ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জল-রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না: মোদী

প্রকাশিত: ১৯:১০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জল-রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না: মোদী

অনলাইন ডেস্ক ॥ রক্ত আর নদীর জল একসঙ্গে বইতে পারে না! সিন্ধু নদের জলবণ্টন চুক্তি খতিয়ে দেখতে ডাকা এক বৈঠকে এই ভাষাতেই পাকিস্তানের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উরির হামলার পর নয়াদিল্লি স্পষ্ট করে দিয়েছিল, সন্ত্রাসে মদত দেওয়ায় ইসলামাবাদকে একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা হবে। পাশাপাশি, ৫৬ বছরের পুরনো সিন্ধু জলচুক্তি নিয়েও পাকিস্তানের উপর প্রবল চাপ তৈরি করা হবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কোঝিকোড় থেকে ফিরেই সিন্ধু চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আজ বৈঠকে বসেছিলেন। ভারত-পাক টানাপড়েনের মধ্যে নয়াদিল্লির বার্তা স্পষ্ট। মোদী সরকারের শীর্ষ কর্তারা এমনিতেই মনে করেন, চুক্তিটি বেশি রকম ভাবে পাকিস্তানের দিকে ঝোঁকা। এর আওতায় থাকা ছ’টি নদীর প্রায় ৮০ শতাংশ জল পাকিস্তানকে দিয়ে দেয় ভারত। তবে বেশ কিছু দিন ধরেই পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সক্রিয় হয়েছে নয়াদিল্লি। উরির ঘটনা সেই মনোভাবকে আরও উস্কে দিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুটি বড় যুদ্ধের সময়েও সিন্ধু চুক্তি বহাল ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে জলের লড়াই শুরু করতে এবং ইসলামাবাদকে উচিত শিক্ষা দিতে এই চুক্তি বাতিলের পক্ষে সওয়াল করছেন অনেকেই। কিন্তু নয়াদিল্লি বুঝছে, বর্তমান চুক্তিটি বাতিল করতে গেলে ভারতকে আন্তর্জাতিক মহলে অনেক প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে চিনের মতো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে জলবণ্টনে জটিলতা বাড়বে। সিন্ধু নদের উৎপত্তি চিনে। বেজিং যদি নদীর গতিপথে বদল আনার চেষ্টা করে, তা হলে ভারতে সিন্ধুর জলপ্রবাহ ৩৫ শতাংশ কমে যাবে। এ ছাড়া, ব্রহ্মপুত্র নদের জল নিয়েও নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে চিন। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিবাদ জানানোও সমস্যা হবে। আর নদী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া ভারতের পক্ষে এই মুহূর্তে সিন্ধু চুক্তি বাতিল করাও সম্ভব নয়। কেননা, নদী বাঁধ তৈরিতে যে সময় লাগবে, সেই সময়ে উপত্যকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নদী বাঁধ নির্মাণ হলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ১৯৬০ সালের চুক্তিটি পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে না। তবে এ নিয়ে নতুন কিছু পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। পাকিস্তানকে যা বিরাট ভাবে চাপে ফেলতে পারে। কেননা সে দেশের একটা বড় অংশে কৃষি, সেচ পুরোপুরি ভাবে এই জলচুক্তির উপরেই নির্ভর করে। আজকের বৈঠকে স্থির হয়েছে, এই ছ’টি নদীর (ঝিলম, চন্দ্রভাগা, শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী এবং সিন্ধু) জলের ভাগ ভারত যাতে বেশি পায় সে জন্য ঝাঁপানো হবে। দরকার হলে আন্তর্জাতিক নদী ট্রাইব্যুনালেও যাওয়া হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে নদী কমিশনের আসন্ন বৈঠকও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। কেননা নয়াদিল্লির মতে, ‘কোন আলোচনাই সন্ত্রাসের পরিবেশে চলতে পারে না।’ যে সব সম্ভাবনা ও প্রস্তাব নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে, তা হল, ১) বেশ কিছু নদীর উপর একতরফা ভাবেই নতুন প্রকল্প তৈরি করা হবে। ২) ঝিলম, চন্দ্রভাগা এবং সিন্ধুর জল ভারত ঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারে না। এ ক্ষেত্রে নদীর স্রোত বন্ধ না করে ছোট ছোট বাঁধ তৈরি করা হবে। যাতে জম্মু ও কাশ্মীরে বিদ্যুৎ ও সেচের সমস্যা দূর হবে। ৩) ঝিলম, চন্দ্রভাগা ও সিন্ধু— এই তিনটি নদীর ৩.৬০ মিলিয়ন-একর-ফিট (এমএএফ) জল ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য ধরে রাখতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের বিরোধিতা এবং নয়াদিল্লির উদ্যোগের অভাবে এ ব্যাপারে সক্রিয়তা দেখা যায়নি। এ বার দেরি না করে এই কাজ শুরু করে দিতে চায় মোদী সরকার। আজকের বৈঠকে মোদী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর, জলসম্পদ মন্ত্রকের সচিব প্রমুখ। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির বিষয়টি যখন নতুন ভাবে খতিয়ে দেখছে কেন্দ্র, ঠিক তখনই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ সুপ্রিম কোর্টে এই চুক্তির সাংবিধনিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। মামলাকারী আইনজীবী এম এল শর্মার দাবি, চুক্তিতে সই করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও তখনকার পাক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। কিন্তু সই করা উচিত ছিল ভারতের রাষ্ট্রপতির। মামলাকারী দ্রুত শুনানির দাবি জানালেও, প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের বেঞ্চ জানিয়েছেন, স্বাভাবিক নিয়মেই এর শুনানি হবে। এত জরুরি বিষয় যখন, এত দিন কোথায় ছিলেন— মন্তব্য করেছে আদালত। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×