ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ফের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভ্রূকুটি উপেক্ষা উঃ কোরিয়ার

পঞ্চম পরমাণু পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পঞ্চম পরমাণু পরীক্ষা

উত্তর কোরিয়া শুক্রবার পঞ্চমবারের মতো পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছে। সর্বশেষ এই পরীক্ষা আগেরবারের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী বলে জানা গেছে। দক্ষিণ কোরিয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় একে ‘চরম দায়িত্ব জ্ঞানহীন’ বলে অভিহিত করেছে। এই পরীক্ষা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবেরও লঙ্ঘন বলে সিউল মন্তব্য করেছে। খবর সিএনএন, বিবিসি ও এএফপি অনলাইনের। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল নয়টার দিকে পরিচালিত এ পরীক্ষার কম্পনমাত্রা ছিল ৫.৩। উত্তর কোরিয়ার কিলজু কাউন্টির পুঞ্জিরাই’য়ের কাছে পরমাণু পরীক্ষাটি চালানো হয়। ইতোপূর্বে পরিচালিত চারটি পরীক্ষাও করা হয়েছিল ওই এলাকার আশপাশে। বিস্ফোরণের ক্ষমতা ছিল ১০ কিলোটন, যা এ বছর জানুয়ারিতে করা হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার প্রায় দ্বিগুণ। দক্ষিণ কোরিয়ার আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তা কিম ন্যাম উক একথা বলেছেন। দক্ষিণ কেরিয়ার সেনাবাহিনীপ্রধান জানিয়েছেন, তারা সর্বশেষ এ পরীক্ষার শক্তিমাত্রা পরীক্ষা করে দেখছেন। এর আগে পিয়ংইয়ং এ বছর জানুয়ারিতে হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষার দাবি করলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকে এর সত্যতার বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় যে বোমা ফেলেছিল তার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ছিল ১৫ কিলোটন। দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ পর্যায় থেকে এ খবর পাওয়া গেলেও উত্তর কোরিয়া পরীক্ষার বিষয়ে কিছু বলেনি। শুক্রবার ছিল উত্তর কোরিয়ার জাতীয় দিবস। বর্তমান শাসকবর্গ দিনটি ঘটা করে পালন করে থাকে। উত্তর কোরিয়া প্রায়শ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসকে সামরিক শক্তিমত্তা জারির সুযোগ হিসেবে নিয়ে থাকে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জুন হি কঠোর ভাষায় উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই পরমাণু পরীক্ষার থেকে কিম জং উনের সরকার একমাত্র যা পেতে পারে তা হলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আরও বেশি নিষেধাজ্ঞা ও বহির্বিশ্ব থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়া যদি আসলেই পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে থাকে তবে আমরা সেটি মেনে নেব না।’ এ বিষয়ে মিত্র দেশগুলোর যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে টোকিও জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ‘ভূকম্পনের ধরনটি স্বাভাবিক ভূমিকম্পের চেয়ে অন্যরকম ছিল। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপও পুঞ্জিরাই’য়ের কাছে বিস্ফোরণজনিত কারণে ভূকম্পনের খবরটি নিশ্চিত করেছে। কি ধরনের বিস্ফোরণের ফলে এরকম কম্পন হয়ে থাকতে পারে তা অবশ্য মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ নিশ্চিত হতে পারেনি। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি পরমাণু অথবা অন্য যে কোন ধরনের বিস্ফোরণের ফলে হতে পারে। পিয়ংইয়ং যে পরমাণু পরীক্ষার মতো কিছু একটা কাজ করতে যাচ্ছে উপগ্রহ থেকে পাওয়া সর্ব সাম্প্রতিক চিত্রগুলো থেকেও সে রকম ধারণা পাওয়া যায়। জাতিসংঘ প্রস্তাব অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার জন্য পরমাণু অথবা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশটি প্রায় নিয়মিতভাবেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে থাকে। জবাবে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয় কিন্তু তা দেশটিকে পরমাণু অথবা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো থেকে বিরত রাখতে কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যূহ স্থাপনের পরিকল্পনার উদ্যোগ সম্প্রতি পিয়ংইয়ংকে প্রচ- ক্ষুব্ধ করেছে। কেবল উত্তর কোরিয়াই নয় চীনও ওই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। যদিও বেজিং উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষার সমালোচনা করেছে। জি-২০ ও আসিয়ান সম্মেলন উপলক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চীন ও লাওস সফর করার পরপরই উত্তর কোরিয়া এই পরীক্ষা চালাল। গত ৬ জানুয়ারি চতুর্থ পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এর আগে ২০০৬, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে তিন দফায় পারমাণবিক অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায় পিয়ংইয়ং।
×