ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনাবাসী হতাশ

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৭ আগস্ট ২০১৬

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ জাতীয় সংসদে ‘খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ বিল পাস হওয়ার এক বছর পরেও এই বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। এখনও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেয়া হয়নি। প্রকল্প অফিস নেয়া হয়নি। বিলটি জাতীয় সংসদে পাস হলে খুলনার বিভিন্ন স্তরের মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। খুলনাবাসী আশা করেছিল শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও পিডি নিয়োগ ও প্রকল্প অফিস না নেয়ায় খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে খুলনাবাসী হতাশ হয়ে পড়ছে। নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য এই দীর্ঘসূত্রতা, নাকি অদৃশ্য কোন শক্তি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। খুলনাবাসী এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৫ মার্চ খুলনার খালিশপুরে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনায় কয়েকটি স্কুল-কলেজ সরকারীকরণ, একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ২০১১ সালের ২৪ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক খুলনায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র বর্তমানে বাগেরহাটের রামপাল-মংলা আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেককে প্রধান করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। সরেজমিন পরিদর্শন করে কমিটির সদস্যরা নগরীর দৌলতপুরে সাতক্ষীরা সড়কের পাশে অবস্থিত কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (এটিআই) অব্যবহৃত ৫০ একর জমি এবং পাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন ১২ একর জমি নিয়ে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য স্থান নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে এ ব্যাপারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় একটি প্রশাসনিক ভবন, দুটি একাডেমিক ভবন, দুটি ছাত্রাবাস, একটি ডরমেটরি মেডিক্যাল সেন্টার, টিএসসি, ক্যাফেটেরিয়া, মসজিদ ও একটি অতিথি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক দৌলতপুরে কৃষি সম্প্রসারণ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের জায়গায় খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু তারপর থেকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রকল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ১৯ মে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ৫ জুলাই জাতীয় সংসদে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিলটি পাস হয়। সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জাতীয় সংসদে ‘খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ বিল পাসের জন্য প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, চ্যান্সেলর, ভাইস-চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, সিন্ডিকেট ও কাউন্সিল সদস্য নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা, শিক্ষাদান, মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব, ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরসহ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং ক্ষমতা ও দায়িত্বসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়। বিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অনুষদ, বিভাগ, অর্থ কমিটি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি, বাছাই কমিটি, পাঠক্রম কমিটি, ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি ও সংবিধান অনুযায়ী অন্যান্য কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান করা হয়। জাতীয় সংসদে খুলনা কৃষি কিশ্ববিদ্যালয় বিল পাসের এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বাস্তবে কোন অগ্রগতি দেখতে না পাওয়ায় খুলনাবাসীর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। জেনে তিনি বলতে পারবেন। কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই), দৌলতপুর, খুলনার অধ্যক্ষ কৃষিবিদ অতুল কৃষ্ণ ম-ল বলেন, এখন পর্যন্ত তাদের কিছু জানানো হয়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি এই প্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারি সীমার বাইরে প্রতিষ্ঠানটির যে জমি রয়েছে সেখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ওই প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ শেখ মোঃ শহীদুজ্জামান বলেন, তিনিও কিছু জানেন না। সরকারী জমি সরকার নিয়ে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান করবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। মোঃ শহিদুল নামের স্থানীয় এক ছাত্র জানান, এলাকাটি নগরীর গাইকুড়ের মধ্যে দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে অবস্থিত। এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যে তোরজোর দেখা গিয়েছিল এখন তা নেই। ব্যক্তি মালিকানার যে জমি অধিগ্রহণের কথা শুনেছিলাম তার বিরুদ্ধে এলাকার কিছু মানুষ মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল। তারাও এখন চুপচাপ রয়েছে। এলাকাটির সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা সম্পের্কে তিনি কিছু জানেন কিনা একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে খুলনা মহানগর অওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খুলনা সদর আসনের এমপি আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান বলেন, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ থেকে শুরু করে প্রায় সকল প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন দরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য একজন পিডি নিয়োগ ও একটি প্রকল্প অফিস। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন। তিনি খুলনাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত সকল স্কুল-কলেজ ইতোমধ্যে জাতীয়করণ হয়েছে। প্রতিশ্রুতির বাইরেও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের পর্যায়ে রয়েছে। এ অঞ্চলের স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, বন্দরসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে এবং কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত খুলনা কৃষি বিশ্বদ্যিালয়ও হবে। তিনি এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। নাগরিক সংগঠন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরফ-উজ-জামান বলেন, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কোন অভাব আছে বলে মনে করি না। তার ধারণা, প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য বাস্তবায়ন কাজ থমকে আছে। এই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরাও এ ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলে তিনি মনে করেন। তিনি অবিলম্বে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরুর দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় উন্নয়ন কমিটি খুলনাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এই ইস্যুতে রাজপথে আন্দোলনে নামবে।
×