ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুকর্মী নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

শিশুকর্মী নির্যাতন

শিশুকর্মী নির্যাতন কি দিন দিন বেড়ে চলেছে! নাকি মুক্ত গণমাধ্যমের কারণে এখন এসব সংবাদ আর চাপা থাকছে না বলেই এটা বাড়ছে? উত্তর যেটাই হোক শিশুকর্মী নির্যাতন থেমে নেই, বরং নিত্য তার বৈশিষ্ট্য বদলাচ্ছে। বাস্তবে প্রতিনিয়ত মিলছে তার ভূরি ভূরি উদাহরণ। হ্যাঁ, শিশুশ্রম অনাকাক্সিক্ষত বটে। কিন্তু গরিব পরিবারের ক্ষেত্রে এটাই জ্বলন্ত বাস্তবতা। যে শিশুটির যাওয়ার কথা বিদ্যালয়ে, সংসারের চাপে সে যাচ্ছে কর্মস্থলে। যে শিশুটির দিন কাটবে হেসে খেলে গল্পে আর ঘুরে বেড়িয়ে, সেই শিশুটির ভাগ্যে জুটছে ‘মনিবের’ গালমন্দ, শারীরিক অত্যাচার। চাঁদপুরের নয় বছরের শিশু জান্নাতুল ফেরদৌসের ওপর গৃহকর্তা-গৃহিণীর অমানুষিক নির্যাতনের বিবরণ পড়লে ক্ষুব্ধ হতে হয়। ঈদে নতুন কাপড় এবং বাড়ি যেতে চাওয়ার ‘অপরাধে’ শিশুটিকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনে শিশুটির পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। কোন মানুষের পক্ষে যে কোন শিশুকে এভাবে নির্যাতন যে সম্ভব তা বিশ্বাস করা কঠিন। এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জান্নাতুল ফেরদৌসের মতো শত সহস্র শিশুকে পেটের দায়ে অন্যের বাড়িতে, ক্ষেতে-খামারে কিংবা কলে-কারখানায় কাজ করতে হয়। শহরের কর্মজীবী পরিবারগুলো বহুলাংশে এই শিশুশ্রমের ওপর নির্ভরশীল, সন্দেহ নেই। শিশুকর্মীরাই সচ্ছল পরিবারের শিশুদের লালনপালন থেকে শুরু করে তাদের স্কুলব্যাগ পর্যন্ত বহন করে থাকে। পাশাপাশি রান্না-ধোয়া-মোছা হতে শুরু করে ঝুঁকিপূর্ণ ও শ্রমসাধ্য অনেক কাজও করতে হয় তাদের। মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষের পক্ষে এসব শিশুর সঙ্গে গর্হিত আচরণ অসম্ভব। তাদের স্নেহমমতা দিয়ে পেট ভরে খাবার খাইয়ে মনের দিক থেকে যতটা সম্ভব হাসি-খুশি রাখাই প্রত্যাশিত। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের একটি কারখানায় পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশুশ্রমিক সাগর বর্মণকে এবং খুলনায় একই কায়দায় শিশু রাকিবকে হত্যার ঘটনা দেখেছে এই সমাজ। মানুষ এতটা নির্মম নৃশংস নিষ্ঠুর কীভাবে হতে পারে? এসব ঘটনায় প্রকৃত মানুষের বিবেকবোধ বিমর্ষ বিবশ হয়ে পড়ার মতোই। এমন বর্বরতার কথা কোন সুস্থ মানুষের কল্পনাতেও আসার কথা নয়। শিশুর প্রতি বড়দের স্নেহের উদ্রেক হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর অন্যথা হওয়া অস্বাভাবিক অসুস্থ বিষয়। শিশুদের ওপর গবেষণা ও সমীক্ষা থেকে বিশ্বে এই সত্যটিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, শিশুদের গালমন্দ বা মারধর করা তাদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য শুভ ও ইতিবাচক নয়। এই ধরনের নৃশংসতার হাত থেকে শিশুদের আমরা কীভাবে বাঁচাব সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরী। শিশুকর্মীদের ওপর অকথ্য বর্বর নির্যাতন আমাদের অবক্ষয়ের অন্যায়ের অশালীনতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত। আমাদের এই সমাজ নেতিবাচকভাবে বদলে গেছে। বদলানোর জন্য একাধিক বিষয় দায়ী। তার একটি হলো মানুষের অবনতিশীল মনোভাব। মানুষ এখন মানবিকতাবোধ খুইয়ে বসেছে। এই চরম নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণের পথ অবশ্যই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সেজন্য আইনের শাসনের কোন বিকল্প নেই। অন্ধকার অসভ্যতা অসুস্থতা থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে সত্য সুন্দর ও জ্ঞানের আলোর উদ্বোধন চাই। মানবতা, মনুষ্যত্ববোধ, সুস্থ রুচি, আদর্শ এবং মূল্যবোধের চর্চা আজ জরুরী হয়ে উঠেছে। শিশুকর্মী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের কথা আমরা বরাবরই বলে আসছি। তবে এটাই সব নয়। মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন আনার জন্য পথ খুঁজে বের করতে হবে। শিশু নির্যাতন রোধের উপায় খুঁজে বের করার জন্য সমাজের বিবেকবানদের সক্রিয় ও সোচ্চার হওয়া চাই।
×