ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

হ্রাস পাবে শুল্ক ফাঁকি

পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট চালু হচ্ছে দেশে

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২১ জুলাই ২০১৬

পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট চালু হচ্ছে দেশে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমদানি করা পণ্য খালাসের পর নিরীক্ষা বা পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট (পিসিএ) করতে সরাসরি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে যাবেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তারা। চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে এ অডিট শুরু করবেন তারা। ফলে পণ্যজট সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ অনেক কমে যাবে বলে ধারণা করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, পণ্যের চালান খালাসের পর পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট বা পিসিএ করা হয়। খালাসোত্তর পণ্য নিরীক্ষার প্রাথমিক তালিকায় ২০টি প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের আওতায় আমদানি পণ্য দ্রুত ছাড়করণে সুবিধা পান আমদানিকারকরা। বিশেষ প্রয়োজনে পণ্যের নিয়মিত পরীক্ষণ ছাড়াই খালাস পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত চালান ছাড় করেন তারা। এতে আমদানিকারকদের দুই থেকে তিন দিন সময় বেঁচে যায়। তবে এ সুযোগে অনেকেই শুল্ক ফাঁকি দেন। পিসিএ করা হলে শুল্ক ফাঁকি দেয়া যাবে না। আমদানি নথি পর্যবেক্ষণ করে খালাস নেয়া চালানে অনিয়ম বা অসঙ্গতি পেলে পিসিএর মাধ্যমে ফাঁকি দেয়া রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তত্ত্বাবধানে গত ১৩ জুলাই থেকে পিসিএ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেলে শেষ হওয়া প্রশিক্ষণে নির্ধারিত সংখ্যক কাস্টমস কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন। প্রাথমিক তালিকার অন্তর্ভুক্ত ২০ প্রতিষ্ঠানে পিসিএ করতে ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করবেন ১০ জন কাস্টমস কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের ৩ সহকারী কমিশনারÑ মুকিতুল হাসান, রেজাউল হক ও তপন কুমার চক্রবর্তীর নেতৃত্বে গ্রুপগুলোতে কাজ করবেন কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আবুল হাসেম, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ, অজয় কুমার রায়, রেদওয়ান উল্লাহ ভূঁইয়া, সামসাদ হোসাইন এবং হারাদন চন্দ্র পাল। এ তিনটি গ্রুপকে সমন্বয় করবেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্মকমিশনার মোহাম্মদ এখতেশামুল হক। কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, বুধবার থেকে দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে ‘সিস্টেম বেইজ নিরীক্ষা’। সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, চীন, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ২০১০ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম বন্দরে পিসিএ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে ২০১৪ সালের শেষের দিকে তা পুরোপুরি চালু হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্মকমিশনার মোহাম্মদ এহতেশামুল হক বলেন, সরাসরি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, আমদানিকৃত পণ্য কোথায় এবং কিভাবে ব্যবহার হচ্ছে, চালানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে নিরীক্ষা করা হবে। এ পদ্ধতিতে খালাসের পর রাজস্ব আদায়ের সুযোগ রয়েছে। তাই দ্রুত পণ্য ছাড়করণের হার বাড়বে। একইসঙ্গে ফাঁকিকৃত রাজস্ব আদায়ের হারও বাড়বে। বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশেই এ পদ্ধতিতে পিসিএ করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যমতে, সদ্যসমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত খালাস পরবর্তী নিরীক্ষার পর ২৪৭টি চালানে দাবিনামা জারি করা হয়েছে। এসব চালানের বিপরীতে রাজস্বের পরিমাণ প্রায় ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ৭৮টি চালান নিষ্পত্তি হওয়ায় প্রায় ১৫৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। বাকি ১৬৯টি দাবিনামার বিপরীতে আরও ২৩২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আদায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে। চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, সরাসরি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সিস্টেম বেইজ নিরীক্ষা পদ্ধতি সারাবিশ্বে চালু রয়েছে। আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো এটি করা হচ্ছে। সঠিকভাবে পরিচালনা হলে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা কমবে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার হোসেন আহমেদ বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো আমরাও পিসিএ শুরু করতে যাচ্ছি। এ আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগে যেসব ব্যবসায়ী সহযোগিতা করবেন, তাদের পণ্য দ্রুত খালাসে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ‘পাইলট’ অডিটের অংশ হিসেবে সব ধরনের পণ্য আমদানিকারী ২০টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে তালিকায় রাখা হয়েছে। এ তালিকায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও আছে। পর্যায়ক্রমে পিসিএর পরিসর আরও বাড়ানো হবে। তিনি জানান, সুষ্ঠু অডিট কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে প্রাথমিক তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানের নাম এই মুহূর্তে প্রকাশ করা হচ্ছে না। নাম প্রকাশ হয়ে গেলে তারা সতর্ক হয়ে যাবে; এতে অডিট কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে অডিটের চিঠি ইস্যু কার্যক্রম শুরু করেছি।
×