ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩০৯ রান করেও প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে পরাজিত

ইমরুলের শতক চাপা দিয়ে জয় ইংল্যান্ডের

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৫ অক্টোবর ২০১৬

ইমরুলের শতক চাপা দিয়ে জয় ইংল্যান্ডের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে, না পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের আশা পূরণ হলো? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে হাতুরাসিংহের আশাই মিটল। ওপেনার ইমরুল কায়েস একাই ১২১ রানের ইনিংস খেলে দেখালেন। মন ভরে ইংলিশ বোলারদের বলগুলো পেটালেন। হাতুরাসিংহের তো মহাখুশি হওয়ারই কথা। একাদশ নির্বাচনে যে একজন ওপেনারের অভাববোধ ছিল, তা যে পূরণ হয়ে গেল। তাইতো শতক করেই ইমরুল ড্রেসিংরুমের দিকে ‘ব্যাট-হেলমেট’ উঁচু করে ধরলেন। হাতুরাসিংহেকে যেন বলতেও চাইলেন, ‘ওপেনিংয়ে আমাকে নিয়ে ভরসা করতে পারেন।’ কিন্তু তার এ শতকের পরও ষষ্ঠ উইকেটে জস বাটলার ও মঈন আলীর ১৩৯ রানের জুটিতেই ৪ উইকেটে জিতে গেল ইংল্যান্ড। টস জিতে আগে ব্যাট করে বিসিবি একাদশ। ৩৬ রানের সময় একবার ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বেঁচে ৯১ বলে ১১ চার ও ৬ ছক্কায় ইমরুলের করা ১২১ রান, ৫৭ বলে ৫ চারে হঠাৎ বিসিবি একাদশের হয়ে খেলা মুশফিকের করা ৫১ এবং ৪৫ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় নাসিরের করা ৪৬ রানে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রান করে বিসিবি একাদশ। ক্রিস ওকস তিনটি, ডেভিড উইলি ও বেন স্টোকস দুটি করে উইকেট নেন। জবাবে ইংলিশদের প্রথম উইকেট পড়ে ৭২ রানে। তখনই মনে হয়, ব্যাটিং নির্ভর উইকেটে ইংল্যান্ড জিতে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। অধিনায়ক বাটলারের ৮০, মঈন আলীর ৭০ ও জেমস ভিঞ্চের ৪৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩ বল বাকি থাকতে ৩১৩ রান করে জিতে যায় ইংল্যান্ড। বল হাতে শুধু এবাদত হোসেন ২ উইকেট শিকার করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ ইনিংসে তিনটি বড় জুটিও হয়। ইমরুল-নাজমুল হোসেন শান্তর দ্বিতীয় উইকেটে ৮৫, ইমরুল-মুশফিকের তৃতীয় উইকেটে ৭১ ও মুশফিক-নাসিরের চতুর্থ উইকেটে ৬৯ রানের জুটি হয়। ৮১ বলে ইমরুল শতক করেন। এরপর আর ২১ রান যোগ করে ১৯১ রানে ডেভিড উইলির বলে বোল্ড হন। তিন উইকেটের পতনও ঘটে। সেখান থেকে আরও ১১৮ রান যোগ হতেই ৬ উইকেটের পতন ঘটে যায়। বলতে গেলে, শেষ ২৮ রানেই ৫ উইকেট হারায় বিসিবি একাদশ। শেষ পর্যন্ত আর ১ রান হতেই নির্ধারিত ওভার শেষ হয় বিসিবি একাদশের। যে রান করে বাংলাদেশ, তাতেই মনে হয় বিসিবি একাদশই জিততে পারে। কিন্তু ইংল্যান্ড যে আরও দুর্বার ব্যাটিং করে। ৯ জন বোলার ব্যবহার করে বিসিবি একাদশ। তাতেও কিছুই হয়নি। প্রথম উইকেটে জেসন রয় ও ভিঞ্চ ৭২ এবং ষষ্ঠ উইকেটে বাটলার ও মঈন ১৩৯ রানের জুটি গড়েই খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তবে ম্যাচ হারা যদি হতাশার হয়, তাহলে আশা হচ্ছে ইমরুল, মুশফিক ও নাসিরের ব্যাটিং। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশ দলে থাকা মুশফিকুর রহীম, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস ও নাসির হোসেনের ব্যাটিংয়ের দিকেই হাতুরাসিংহের নজর ছিল। ফতুল্লা স্টেডিয়ামে উপস্থিত থেকে, ড্রেসিংরুমে বসে তাদের ব্যাটিংও দেখলেন। এক সৌম্য (৭) ছাড়া বাকি সবাই তো কোচকে আনন্দই দিলেন। হোক প্রস্তুতি ম্যাচ, রানে তো ফিরলেন মুশফিক (৫১)। টানা ১৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচের পর কোন আন্তর্জাতিক দলের বিপক্ষে অর্ধশতক করতে পারলেন মুশফিক। নাসির হোসেনওতো (৪৬) ব্যাট হাতে ঝলক দেখালেন। সেই তুলনায় ওয়ালশ যে পেসার আলী আহমেদ মানিককে নেটে দেখেই প্রস্তুতি ম্যাচে খেলানোর প্রস্তাব করেছেন, পেসার হান্ট থেকে আলোচনায় আসা এবাদত হোসেনকে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তাতে কি সন্তুষ্টি মিলেছে? এবাদত শুরুতেই ২ উইকেট শিকার করে ওয়ালশকে স্বস্তিই দিয়েছেন। ওয়ালশ খুশি হতে পারেন আলী আহমেদ মানিককে নিয়েও। নেট বোলার থেকে প্রস্তুতি ম্যাচে মানিককে ওয়ালশই খেলানোর প্রস্তাব করেন। তাতে ৫ ওভার বল করে ২৯ রান দেন। কোন উইকেট অবশ্য নিতে পারেননি। আর এবাদত ২টি উইকেটই শিকার করেন। কিন্তু অন্য বোলাররা নিজেদের মেলে ধরতে না পারায় ম্যাচ হারতেই হয় বিসিবি একাদশকে। বাংলাদেশ ৩০৯ রান করলে ম্যাচ থেকে ইংল্যান্ডকে ছিটকে ফেলেছিল। ম্যাচ দেরিতে শেষ হয়েছে। তাই ম্যাচের ২৫ ওভারের বেশি কৃত্রিম আলোতেই খেলা হয়েছে। তবে ব্যাটিং উইকেটে ইংল্যান্ড আরও বেশি ঝলক দেখানোয় জয় ধরা দেয় তাদেরই। অবশ্য প্রস্তুতি ম্যাচেই জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানরা এত দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন যে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন আরও বড় হলো। ‘যদি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলা যায়, তাহলে সম্ভাবনা আছে।’ সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা নিয়েই বলেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এখনতো আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেল। প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ড একাদশে খেললেন অধিনায়ক জস বাটলার, ব্যাটসম্যান জেসন রয়, জেমস ভিঞ্চ, বেন ডাকেট, জোনাথন বেয়ারস্টো, পেস অলরাউন্ডার বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস, স্পিন অলরাউন্ডার মঈন আলী, লেগ স্পিনার আদিল রশিদ, পেসার ডেভিড উইলি ও লিয়াম প্লাঙ্কেট। এদের মধ্যে এক-দুইজন ছাড়া ওয়ানডেতেও খেলবেন বাকিরা। পুরো শক্তির দলই প্রস্তুতি ম্যাচে নামিয়েছে ইংল্যান্ড। সেই দল নিয়ে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে জিতেছে। যে বিসিবি একাদশে বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় দলের ইমরুল, সৌম্য, মুশফিক, নাসির, আল আমিন খেলেছেন। এ পাঁচজনের মধ্যে সৌম্য ও আল আমিন ছাড়া সবাই ভাল খেলেছেন। বিসিবি একাদশের বিপক্ষে ইংল্যান্ড জিতলেও স্কোরবোর্ডে যে তুখোড় সব বোলারের বিপক্ষে খেলে তিন শ’ রানের বেশি করা গেছে। সেটিই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান রুম্মন, তাসকিন আহমেদদের মুখোমুখি হতে তো বাকিই আছে ইংল্যান্ডের। বিসিবি একাদশের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে ইংল্যান্ডকে সিরিজে হারানোর সাহসই পেয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। সেই পারফর্মেন্স মিলেছে ইমরুলের শতক থেকেই। কিন্তু সেই শতকের পরও জিতল ইংল্যান্ডই।
×