ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দর্শনার্থী বাড়লেও ক্রমেই খাঁচাশূন্য হচ্ছে বিরল পশু-পাখি

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১ অক্টোবর ২০১৬

দর্শনার্থী বাড়লেও ক্রমেই খাঁচাশূন্য হচ্ছে বিরল পশু-পাখি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজধানীর বাইরে উত্তরাঞ্চলের একমাত্র বড় বিনোদন কেন্দ্র রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা ক্রমেই প্রাণীশূন্য হয়ে পড়ছে। কয়েক বছর আগেও পশু-পাখির বিচরণ কেন্দ্র ছিল এ চিড়িয়াখানা। বাঘ, ভাল্লুক, কুমির, ঘড়িয়াল, হরিণ, সিংহ থেকে শুরু করে ময়ূর ও হাজারো প্রজাতির বিরল সব প্রাণী ছিল এখানে। দর্শনার্থীরা তা দেখে পুলকিত হতেন। তবে নানা কারণে এখন চিড়িয়াখানার বেশির ভাগ খাঁচা পড়ে রয়েছে প্রাণীশূন্য। আগের চেয়ে দর্শনার্থী বাড়লেও তাদের নির্মল আনন্দ দিতে পারছে না এ চিড়িয়াখানা। রাজশাহীর কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় এক যুগে প্রাণীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাঘ, সিংহ, মায়া হরিণ থেকে শুরু করে অনেক প্রাণী মারা গেছে। চিড়িয়াখানার ভেতরে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পর দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রাণী না থাকায় দর্শনাথীদের মধ্যে হতাশাও লক্ষ্য করা গেছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যানুযায়ী ২০০৩ সালে রাজশহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ছিল দুটি সিংহ, একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ১৯৪টি চিত্রা হরিণ, দুটি মায়া হরিণ, ২৬টি বানর, ৯টি বেবুন, চারটি গাধা, দুটি ভাল্লুক, একটি ঘোড়া, দুটি সাদা ময়ূর, তিনটি দেশী ময়ূর, ৮৫টি তিলা ঘুঘু, ৬৮টি দেশী কবুতর, ২৮টি বালিহাঁস, দুটি ওয়াকপাখি, পেলিকেন, টিয়া, ভুবন চিল, বাজপাখি, হাড়গিল, হুতুম পেঁচা, শকুন, উদবিড়াল, ঘড়িয়াল ও একটি অজগর। এগুলো দর্শনার্থীদের নির্মল আনন্দ দিত। তবে এখন এসব প্রাণীর অর্ধেকও এখন নেই। সিংহ, ময়ূর, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের খাঁচা ফাঁকা পড়ে আছে। চিত্রা হরিণের সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ কমে গেছে। কমেছে বেবুন, ঘড়িয়াল, ভাল্লুকের সংখ্যা। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে ৭টি গাধা, ২০টি বানর, ২টি বেবুন, ২টি হনুমান, ১টি মায়া হরিণ, ৪৪টি চিত্রা হরিণ, ২টি মেছো বাঘ, ৪টি গন্ধ গোকুল, ১টি ভালুক, ৩০টি খরগোশ, ১টি হুতুম পেঁচা, ১টি হাড়গিল, ৪৮টি রাজহাঁস, ১০টি বালিহাঁস, প্রায় ২০০টি তিলা ঘুঘু, ২টি পাতিহাঁস, ১১০টি হাইব্রিড কবুতর, ১টি কালিম পাখি, ৭টি চখা, ২টি ঘড়িয়াল, ১টি অজগর, ৭টি কচ্ছপ, ৩০টি বক, ২টি সাদা বড় বক, ১টি ওয়াক পাখি, ১টি পেলিকেন, ১টি চিল, ১টি মুরাল মাছ ও ২টি বনবিড়াল রয়েছে। শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যোন ও চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাই জানান, শুধু প্রাণী আমদানি করলেই হবে না, তাদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা এবং একটি পুরুষ ও একটি মেয়ে প্রাণী রেখে আন্তঃপ্রজননের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব না করা হলে অল্প বয়সেই প্রাণীরা মারা যাবে। এখানে পর্যাপ্ত পরিসর থাকলেও প্রজনন ব্যবস্থা না থাকায় ক্রমেই কমে যাচ্ছে পশু-পাখি। তারপরও তারা সাধ্যমতো টিকিয়ে রেখেছেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত যেগুলো প্রাণী মারা গেছে সেগুলোর বেশিরভাগ বয়স বৃদ্ধির কারণে। ময়ূর সাধরণত ৮ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে, কিন্তু এখানে ময়ূর ২২ বছর বেঁচে ছিল। এখন আর নেই। এদিকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরে এ চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে লাভের পরিমাণও বেশি হচ্ছে। বেড়েছে টিকেটের দামও। তবে কাক্সিক্ষত প্রাণী না থাকায় দর্শনার্থীরা নির্মল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা নগরীর লতিফুর রহমান জানান, শিশুদের নিয়ে নিয়মিত চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসেন তিনি নিরিবিলি পরিবেশের কারণে। চিড়িয়াখানা একটি নিরিবিলি পরিবেশ, অনেক খেলনা বাচ্চাদের জন্য ফ্রি রাখা হয়েছে, চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসে অনেক আনন্দ হয়। তবে নতুন নতুন পশু-পাখির নিয়ে আসলে আনন্দ আরও বেশি হবে বলে জানান তিনি। নগরীর উপশহর এলাকার আঞ্জুআরা চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসে জানান, বড় প্রাণী চিড়িয়াখানায় নেই বললেই চলে। ঘুঘু, কবুতরের মতো সাধারণ পাখিগুলো দিয়ে খাঁচা ভরিয়ে রাখা হয়েছে। বাচ্চাদের প্রাণী সম্পর্কে ধারণা দেয়া যাবে এমন প্রাণী এখন আর চিড়িয়াখানায় দেখা মিলছে না। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শনার্থী আসেন এ চিড়িয়াখানায়। তবে বিরল সব পশু-পাখি না থাকায় তারাও হতাশ হন। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭২ সালে রাজশাহী চিড়িয়াখানার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ৩৩ একর ভূমিতে নির্মিত উদ্যানটি শুরুর পর থেকে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকলেও ১৯৯৬ সালের ২৬ নবেম্বর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন গ্রহণ করে। ব্রিটিশ আমলের ঘোড়দৌড় মাঠটি আধুনিকায়নের ফলে এখন হয়ে উঠেছে অরণ্যে ঘেরা সবুজ বনভূমি। সেই উদ্যান এখন আধুনিক রূপে সাজানো এক নয়নাভিরাম বিনোদন কেন্দ্রে রূপ নিলেও প্রাণীশূন্য খাঁচায় হতাশ হচ্ছেন বিনোদনপ্রেমী ও দর্শনার্থীরা।
×