অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার। যা আগের অর্থবছরের একই সময় ছিল প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে গেল অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে ৪ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ায় সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ধার করেই প্রয়োজনীয় খরচ মেটাচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে অব্যাহতভাবে আমানতের সুদের হার হ্রাস এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে একটু বেশি লাভের আশায় সবাই ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। এ থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ এবং মেয়াদ পূর্তির পর আসল শোধ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। এ হিসাবে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার। মূলত প্রতিদিন যে টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় তা থেকে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট বিক্রি বলে হিসাব করা হয়। সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। গত তিন বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ব্যাপক উলম্ফন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যাংক ব্যবস্থায় আমানতের ওপর সুদহার অনেক কমে ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে টাকা রাখার পরিবর্তে বাড়তি মুনাফার আশায় জাতীয় সঞ্চয়পত্র প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। এখানে বিনিয়োগ করে দ্বিগুণ মুনাফা পাচ্ছে তারা। সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ ঝুঁকি বিবেচনায় সরকার বিশেষ এ প্রকল্প চালু রেখেছে। যদিও প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদহার থাকায় ব্যাংক খাত বিশ্লেষকরা নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকেন। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে এই লক্ষ্য ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিক্রি বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে তা প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি তার চেয়েও ৫ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা বেড়ে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকায় পৌঁছায়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার উল্লেখযোগ্য অংশ সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে খরচ হবে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়।