ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জি-২০ সম্মেলন ঘিরে মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা

সতর্ক অবস্থানে চীন

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সতর্ক অবস্থানে চীন

জি-২০ নেতৃবৃন্দ রবিবার চীনের অবকাশ শহর হাংঝুতে শীর্ষ সম্মেলন শুরু করেছেন। এ সম্মেলনে বিশ্ব অর্থনৈতিক স্থবিরতার বিষয়টি প্রাধান্য পেলেও বিশ্বায়নবিরোধী ক্ষোভ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সীমান্ত বিরোধের বিষয়গুলো উঠে আসে। খবর এএফপির। সম্মেলনের শুরুতে শনিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং তার মার্কিন প্রতিপক্ষ বারাক ওবামা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুমোদন করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন জিনপিং ও ওবামার কাছ থেকে অনুমোদিত কপি গ্রহণ করে ‘ঐতিহাাসিক পদক্ষেপ’ গ্রহণের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান। মুন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। তিনি অন্যান্য জি-২০ নেতৃবৃন্দকে এই উচ্চাভিলাষী উদাহরণ অনুসরণ করার আহ্বান জানান। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের সম্মেলনে চীন যে ফলাফল আশা করছে বাস্তবে সেটি নাও অর্জিত হতে পারে। কারণ দক্ষিণ চীন সাগরে বেজিংয়ের সামরিক অভিলাস থেকে শুরু করে সিরিয়া যুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যু উঠে আসতে পারে যা স্বাগতিক দেশ হিসেবে চীনের জন্য স্বস্তিকর হবে না। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগর প্রসঙ্গটি আলোচনায় যেন না আসে সেজন্য বেজিং বিশেষভাবে সতর্ক রয়েছে। সাগরের ওই বিতর্কিত জলসীমায় প্রবাল প্রাচীরের ওপর কংক্রিট ফেলে কৃত্রিমভাবে দ্বীপ তৈরি করে চীন সেখানে সামরিক স্থাপনা বসিয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী প্রায় সবগুলো দেশের সঙ্গেই সীমান্ত নিয়ে চীনের বিরোধ রয়েছে। ফিলিপিন্সের সঙ্গে চীনের জলসীমা নিয়ে বিতর্কে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত সম্প্রতি ফিলিপিন্সের পক্ষে রুলিং দিয়েছে। বেজিং এখনও সেই রুলিং মেনে নেয়নি। শনিবার জিনপিং ও ওবামার বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য ওবামা জিনপিংয়ের প্রতি আহ্বান জানান। ওবামা বলেন, সাগরের আন্তর্জাতিক সীমানায় নৌ চলাচলের বৈধ অধিকার নিশ্চিত করতে চীনের তৈরি করা কৃত্রিম দ্বীপের কাছে যুক্তরাষ্ট্র নৌ টহল অব্যাহত রাখবে। এছাড়া সাইবার সিকিউরিটি প্রসঙ্গটিও আসে ওবামার বক্তব্যে। এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গঠনমূলক ভূমিকা পালনের জন্য জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। বিতর্কিত বিষয় উত্থাপিত হলেও সংঘাত এড়াতে উভয় তরফের চেষ্টা ছিল লক্ষণীয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটি ওবামার শেষ জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ। তাই দ্বন্দ্বমুখর পরিবেশ তৈরি না করে ইতিবাচক ভাবমূর্তি বজায় রাখার আগ্রহ ওবামার নিজের পক্ষ থেকেও ছিল। জিনপিং ছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র সঙ্গে বৈঠক করেছেন ওবামা। এ বৈঠকে ওবামা ব্রিটেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। হাংঝু সম্মেলনের পাশাপাশি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গেও আলোচনা হবে। এই আলোচনায় সিরিয়া প্রসঙ্গ প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের সঙ্গেও বৈঠক করবেন ওবামা। চীন আশা করছে জি-২০ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে দ্বিতীয় শক্তিধর দেশ হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। সম্মেলন উপলক্ষে শহরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। শহরের বাসিন্দাদের বিনামূল্যে বাইরে গিয়ে অবকাশ কাটিয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। বেশ কিছু ভিন্ন মতাবলম্বীকে আটক করা হয়। সব অফিস, কারখানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শহরের রাস্তাগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে প্রধান বৈশ্বিক সমস্যাগুলো সমাধানে জি-২০ নেতৃবৃন্দ খুব বেশি কিছু করার সামর্থ্য রাখেন না বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বিশ্ব এখন নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার মতো অশুভ চক্রের মুখোমুখি বলে গত সপ্তাহে আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ সমস্যা রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
×