের দুই পাশে থাকছে পর্যাপ্ত লাইটিং, ল্যান্ডস্কেপিং, ট্রি প্লান্টেশন তথা মনোমুগ্ধকর বাগান। পর্যটকদের সুবিধা ও বিনোদনের মাত্রা আরও বাড়াতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী সৈকত পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে বিকল্প বীচ ওয়াকওয়ে। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ আগামী জানুয়ারি নাগাদ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যটকবান্ধব প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবিকে। ‘সাইকেলওয়ে-ওয়াকওয়েসহ পর্যটকদের জন্য অন্যান্য সুবিধা নির্মাণ’ প্রকল্পটি বর্তমানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। উন্নত বিশ্বের সৈকতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করা হয়েছে বেশকিছু ড্রইংও। ফাইলটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। আগামী বছরের শুরুতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হবে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, ওই সড়কের দুই পাশে কফিশপ, চেঞ্জিংরুম, সাইকেল ক্যান্টিন, বাথরুম ব্যবস্থা থাকবে। বিকেলবেলার পর্যটকদের জন্য স্পেশাল বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সড়কের দুই পাশে থাকবে পর্যাপ্ত লাইটিং, ল্যান্ডস্কেপিং, ট্রি প্লান্টেশন তথা মনোনুগ্ধগর বাগান। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ওই স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। কক্সবাজার সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরে ফাইল প্রসেস হচ্ছে। চূড়ান্ত পাস হলেই কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হতে ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তার মতে, সৈকতকে আরও দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। সাগরকূল ঘেঁষে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটকদের বিনোদনের মাত্রা আরও অনেকগুণ বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ শহরে আগত পর্যটকদের প্রথম দর্শনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যেই শহরের এ অংশকে সাজানো হচ্ছে নতুন করে। এ প্রকল্পে থাকবে চার লাইনের রাস্তা, ফুলের বাগান, পর্যটকদের বসার চেয়ার, পর্যাপ্ত ফুটপাথসহ আকর্ষণীয় ফোয়ারা এবং ম্যুরাল। কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, কক্সবাজার শহরে আসার সময় পর্যটকরা কলাতলীতে এসেই সমুদ্রের প্রথম দর্শন পেয়ে বিমোহিত হন। তবে কলাতলী মোড়ের ‘জ’ ভাস্কর্য থেকে সাগরপাড় পর্যন্ত অপ্রশস্ত সড়ক এবং অপরিকল্পিত স্থাপনাগুলোই ছিল পর্যটন শহরটির সবচেয়ে শ্রীহীন দৃশ্য। একজন পর্যটকের কাছে প্রথম দর্শনে এমন সড়কটির অসহনীয় পরিবেশের দৃশ্য ছিল নেতিবাচক। এ কারণেই শহরের প্রবেশদ্বারকে সৌন্দর্যম-িত করার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। এরই প্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিছুদিন আগে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে। পরে প্রকল্পটি আরও সম্প্রসারণ করা হয়। গত রবিবার সাড়ে তিন কোটি টাকার এ প্রকল্পটি পাস হয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন। জেলা প্রশাসক সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এ সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণে সড়কটি প্রশস্ত করতে উচ্ছেদ করা হয়েছে বেশকিছু অবৈধ দোকানপাটও। উচ্ছেদের পর সড়কটির দৃশ্যই এখন বদলে গেছে। কমে গেছে যানজট, বেড়েছে সৌন্দর্য। কলাতলী মোড় থেকে সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং পয়েন্ট পর্যন্ত এ সড়কটি এতদিন ঘিঞ্জি পরিবেশে ছিল। অথচ পর্যটকদের প্রথম দর্শনই হচ্ছে এ সড়কটি। তাই সড়কটিকে আকর্ষণীয় করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এ কারণে অবৈধ স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। উক্ত সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় কলাতলী ‘জ’ ভাস্কর্য থেকে সৈকতের তীর পর্যন্ত ১৭০ মিটার দীর্ঘ এবং ৪০ মিটার প্রস্থের সড়কটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ কাজে চাওয়ার চেয়ে পাওয়া আরও বেশি হয়েছে। এছাড়া যাদের অফিসে থাকা বাধ্যতামূলক নয়, তারাও এখানে খোলা বাতাসে কিছুক্ষণ বসে সেরে নিতে পারবে জরুরী কাজ। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, একজন পর্যটকের কাছে প্রথম দর্শনই অত্যন্ত আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। এ প্রকল্পের বাইরেও জেলা পরিষদের ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কের দুই পার্শ্বে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রশস্ত নালা। তিনি জানান, কলাতলী মোড়ের ‘জ’ ভাস্কর্যটি ভেঙ্গে একটি আকর্ষণীয় ফোয়ারা নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে নির্মাণ করা হবে ম্যুরালও। জেলা প্রশাসক আরও জানান, সন্ধ্যার পর পর্যটকরা এখানে সময় কাটাতে পারবেন। থাকবে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা। সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও এ স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রী এটিকে আকর্ষণীয় করে তোলার ব্যাপারে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
×