ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানির তুলনায় ১২ গুণ বেশি পণ্য আমদানি

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১০ অক্টোবর ২০১৬

রফতানির তুলনায় ১২ গুণ বেশি পণ্য আমদানি

রহিম শেখ ॥ গত ২৬ বছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৮৮৪ কোটি ডলার। ওই অর্থবছরে দেশটি থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৯৬৫ কোটি টাকার পণ্য। এর বিপরীতে চীনে রফতানি করা হয় ৮১ কোটি টাকার পণ্য। দেখা গেছে দেশটি থেকে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করা হয় এর ১২ গুণ বেশি পণ্য আমদানি করা হয়। এ কারণে প্রতি বছরই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে ভারতের সঙ্গে। এর পরের স্থানে রয়েছে চীন। এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। আমদানির পাশাপাশি রফতানি বহুমুখী খাত বহুমুখী করার ওপর তাগিদ দিলেন তারা। জানা গেছে, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১০ কোটি ডলার। ওই বছরে বাংলাদেশ চীন থেকে আমদানি করে ১৩ কোটি ডলারের পণ্য। বিপরীতে রফতানি করে ৩ কোটি ডলারের পণ্য। বর্তমান সরকারের গত আট বছরে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৫ হাজার ৪৯ কোটি ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে এই ঘাটতি হয়েছে। ওই সময়ে প্রতি বছরই দেশটিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০০৬-০৭ ও ২০০৭-০৮ দুই অর্থবছরে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হয় ৮৮৩ কোটি ডলার। এর আগের ৫ বছরে অর্থাৎ ২০০১-০২ থেকে ২০০৫-০৬ অর্থবছর পর্যন্ত চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪২৭ কোটি ডলার। এর আগের আওয়ামী লীগের ৫ বছরে বাণিজ্য ঘাটতি হয় ২৮৮ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৮৮৪ কোটি ডলার। ওই অর্থবছরে দেশটি থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৯৬৫ কোটি টাকার পণ্য। এর বিপরীতে চীনে রফতনি করা হয় ৮১ কোটি টাকার পণ্য। দেখা গেছে দেশটি থেকে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করা হয় এর ১২ গুণ বেশি পণ্য আমদানি করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জনকণ্ঠকে বলেন, চীন থেকে আমদানি বহুমুখী হচ্ছে। কিন্তু আমাদের রফতানি বহুমুখী হচ্ছে না। চীন আমাদের বাজার সুবিধা দিলেও তা আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। তবে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে বাড়ছে, এটি ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের ৯০ শতাংশই হচ্ছে বস্ত্র খাতে। এ বিনিয়োগ বহুমুখী করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে চীনে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় নিট ওয়্যার সামগ্রী, ওভেন গার্মেন্টস, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিকজাত পণ্য, কৃষি পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, প্রকৌশল পণ্য, রাসায়নিক পণ্য প্রভৃতি। চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে টেক্সটাইল পণ্য, মেশিনারি, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, লৌহজাত পণ্য, মিনারেল পণ্য, খনিজ পণ্য, পরিবহন পণ্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল প্রভৃতি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ জনকণ্ঠকে বলেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির বড় কারণ আমাদের রফতানি পণ্যের তালিকায় চীনে পাঠানোর মতো পণ্য কম। সত্য কথা বলতে তাদের দেয়ার মতো তেমন ভাল কিছু আমাদের নেই। আমাদের তেমন ভাল ব্র্যান্ডও নেই। এ কারণেই চীনে বেশি কিছু রফতানি করতে পারছি না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, চীন থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আমদানি করে শিল্পের কাঁচামাল। এগুলোর দাম কম থাকায় দেশটি ব্যবসায়ীদের বেশি পছন্দ। অন্য পণ্যের দামও চীনে কম। এসব কারণে দেশটি থেকে আমদানি বেশি। বিপরীতে বাংলাদেশের রফতানি খুবই কম। যে কারণে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি। চীনে রফতানি বাড়ানোর সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এর ফলে তারা ভালমানের পণ্য উৎপাদন করে আবার চীনেই রফতানি করতে পারবে। তখন বাণিজ্য ঘাটতি আস্তে আস্তে কমে আসবে। বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিসিসিআই) সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বেণু জনকণ্ঠকে বলেন, চীন থেকে আমাদের আমদানি বেশি, কিন্তু রফতানি কম। যে কারণে বাংলাদেশের বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি কমাতে চীনে পণ্য রফতানি বাড়াতে হবে। কিন্তু আমাদের চীনে রফতানি করার মতো যথেষ্ট পণ্য নেই। যে কারণে রফতানি বেশি করা যাচ্ছে না। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সেই দেশে আমাদের কিছু পণ্যে রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দরকার। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও দেশটি অবশ্য বাংলাদেশকে বিভিন্ন খাতে অনেক অনুদানও দিয়ে থাকে। এছাড়া চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে অনেক অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসছেন। তার এ সফরে বাংলাদেশে বহুমুখী বিনিয়োগসহ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের বাজারে পণ্য রফতানির বিষয়টিও তুলে ধরা হবে। চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ১০০ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফরে আসবেন। প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে এফবিসিসিআইর প্রতিনিধিরা বৈঠক করবেন। ওইসব বৈঠকে তাদের যৌথ বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে, সফররত প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে।
×