ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলেরা চায় যৌতুক মেয়েরা সংসার

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৩ আগস্ট ২০১৬

ছেলেরা চায় যৌতুক মেয়েরা সংসার

প্রেমের সম্পর্কে তিন বছর পূর্বে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা গ্রামের নিহার রঞ্জন শীলের ছেলে গোপাল শীলের সঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের খলিশাকোঠা গ্রামের বিনয় শীলের মেয়ে শিখা রানীর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই ব্যবসার কথা বলে গোপাল শীল ও তার পরিবার দু’লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে শিখা রানীর পরিবারের কাছে। ওই টাকার জন্য শিখাকে প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন করা হয়। মেয়ের সুখের জন্য দিনমজুর বাবা এক লাখ টাকা দেয়ার স্বীকারোক্তি করে। কিন্তু পুরো দুই লাখ টাকার জন্য গোপাল শীল ও তার পরিবার শিখাকে চাপ দেয়। শিখা অভাবী বাবার কাছ থেকে টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে গোপাল ও তার পরিবারের লোকজন শিখা রানীর হাত-পা পিছমোড়া করে বেঁধে অমানসিক নির্যাতন করে। শিখা রানীর কাকি কনক শীল জানান, হিন্দুধর্মের মধ্যে বিয়েবিচ্ছেদ নেই। তাই এতদিন নির্যাতন সহ্য করে শিখা তার স্বামীর বাড়িতে পড়েছিল। এ দুর্বলতার কারণে পাষ-রা তাদের নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। তিনি জানান, নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করার কয়েক মাস পর স্বামীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে শিখা রানী মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। গৃহবধূকে গরম আয়রনের ছ্যাঁকা ॥ এক লাখ টাকার জন্য গৃহবধূকে গরম আয়রন দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়ার ঘটনায় স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কয়েক মাস পরে নির্যাতিতা স্ত্রী মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার পর তারা জেল থেকে মুক্ত হয়। নগরীর কাউনিয়া থানার আমানতগঞ্জ এলাকার ঝাঁপ বস্তির হাবিব মোল্লার ছেলে খোকন মোল্লার সঙ্গে চার বছর পূর্বে সামাজিকভাবে বিয়ে হয় চরকনজী এলাকার কৃষক জালাল হাওলাদারের মেয়ে জোসনা বেগমের। তাদের সংসারে চার মাস বয়সের কন্যা সন্তানও রয়েছে। এরই মধ্যে খোকন ব্যবসার কথা বলে স্ত্রী জোসনাকে তার বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক আনার জন্য চাপ দেয়। গৃহবধূ জোসনা টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করায় প্রায়ই তার ওপর নির্যাতন করা হতো। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জোসনার পিঠে গরম আয়রন দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় জোসনা বেগমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। যৌতুক দিতে না পারায় এসিড ॥ দুই লাখ টাকা যৌতুক দিতে না পারায় বরিশালে বানারীপাড়া গুচ্ছগ্রামের স্বামী সামছুল হক হাওলাদার দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি নেয়। এ বিয়েতে বাধা দেয়ায় গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরের বেড়া ভেঙ্গে গৌরনদীর নলচিড়া ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর আউয়াল খলিফার মেয়ে পাঁচ সন্তানের জননী রিনা বেগমের ওপর এসিড নিক্ষেপ করে ঝলসে দেয়া হয়। এ ঘটনার সুস্থ হয়ে স্বেচ্ছায় রিনা বেগম তার স্বামীকে তালাক প্রদান করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে পাষ- সামছুল হক পলাতক রয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে অমানুষিক নির্যাতন ॥ যৌতুকের এক লাখ টাকা না পেয়ে গৌরনদী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে অমানসিক নির্যাতন করে বাবার বাড়িতে তাড়িয়ে দিয়েছে পাষ- স্বামী ও তার পরিবার। সরিকল ইউনিয়নের সাঁকোকাঠী গ্রামের হতদরিদ্র আক্কাস আকন জানান, আট বছর পূর্বে তার মেয়ে আকলিমা বেগমকে একই ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের আলী জমাদ্দারের ছেলে আলীমের সঙ্গে সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে আলীমকে নগদ এক লাখ টাকাসহ দু’লাখ টাকার মালামাল দেয়া হয়। আকলিমা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি ব্যবসা করার জন্য তার স্বামী ও তাদের পরিবার আরও এক লাখ টাকা যৌতুক আনার জন্য তাকে চাপ দেয়। এতে সে অস্বীকৃতি জানালে যৌতুকলোভী স্বামী, শাশুড়ি আমিরুন নেছা, ভাসুর আলামিন হাত-পা বেঁধে অমানসিক নির্যাতন করে সন্তানসহ তাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর বাবার বাড়িতে আকলিমার তিন মাস পূর্বে আরও একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। দীর্ঘদিনেও কোন খোঁজ না নেয়ায় আকলিমা বাদী হয়ে আদালতে স্বামী, শাশুড়ি ও ভাসুরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। স্বামীর পরিবারকে একঘরে ॥ প্রেম করে বিয়ে করার খেসারত দিতে হয়েছে আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ গৈলার বরইতলা গ্রামের আইউব আলী সরদারের মেয়ে মেনেছা বেগমকে। এককালের প্রেমিক পরবর্তীতে স্বামী ও তার পরিবারের দাবি এক লাখ টাকা যৌতুক দিতে না পারায় মেনেছার ওপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন। একপর্যায়ে শিশু কন্যাসহ মেনেছাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় সালিশ বৈঠকে মেনেছার যৌতুকলোভী স্বামী ও তার পরিবারকে সমাজপতিরা একঘরে করে রেখেছিলেন। তাতেও টনক নড়েনি পরিবারটির। উপায়ন্তুর না পেয়ে মেনেছা বেগম বাদী হয়ে আদালতে যৌতুকলোভী শামিম সরদার, তার বাবা রব সরদার, মা খাদিজা বেগম, ভাই ছিদ্দিক সরদারকে আসামি করে মামলা দায়েরও করেছিলেন। কয়েকদিন পর স্বামীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন আবেগী নারী মেনেছা বেগম। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে ॥ যৌতুকের এক লাখ টাকা দিতে না পারায় স্ত্রীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পর একমাত্র সন্তানসহ তাড়িয়ে দেয় স্বামী ও তার পরিবার। এরই মধ্যে প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে পাষ- স্বামী অরুন বিশ্বাস। ফলে একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন গৃহবধূ প্রিয়াংকা বাড়ৈ। ঘটনাটি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কারফা গ্রামের। তিন বছর পূর্বে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের আস্কর গ্রামের বাবলু বাড়ৈর মেয়ে প্রিয়াংকা বাড়ৈকে সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়া হয় কারফা গ্রামের ধীরেন বিশ্বাসের ছেলে অরুণ বিশ্বাসের সঙ্গে। Ñখোকন আহমেদ হীরা, বরিশাল থেকে
×