ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এমপির স্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে পাহাড় কেটে যুবলীগ নেতার পুকুর ভরাট

প্রকাশিত: ০১:৫০, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

এমপির স্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে পাহাড় কেটে যুবলীগ নেতার পুকুর ভরাট

জোবাইর চৌধুরী, নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী ॥ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর স্ত্রী শাহিন আক্তার চৌধুরীর নাম ভাঙিয়ে পৌরসভা ভবনের একশ গজের মধ্যে পাহাড় থেকে পুকুর ভরাট করছে এক যুবলীগ নেতা। সদ্য উপজেলা যুবলীগের সেক্রেটারী হিসেবে মনোনিত হওয়া বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেচুরিয়া গ্রামের মাকসুদ হোসেন মাসুদ নামে এই যুবলীগ নেতা প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে বাঁশখালী-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের পাশে পুকুর ভরাট করলেও দেখার কেউ নেই। গত এক সপ্তাহ ধরে চেচুরিয়ার পাহাড় থেকে মাটি কেটে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। শুধু পুকুর ভরাটই নয় ভরাট করা পুকুরটি প্রভাব বিস্তার করে জবর দখলেরও অভিযোগ করা হয়েছে উপজেলা যুবলীগ নেতা মাকসুদ ও পৌরসভা যুবলীগের আরেক নেতা আরিফের বিরুদ্ধে। এনিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। থানা পুলিশও এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। বাঁশখালীতে প্রকাশ্যে এমপির স্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে যুবলীগ নেতার এভাবে পুকুর ভরাট ও পাহাড় কাটার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) থানা পুলিশ উপেক্ষা করে টিনের বেড়া দিয়ে জায়গা দখল করে নেন। এই বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, আইনশৃংখলা অবনতি না হওয়ার নিমিত্বে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমি উভয় পক্ষকে আইন হাতে তোলে না নিতে নির্দেশ দিয়েছি। সরেজমিন ও এলাকাবাসী সুত্র জানায়, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ ফখরুদ্দীন চৌধুরীদের মালিকানাধীন পুকুরটি থেকে কোব্বাদ মুন্সি নামে এক ব্যক্তি শেখ সাহাব উদ্দিনের কাছ থেকে ১৬ শতক জায়গা খরিদ করেন। অথচ ৫৯ শতকের পুকুরটিতে মালিক রয়েছে ১২ জন। সে হিসেবে ৪ শতকের চেয়ে সামান্য বেশী জায়গা প্রাপ্ত হন তিনি। কিন্তু সেখানে ১৬ শতক জায়গা রেজিষ্ট্রি নিলে জায়গা দখলে ব্যর্থ হয় কোব্বাদ মুন্সি। পরবর্তিতে কোব্বাদ মুন্সি জায়গাটি এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর স্ত্রী শাহিন আক্তার চৌধুরী, যুবলীগ নেতা মাকসুদ ও আরিফদের নামে হস্তান্তর করে দেন। এমপির স্ত্রীর নাম ব্যবহারের পরপরই যুবলীগ নেতা মাকসুদ অনেকটা বেপরোয়া হয়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে জায়গাটি জবর দখল করে নেন। প্রধান সড়কের পাশের জায়গাটি রাতারাতি টিনের ঘেরা দেয়ার পাশাপাশি একাধিক ট্রাক দিয়ে ভরাট করা হয় পুকুরটি। বড় আকারের এবং পুরাতন এই পুকুরটির প্রায় ৯০ শতাংশ জায়গা বর্তমানে ভরাট হয়ে গেছে। এর মধ্যে সাবেক মেয়র শেখ ফখরুদ্দীন চৌধুরীর স্ত্রী শওকত আরা চৌধুরী এবং কানাডা প্রবাসী মাহিন চৌধুরীর একটি স্থাপনা থাকলেও বাকি জায়গা দখল করে নেন যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে দখলদাররা। এই বিষয়ে শেখ পরিবারের সন্তান শেখ মাহবুবুল বশর চৌধুরী জানান, জায়গাটির পিছনে তাদের পরিবারের আরো আড়াই কানি (১০০ শতক) জায়গা রয়েছে। সামনের জায়গাটি এভাবে দখল হয়ে গেলে তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তাছাড়া পুকুর ভরাটের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি পাহাড় কেটেও মারাত্মক অপরাধ করেন এসব দখলদাররা। তিনি জানান, পরিবেশ অধিদফতরসহ সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে অভিযোগের পর অভিযোগ দিলেও পাহাড় কাটা ও পুকুর ভরাট বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এই বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সেক্রেটারী মাকসুদ হোসেন মাসুদ জানান, খরিদ করার পর জায়গাটি সংস্কার ও বসবাস উপযোগী করা হচ্ছে। সরকারের নিয়মনীতি মেনেই পুকুরটি ভরাট করছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন দেখে গেছে। তারা কাজ বন্ধ করেনি। তাছাড়া পৌরসভারও অনুমতি আছে। বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী জানান, পুকুর ভরাটের বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতর দেখে থাকে। জায়গা হস্তান্তর এবং উন্নয়নের ব্যাপারে পৌরসভা থেকে অনুমতি নিয়েছে মালিকরা।
×