ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিবিড় যোগাযোগ

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নিবিড় যোগাযোগ

গতিহীন ধারা থেকে বেরিয়ে এসে গতিময়তা তৈরি করা সহজসাধ্য নয় সর্বক্ষেত্রে। কাজে-কর্মে শ্লথ মনোভাবও আচরণ অদক্ষতারই পরিচায়ক। কর্মকুশলতার জন্য গতির পরিধি বাড়ানো না গেলে কুশলতা ধরা দেয় না। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারী কাজে গতি আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, এতকাল কাজে কোন গতি ছিল না। ছিল বুঝি অগতি। আসলে তা নয়, কর্ম ছিল, হয়ত ছিল না তাতে কুশলতা। যোগাযোগের ক্ষেত্র ছিল সীমিত। ফলে সবার সঙ্গে সবার যোগাযোগ হয়ে উঠত না। কাজের বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করা সময়সাপেক্ষ বলেই অনেক ক্ষেত্রে কাজ ঝুলে থাকে কিংবা সম্পন্ন হতে দীর্ঘমেয়াদ লেগে যায়। কিংবা যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। আর তা প্রকাশ হয়ে গেলে কখনও কখনও বিপর্যয় ঘটতে পারে। অনেক তথ্যই অনায়াসে হয়ে যায় ফাঁস। জানাজানি হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। এসব অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ ও পন্থা অবশেষে কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো সরকারী কাজে গতি আনার লক্ষ্যে উর্ধতন কর্মকর্তাদের আন্তঃযোগাযোগ সহজ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ফলে গোপনীয়তা রক্ষা করে সরকারী কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও ফাইল আদান-প্রদানে সক্ষম হবে। আলাপন নামক একটি মোবাইল এ্যাপ চালুর মাধ্যমে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তারা নিজেরা এই এ্যাপের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা চালাতে পারবেন দাফতরিক বিষয়াদিতে। এই পদ্ধতি অনেকটা ভাইবারের মতো। এই এ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই সরকারের নানা নির্দেশনা প্রত্যন্ত এলাকার কর্মীদের কাছে পৌঁছানো যাবে। এতে কাজের গতি যেমন বাড়বে, তেমনি সময়ক্ষেপণ আর হবে না। আলাপন এ্যাপ চালু হওয়ার পর থেকে সরকারী উর্ধতন কর্মকর্তারা ইন্টারনেটে সার্বক্ষণিক একে অন্যের সঙ্গে এনক্রিপ্টেড চ্যানেলে যোগাযোগ করতে পারবেন কথা বলার পাশাপাশি। এই আলাপনের মাধ্যমে সরকারের যে কোন কর্মকর্তা যে কোন স্থান থেকে একক বা গোষ্ঠীগত চ্যাটিং ভয়েস ও ভিডিও কল গ্রুপ কনফারেন্স ছাড়াও নথি আদান-প্রদান করতে পারবেন। সেই সঙ্গে কর্মকর্তার অবস্থানও জানা যাবে। বার্তা আদান-প্রদানের সুযোগও তারা পাবেন। বলা হচ্ছে, তা সরকারী কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরকারী সেবার মান বাড়াতে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কর্মকর্তারা নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও পে-স্কেলে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে বিনামূল্যে এ্যাপটি ডাউনলোভ করতে পারবেন। আলাপন এ্যাপের এ্যাডভান্সড সার্চ অপশনে গিয়ে যে কোন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন যে কোন কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরও সংগ্রহ করা যাবে। দেখা গেছে, সরকারী কর্মকর্তাদের আন্তঃযোগাযোগের মাধ্যমে নিরাপত্তা বিঘিœত হয়। তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। টেলিফোনে আড়িপাতা হলে গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়। সেই নিরাপত্তা যাতে সহজেই কেউ বিঘিœত করতে না পারে সেই জন্য এই এ্যাপে আধুনিক সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে। এই ধরনের অন্যান্য এ্যাপের চেয়ে আলাপনে কম ব্যান্ড উইথ কম চার্জ ও কম স্পেসের প্রয়োজন হবে বলে এটাকে অনন্য এ্যাপ বলা হচ্ছে। এই এ্যাপ ব্যবহারে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া অন্য কোন খরচ না হওয়ায় সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে ফোন খাতে সরকারী দফতরগুলোতে বিপুল অঙ্কের যে অর্থ ব্যয় হয়ে আসছে, তাতে এই পদ্ধতি সেই ব্যয় নামমাত্র হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে এই এ্যাপ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে ১৪ লাখ সরকারী কর্মকর্তা উপকৃত হবেন। এর ইতিবাচক দিক অনেক। তবে নেতিবাচক দিক বর্জন করা হবে নিশ্চয়। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে হয়।
×