ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরাঞ্চলের সব্জি থেকে অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০২:১৫, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

উত্তরাঞ্চলের সব্জি থেকে অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ অনুকুল আবহাওয়া, সার-কীটনাশকের সহজ লভ্যতা এবং ভাল দামের কারণে উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার ক্ষুদ্র, বর্গা ও প্রান্তিক চাষী শাক সবজির চাষ করে এবছর প্রচুর লাভবান হয়েছেন। শীতের সবজি বাজারে আসার আগেই এ অঞ্চলে চলতি এবং রবি মৌসুমে দেড় লাখ হেক্টরের বেশী জমিতে শাক সবজির আবাদ হয়েছে । এ পরিমাণ জমি থেকে উৎপাদিত শাক-সবজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার ওপর। এ তথ্য কৃষি বিভাগের। সরেজমিনে জানা গেছে, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের করলা চাষী ইয়াকুব আলী জানান, তিনি ১ একর জমিতে করলা আবাদ করে খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেছেন দেড় লাখ টাকা। একই উপজেলার ভাংনি ইউনিয়নের করলা চাষী আলী মিয়া ৫০ শতক জমিতে করলা আবাদ করে তার লাভ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তারা বলেন, সময় মত ন্যায্য মূল্যে সার-কীটনাশক দিতে পেরেছি। আবহাওয়া ভাল ছিল। দামও পেয়েছি ভাল। আবার শীতের সবজির জন্য জমি প্রস্তুত করছি। ওই এলাকার আকবর আলী, আব্দুস সাত্তার, আনিছুর রহমান, এরশাদ আলী, সদরের আমিনুল ইসলাম, ফজলুর রহমান, পীরগাছা উপজেলার আব্দুল খালেক, আব্দুস ছাত্তার, আব্দুল খালেক, ইউসুফ আলী, বদরগঞ্জ উপজেলার নজরুল হক, আব্দুল হামিদ, আবুতাহের, ওসান আলী, আব্দুল মতিন, আব্দুল হাকিম, ভ্যানচালক মেনাজুল, মোতালেব, মোক্তার হোসেন, আমিনুল, লোকমান আলী ও জাকরিয়াসহ হাজার হাজার ক্ষুদ্র চাষি সবজি আবাদ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন। এ চাষীরা জানান, এক সময় তাদের সংসার চলতো ধার দেনা করে। কিন্তু সবজি চাষের ফলে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। তারা এখন সকলেই স্বাবলম্বী। তারা জানান, এখন তাদের শাক সবজি বিক্রির জন্য হাট বাজারে যেতে হয় না। ব্যাপারীরা ক্ষেত থেকে শাক সবজি ক্রয় করে নিয়ে যান। এসব ব্যাপারিরা ঢাকা চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট সহ বিভিন্ন স্থানে সবজি সরবরাহ করে। এছাড়াও খরিপ -১ মৌসুমে ঢেড়স, পটল, চিচিংগা, পুই শাক, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, পানি কুমড়া, চাল কমড়া ইত্যাদি রবি মৌসুমে মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, লাল শাক, পালং শাক, পুই শাকসহ অন্যান্য সবজি আবাদ করে প্রায় একই ধরনের লাভ পাচ্ছেন উত্তরের ১৬ জেলার কৃষকরা। ফলে অনেকেই এখন শাক সবজির আবাদের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। এখন উত্তরাঞ্চলের মহা সড়কগুলোর পাশে দাড়ালে দেখা যায়, বিভিন্ন হাট বাজারের পাশে ট্রাক দাড়িয়ে রয়েছে সবজি ক্রয়ের জন্য। রাত থেকে ভোর হতে হতে এসব ট্রাক সবজি নিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে চলে যাচ্ছে। বেশ কবছর থেকে এ অঞ্চলে সবজি চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বেশী করে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। রংপুর ও রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় রবি ও খরিপ মৌসুমে দেড় লাখ হেক্টর জমি থেকে ২৮ লাখ ৫০০ মেট্রিক টন করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুই শাক, মুলা, টমেটো, কুমড়াসহ বিভিন্ন শাক সবজি শাকসবজি কৃষকদের ঘরে উঠেছে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে ১৯ মেট্রিক টন । এ পরিমাণ উৎপাদিত পণ্যের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৪ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার উপরে। প্রতি কেজি শাক সবজির সর্ব নিম্ন দর ১২ টাকা হলে প্রতি মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে দু’ মৌসুমে সাড়ে ২৮ লাখ মেট্রিক টন শাক সবিজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩শ ৪০ কোটি টাকা। শাক সবজি বিক্রি করে এ অঞ্চলে দারিদ্রতা দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। রংপুর ও রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের উৎপাদিত শাক সবজির এ অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের অভাব মোচনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রংপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ খন্দকার মেজবাহ উল ইসলাম জানান, অনুকুল আবহাওয়া, সার-কীটনাশকের সহজ লভ্যতা ও কৃষি বিভাগের সুষ্ঠু মনিটরিং এর ফলে বিগত কয়েক বছরে তুলানায় এ অঞ্চলে শাক সবজির আবাদ ভাল হচ্ছে। ভাল দামের কারণে কৃষকরা প্রচুর লাভ পাচ্ছেন। এর ফলে শাক-সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা।
×