ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আস্থা ফিরেছে ব্যাংকিং খাতে

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আস্থা ফিরেছে ব্যাংকিং খাতে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের অর্থ লুট, ঋণ বিতরণে অগ্রণী ব্যাংকের নানা অনিয়ম এবং সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিশাল অঙ্কের চুরির ঘটনায় দেশের ব্যাংকিং খাত ঝুঁকিতে পড়েছিল। কিন্তু সেই ধাক্কা সামলে আস্থা ফিরেছে ব্যাংকিং খাতে। একই সঙ্গে এই খাতের সক্ষমতাও আগের থেকে অনেক বেশি বেড়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, ‘অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারণেই বর্তমানে আমাদের আর্থিক স্বাস্থ্য অনেক ভালভাবে পরিচালিত হচ্ছে’। অর্থমন্ত্রীর কথার মিল পাওয়া গেছে অনেক আগেই। ব্যাংকিং খাতকে সচল ও স্বচ্ছ রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের অনিয়মের ঘটনায় অপসারণ করেছিল ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে। এছাড়া দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আবদুল হামিদকেও অপসারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি শক্ত অবস্থানও বলা চলে। অর্থনীতিবিদদের মতে, স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে এবং এর সুফল হিসেবে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে জনগণের মাঝে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। রেমিটেন্স বাড়তে শুরু করেছে এবং সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কার, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নজর দেয়া হয়েছে এবং কোথায় কী ধরনে দুর্বলতা আছে, ত্রুটি আছে, শর্ট কামিং আছে সকল কিছু চিহ্নিত করা হয়েছে ও সেগুলোকে ঠিক করতে কাজও চলছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার (রিজার্ভ চুরি) পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য বিশ্বের সব থেকে উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (সঞ্চয়ন) ৩১ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। যা দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে, রফতানি আয় বৃদ্ধি ও রেমিটেন্স প্রবাহে স্থিতিশীল ধারা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে বড় অবদান রেখেছে। বিশ্লেষকরা জানান, ৩১ বিলিয়ন ডলারের এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতিমাসে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসেবে প্রায় ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, আইএমএফের নিয়ম অনুযায়ী অর্থনীতি সুস্থির রাখতে হলে যে কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ অর্থ মজুদ থাকা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী জানান, সময়োপযোগী বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ ব্যবস্থাপনার কারণে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যের দাম কম থাকায় পরিমাণের দিক দিয়ে আমদানি বাড়লেও বৈদেশিক মুদ্রার তুলনামূলক ব্যয় কম হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রফতানিতে ভাল প্রবৃদ্ধি আছে। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা নিয়মিত রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নতুন এ মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে বেসরকারী খাতকে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সাধুবাদ জানিয়েছে। তারা এবারের মুদ্রানীতিকে বিনিয়োগবান্ধব বলেও ঘোষণা করেছে। ব্যবসায়ীদের মতে, ঘোষিত মুদ্রানীতি পুরোটাই ব্যবসায়ীদের পক্ষে। কারণ বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ ধরলেও ১৭ শতাংশ অতিক্রম করব বলে আশা করা হচ্ছে।
×