ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা গাফিলতি ও দুর্নীতি মূল কারণ

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি আদৌ চালু হবে কি?

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৪ আগস্ট ২০১৬

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি আদৌ চালু হবে কি?

শ.আ.ম হায়দার, পার্বতীপুর ॥ মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ। এখন পর্যন্ত খনি চালুর আলামত দেখা যায় না। কতদিনে খনি চালু হবে নাকি আদৌ হবে না এ ব্যাপারে খোদ কর্তৃপক্ষরাই সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। খনি চালু অবস্থায় ৩ সিফটে প্রতিদিন কঠিন শিলা উৎপাদন হতো গড়ে সাড়ে ৪ হাজার মে.টন। এ হিসেবে প্রতিদিন সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মতো। এছাড়াও খনি বন্ধের কারণে ৮শ’ খনি শ্রমিক বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মধ্যপাড়া দেশের একমাত্র কঠিন শিলা খনি। জানা মতে, এ ধরনের মাইন পৃথিবীর কোথাও নেই। সম্ভাবনাময় উৎপাদনশীল ও লাভজনক এ খনির কেন এমন দুরাবস্থা সে ব্যাপারে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে যে তথ্য পাওয়া যায় তা অত্যন্ত ভয়াবহ। সূত্রমতে, খনি চালুর লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বরে কর্তৃপক্ষ বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য উৎপাদন কাজে নিয়োজিত জিটিসির (জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোটিয়াম) অনুকূলে প্রায় ১শ’ কোটি টাকার ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়। উৎপাদন কাজে প্রধান সহায়ক রেইজ বোরিং মেশিনসহ বেশ কিছু যন্ত্রপাতি এরিই মধ্যে বিদেশ থেকে এসে পড়ে আছে খনিতে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কাজ শুরু হয়নি। কারণ জিঙ্গেস করলে ‘খনি কর্তৃপক্ষ জানান, একাধিকবার সময় নিয়েও তারা কাজ শুরু করতে পারেনি। তাদের মূল সমস্যা দুর্বল পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় খাতে বিনিয়োগ না করা। তবে জিটিসির জিএম জামিল আহমেদ জানান, যাবতীয় ঝামেলা, সমস্যা ও অনিশ্চয়তা আমরা কেটে উঠতে সক্ষম হয়েছি। ইতোমধ্যেই মেশিনপত্র প্রায় সবই চলে এসেছে খনি সাইডে। চালুর পূর্বে মেশিনপত্র ইনস্টেলেশন করতে হয়। এই কাজটি এখন হচ্ছে। যা খনি কর্তৃপক্ষকে গত জানুযারি মাসে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। তবে জিটিসির অভিযোগ তাদের ৪৮ কোটি টাকার পেইনডিং বিল খনি কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করছে না। কারণ জানতে চাইলে খনির জেনারেল ম্যানেজার মীর আব্দুল হান্নান জানান, এক বছর আগে টেকনিক্যাল মোটিভিশন কাজের জন্য শুধু ডিজাইন দাখিল করে তারা ৬ মিলিয়ন ডলার (৪৮ কোটি টাকা) দাবি করে। চুক্তিতে বলা আছে আগে কাজ সম্পন্ন করে বিলসহ আবেদন করতে হবে। সেটি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বিল দেয়া হবে। চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ার কারণেই তারা বিল পায়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে জিটিসি খনি রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন কাজের দায়িত্ব নিয়ে ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শিলা উৎপাদন শুরু করে। প্রথম কিছুদিন ঠিকঠাক চলার শুরু হয় খনিতে কর্মরত সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সঙ্গে জিটিসির দেখা দেয় বিরোধ, সমন্বয়হীনতা। অবস্থা এমন পর্যায়ে যায়, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে প্রতিপক্ষ চিহ্নিত করে পত্রপত্রিকায় স্টেটমেন্ট, বিবৃতি দেয়া শুরু করে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট খনি কর্মকর্তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেয়া ও তদারকির ক্ষেত্রে ছিল উদাসিন। কতক ক্ষেত্রে দায়িত্বরত অফিসাররা কঠিন শিলার মালিক সেজে বসে। সব কিছু করে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো। এসব কারণে মাঝপথে চালু খনির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। খনি সূত্রমতে, প্রডাকশন ও উন্নয়ন ১১২, এডভ্যান্স পেমেন্ট ৭.৮২, মোবিলাইজেশন ৮, কনস্টাকশন ও রিনোভেশন ১৬ , ইকুপমেন্ট ক্রয় বাবদ ১৪ কোটিসহ অন্যান্য খাতে মিলে জিটিসিকে ২৬০ কোটি টাকার ওপর প্রদান করা হয়। তবে ঠিকাদার শিলা উত্তোলন করে মাত্র ১৭০ কোটি টাকার। উৎপাদিত শিলার মূল্যের চেয়ে তাদের ৯০ কোটি বেশি টাকা দেয়া হয়। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়াই এই অতিরিক্ত বিল প্রদান করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারপরও খনির উৎপাদন কেন বন্ধ সে ব্যাপারে খনির দায়িত্বপ্রাপ্তরা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। কারণ এ টাকা রাষ্ট্রের তথা জনগণের ট্যাক্সের, গৌরি সেনের নয়। বাংলাবান্দা সীমান্ত পথ দিয়ে পাথর আসা বন্ধ। সিলেটের পামাবিল সীমান্ত দিয়ে পূর্বের চেয়ে কম পাথর আসছে। এদিকে মধ্যপাড়ার খনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতীয় পাথরের মূল্য ৫০% বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে দেশের উন্নয়ন কাজে প্রয়োজনীয় পাথরের অভাবে ব্যবহারকারীরা চীন থাইল্যান্ড থেকে পাথর আমদানি করছেন। সব মিলে চারদিকে পাথরের হাহাকার অবস্থা। মধ্যপাড়ায় শিলার (পাথর) মজুদ শেষ। এখানে এসে চোখে পড়ে তলানীতে মাটিমিশ্রিত শিলা (পাথর) লেবার দ্বারা চালুনীতে ছেকে ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। অচিরেই খনি চালুর দাবিতে আন্দোলন সংগ্রামে মধ্যপাড়া সরব হয়ে উঠেছে। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের বিশিষ্ট প্রবীণ নেতা শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে শ্রমিক সংগঠন, শুধীজন, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভার কর্মসূচী চলমান রয়েছে। কি কারণে খনি বন্ধ, এ ব্যাপারে কোন কোন কর্মকর্তা দায়ী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী ও এলাকার সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×