ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘জঙ্গী, সন্ত্রাস মোকাবেলায় করণীয়’ শীর্ষক আওয়ামী লীগের আলোচনা

পীর, মাশায়েখ, আলেম ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সেল গঠনের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩১ জুলাই ২০১৬

পীর, মাশায়েখ, আলেম ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সেল গঠনের আহ্বান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ পবিত্র ইসলাম শান্তির ধর্ম। ধর্মের নামে জঙ্গীবাদী কর্মকা- ইসলাম সমর্থন করে না। শুধু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচার করলে হবে না। এ জন্য দেশবরণ্যে পীর, মাশায়েখ, আলেম ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে আলাদা সেল গঠন করতে হবে। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপপরিষদের আয়োজনে ‘ইসলামের আলোকে জঙ্গী ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, জঙ্গীবাদ ইস্যুটি বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে বেশি প্রচার করা হচ্ছে, কারণ এর পেছনে রাজনৈতিক যোগ-বিয়োগ আছে। যারা রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পাবে তারাই এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে। তাই জামায়াত-শিবিরকে প্রতিষ্ঠিত ও তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুরক্ষিত রেখে এবং তাদের সঙ্গে দোস্তি করে- জঙ্গীবাদকে প্রতিরোধ করা যাবে না। কারণ জঙ্গীবাদের সামনে-পেছনে রয়েছে এই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। আওয়ামী লীগের প্রচার উপকমিটির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জমিয়তুল ওলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রধান ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মেছবাহুর রহমান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার গোলাম মাওলা নক্সবন্দী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, ইসলামী ফ্রন্টের সৈয়দ বাহাদুর শাহ নক্সাবন্দী, ইসলামী আরবী বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আহসান উল্লাহ, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। সভাপতির বক্তব্য এইচটি ইমাম বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে যেভাবে আমরা জনযুদ্ধে পরিণত করতে পেরেছি, ঠিক তেমনিভাবে আমাদের আরেকটি জনযুদ্ধ করতে হবে। এই জনযুদ্ধে যদি সকলে শামিল হয় তাহলে অবশ্যই এসব জঙ্গীদের পরাজিত করতে পারব। যদি আমরা সকলেই এই জনযুদ্ধে শামিল হই তবেই আমাদের বিজয় হবে। তিনি বলেন, জনগণের শক্তিই বড় শক্তি। জনগণের শক্তি দিয়ে যেমনভাবে বিএনপি-জামায়াতের একশ’ দিনের জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করেছিলাম, তেমনি জনগণের শক্তি দিয়ে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসকে নির্মূল করব। বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান কখনও মনে-প্রাণে বাংলাদেশকে এখনও মেনে নেয়নি। সেই জিনিসটা এখন আরও প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। তাদের পার্লামেন্টে একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আর তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এই দেশে (বাংলাদেশে) কারা কথা বলছেন? এগুলোর মিল খুঁজলেই জঙ্গীবাদের সূত্র পাওয়া যায়। তিনি বলেন, জঙ্গীদের লক্ষ্য হচ্ছে অরাজকতা সৃষ্টি করে তোলপাড় করা। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে আন্তর্জাতিক জঙ্গীর তকমার ছাপ মারা। আর সবগুলোর ক্ষেত্রে একটি নাম ‘আইএস’ ব্যবহার করা। তাই বাংলাদেশ থেকে মওদুদীবাদীদের উৎখাত করতে না পারি, জঙ্গীবাদ উৎখাতে এদের শিক্ষা বন্ধ করতে না পারিÑ তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। একাজে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার জন্য ইসলামী চিন্তাবিদদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি। আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ইসলাম আত্মঘাতী হওয়া জঘন্য অপরাধ। মদ খেয়ে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে তার জানাজা পড়া যাবে, কিন্তু যারা ইসলামের নাম করে আত্মঘাতী হামলা করে মৃত্যুবরণ করে তাদের জানাজা পড়াও জায়েজ হবে না। বাংলাদেশে এসব জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সচেতন ও সতর্ক করতে দেশের আলেম সামাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আর সরকারের উচিত হবে ইসলামী ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি এ দেশের আলেম সমাজকে নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করা। প্রয়োজনে আলাদা একটা সেলও গঠন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, পাকিস্তান ও ইসলাম রক্ষার নামে মওদুদীর চিন্তায় গড়া নিজামী-মুজাহিদদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে নিষ্ঠুরতা আমরা দেখেছি তা আজকের আইএসের হত্যানিষ্ঠুরতাকেও হার মানায়। মূলত জামায়াত-শিবিরই এদেশে আইএসের প্রক্সি দিচ্ছে। জামায়াতকে মরা ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, ইঁদুর না সরিয়ে হাজার বালতি পানি তুললেও যেমন কূপ পবিত্র হয় না তেমনি জামায়াত নিষিদ্ধ না করে হাজার চেষ্টা করেও জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়া অসম্ভব। তিনি এইচটি ইমামের কাছে প্রশ্ন রাখেন, জামায়াত নিষিদ্ধ করতে লজ্জা পাচ্ছেন কেন? জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে তো যুুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ তো রয়েছে। তবে লজ্জা কিসের? ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মেছবাহুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। এখন সজাগ থাকতে হবে। জামায়াত বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বের শত্রু। পাকিস্তানে তাদের হেড অফিস। জামায়াতকে জীবিত রেখে সন্ত্রাস মোকাবেলা সম্ভব নয়। সবার আগে তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে হবে। এই মুহূর্তে আলেম ওলামাদের নিয়ে জঙ্গীবিরোধী সেল গঠন করতে হবে। যাতে আলেম ওলামা, শিক্ষক সাংস্কৃতিক ব্যক্তি বুদ্ধিজীবীরা থাকবেন। যারা নতুন নতুন যেসব সাহিত্য আসছে সেগুলো সম্পর্কে সরকারকে জানাতে পারত। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, পবিত্র ইসলাম জঙ্গীবাদের সমর্থন করে না। যারা ইসলামের অপব্যখ্যা দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কে সুন্নী, কে কওমী এটা এখন দেখার বিষয় নয়। স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের বিশ্বাসী সব আলেম-ওলামাকে একত্রিত হতে হবে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। শুধু ইসলামী ফাউন্ডেশনের খুতবা দিয়ে জঙ্গীবিরোধী প্রচার চালালে কাজে আসবে না। এজন্য প্রয়োজন আলেম, ওলামাদের নিয়ে জঙ্গীবিরোধী আলাদা একটি সেল গঠনের। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর দিকনিদের্শনা চাই। অধ্যাপক আকতারুজ্জাামন বলেন, আজকে টার্গেট গ্রুপ কারা হচ্ছে? এদের চিহ্নিত করে সচেতন করতে হবে। একটি বড় গোষ্ঠী আছে, যারা ঢাকায় এসে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে কোরআন পুড়িয়েছিল, হাজার হাজার গাছ কেটেছিল, তারা এখন নিশ্চুপ কেন? জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের মুখ খোলা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের দায়িত্ব যে ছাত্রটিকে আপনি ভর্তি করালেন, সে কোথায় যায়, কী করে, কতদিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। সে ব্যাপারে খোঁজ নেয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার যথাযথ কারণ আছে কিনা, সে ব্যাপারে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
×