ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফিউশনের নামে গানের বিকৃতি হচ্ছে ॥ অণিমা মুক্তি গমেজ

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ফিউশনের নামে গানের বিকৃতি হচ্ছে ॥ অণিমা মুক্তি গমেজ

সঙ্গীতশিল্পী অণিমা মুক্তি গমেজ। সঙ্গীত সাধনাই যার জীবনের ব্রত। রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে পথচলা শুরু হলেও পল্লিগীতিকে পাথেয় করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছুটে চলেছেন অবিরাম। সাধিত চর্চায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গানকে অনায়াসেই নিজের কণ্ঠে তুলে নেন এই শিল্পী। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। সম্প্রতি পেয়েছেন অনন্যা পুরস্কার। মাছরাঙা টেলিভিশনের ম্যাজিক বাউলিয়ানার বিচারক হয়ে লোকশিল্পী প্রতিভা অন্বেষনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এ সব কিছু নিয়ে গুণী এ শিল্পীর সঙ্গে কথা হয়। অনন্যা পুরস্কার প্রাপ্তিতে আপনার অনুভূতি কি? অণিমা মুক্তি গমেজ: যে কোন কাজের স্বীকৃতিই আনন্দের। সে ছোট বা বড় হোক এতে কিছু এসে যায় না। অনন্যা পুরস্কার প্রাপ্তিতে আনন্দ এবং ভয় এ দুটোই আমার ভেতর কাজ করেছে। আমার ভেতর এক ধরণের দায়বন্ধতা তৈরি হয়েছে। আগামীতে এর চেয়ে বেটার কিছু করতে হবে আমাকে। এটা কতখানি করতে পারব এটাই আমার ভয়। ম্যাজিক বাউলিয়ানা সম্পর্কে কিছু বলুন। অণিমা মুক্তি গমেজ: এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের দেশের বাউল গান ও শিল্পী খুঁজে বের করা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য বাউল গান আছে, কিন্তু এগুলোর গীতিকার ও সুরকার সম্পর্কে অনেকে কিছুই জানে না। এছাড়া অনেক বাউল শিল্পী আছে তাদের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। এসব প্রতিভা খুঁজে এদের প্রমোট করার উদ্দেশ্যে মাছরাঙা টেলিভিশন ও মিডিয়া ডট কম এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। আমার সঙ্গে আরও বিচারক হিসেবে রয়েছেন লোকসঙ্গীত শিল্পী নাদিরা বেগম, আকরামুল ইসলাম ও বাউল শিল্পী আলম দেওয়ান। প্রাথমিক বাছাই চলছে, খুব শীঘ্রই মাছরাঙাতে প্রচার শুরু হবে। সঙ্গীত জীবনের প্রথম দিকের কথা বলুন। অণিমা মুক্তি গমেজ: মা, বাবা ও অন্যদের কাছে শুনেছি, আমি যখন কথা বলা শুরু করেছি, তখন থেকেই গান গাই। ঢাকার নবাব গঞ্জের হাসনাবাদে সেন্ট ইউফ্রেজিস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রথম মঞ্চে গান গাই। তখন ওই স্কুলের শিক্ষীকা মায়া গাঙ্গুলী আমার গান শুনে, আমাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখাতে শুরু করেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে আমার যাত্রা শুরু হয়। তারপর থেকে কলেজ পর্যন্ত আমি কখনও প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হইনি। পল্লিগীতির দিকে ঝুঁকলেন কিভাবে? অণিমা মুক্তি গমেজ: প্রথম দিকে আমি সব ধরনের গান করতাম। ঢাকার লাল মাটিয়া কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সেখানেও প্রতিযোগিতায় প্রথম হলাম। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হলাম। শিল্পী নীনা হামিদের গান আমার খুব পছন্দ। ওনার কাছে তিন মাস গান শেখার সুযোগও হয়েছিল। আমি শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর কাছেও পল্লিগীতি শিখেছি। এভাবেই লোকসঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হতে লাগল। মৃদঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম। শিল্পকলা একাডেমিতে ১৯৯৬ সালে ‘রূপবান’ নৃত্যনাট্যে আমি প্রায় ২০টি গান করি। সেদিন থেকে অনেকের চোখে পড়ে যাই। আপনার এ্যালবাম সম্পর্কে বলুন। অণিমা মুক্তি গমেজ: একক, মিক্সড মিলে এ পর্যন্ত সাতটি এ্যালবামে গান করেছি। এর মধ্যে আবুবকর সিদ্দিকের সঙ্গে ‘ইছামতীর তীরে’ ও ‘এত রাতে কেন ডাক দিলি’ এবং ২০০১ সালে ‘অপার হয়ে বসে আছি’ নামে আমার একক এ্যলবাম খুবই শ্রোতাপ্রিয় হয়। ২০০২ সালে প্রকাশ হয় আমার একক এ্যালবাম ‘সাগর কূলের নাইয়া’, একই বছর বের হয় ‘মনের মানুষ’, ২০১২ সালে ‘বন্ধু দয়াময়’ এবং ২০১৪ সালে ‘উজান দেশের মাঝি’। আমাদের দেশের পল্লিগীতির বর্তমান অবস্থা কেমন ? অণিমা মুক্তি গমেজ: এখন অনেক ভাল অবস্থানে আমাদের দেশের পল্লিগীতি। আমার শুরুতে এমন ছিল না। তখন অনেক তাচ্ছিল্য করা হতো এ গানকে। এখন টিভি বা বিভিন্ন জায়গায় এ গানকে এনজয় করছে মানুষ। কিন্তু যাদের কাছে গান শিখেছি, তাদের কালজয়ী গানগুলো ফিউশন করার নামে এখন বিকৃত করা হচ্ছে। এর ফলে আসল গানটাই চেনা যাচ্ছে না। সঙ্গীত নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কি? অণিমা মুক্তি গমেজ: শুদ্ধভাবে লোকসঙ্গীত প্রচার করার চেষ্টা করব। আমার চেষ্টা থাকবে লোকসঙ্গীতের আসল চেহারা সবার কাছে তুলে ধরা। ইতোমধ্যে এ গান নিয়ে গবেষণা শুরু করেছি। নতুন প্রজন্মের কাছে লোকসঙ্গীতের সঠিক রূপটি তুলে ধরতে চাই। -গৌতম পাণ্ডে
×