ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজিবের বাদ্যের নাম কলস

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রাজিবের বাদ্যের  নাম কলস

সম্বল বলতে নিজের দরাজ কণ্ঠ আর বাদ্যযন্ত্র স্টিলের কলস। হাত দিয়ে তিনি কলসেই সুর তুলে মানুষকে আকৃষ্ট করে তোলেন সুরের মূর্ছনায়। মানুষ তাঁর গান শোনে কান পেতে। যে যতটুকু পারে গান শুনে খুশি হয়ে টাকা-পয়সা দেয়। ছোট থেকে এভাবেই নিজের মধ্যে লালিত সুর ধারণ করে মানুষকে সুরের মূর্ছনায় আকৃষ্ট করে জীবিকার পথ বেছে নিয়েছেন রাজিব। জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রাজিব তাঁর জীবিকার অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছেন গান। একটি মাত্র কলস তাঁর বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ঝংকার ছড়ায়। শিশুকাল থেকে গানে নিবিষ্ট রাজিব অন্ধ হয়েও ছুটে বেড়ান রাজশাহী নগরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে। তাঁর গান এখন শোনা যায় এলাকার বিভিন্ন চায়ের স্টলে, মোবাইল ফোনে। এছাড়া ইউটিউবেও ছড়িয়েছে তাঁর গান। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ‘আনসান স্টার’ অনুষ্ঠানে কলস বাজিয়ে গান গেয়ে দৃষ্টি কেড়েছেন সবার। ছোটখাটো গানের আসরেও ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। তাঁর বিশ্বাস একদিন সবাই তাঁকে শিল্পী হিসেবে চিনবে। রাজশাহীর তানোর গ্রামে জন্ম রাজিবের। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় পড়ালেখা শেখার সৌভাগ্য হয়নি। এ কারণে ছোট থেকেই অনুমানের ওপর নির্ভর করে চলাফেরা করতে হয় তাঁকে। গরিব বাবা-মার সংসারে রাজিব সবার ছোট। মায়ের কষ্ট বুঝে ২০ বছর বয়সেই বিয়ে করতে হয় তাঁকে। বর্তমানে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে রাজিবের সংসার চলে কলসের গায়ে বাজনা তুলে। খুব ছোট থেকেই বাজিব রেডিওর গান শুনে গাওয়া শুরু করেন। এভাবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ও চায়ের স্টলে গান গাইতে গাইতে রাজিব অন্ধ শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর স্বরচিত গান মোবাইল ফোনে ও চায়ের দোকানে বাজতে শোনা যায়। কলস বাজিয়ে গান গাওয়াকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। রাজিব এখন অন্যান্য জেলা শহরেও গান গেয়ে থাকেন। তাঁর ধ্যান, জ্ঞান ও সাধনায় গান। তিনি তানোরের এতিহ্য নিয়ে বেশ কয়েকটি গান বেঁধেছেন। তাঁর নিজস্ব এসব গান মানুষকে আনন্দ ব্যাপক দেয়। গান গেয়ে প্রতিদিন চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে রাজিবের। চোখে আলো না থাকায় কোন কাজে লাগতে না পেরে কণ্ঠের সুরকেই করেছেন জীবিকার চালিকাশক্তি। কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ার কারণে বাদ্যযন্ত্র কেনা সম্ভব হয়নি। তাইতো কলস হাতে বেরিয়ে পড়েন প্রতিদিন। খুব সকালে তানোর থেকে আসেন রাজশাহী শহরে। বাসের ছাদে চেপে কোন রকমে রাজশাহী নগরীতে এসে হাতের কলসে বোল আর গলায় তোলেন একের পর এক গান। অসংখ্য গান রপ্ত করেছেন তিনি। তাঁর সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হয়ে পথচারীরা বকশিশ দিয়ে যায়। কলস পিটিয়ে রাজিব যেভাবে গান গেয়ে মানুষকে বেঁধে রাখেন, তা না শুনলে বা দেখলে বোঝানো দায়। প্রান্তিক এ শিল্পী তাঁর গানে মানুষকে উজ্জীবিত করলেও অবহেলায় নিমজ্জিত নিজে। সহায়তা পেলে ভালো শিল্পী হয়ে উঠতে পারেন রাজিব। রাজিব তাঁর রচিত গান টিভিতে গাইতে চান। Ñমামুন-অর-রশিদ রাজশাহী থেকে
×