ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের লক্ষ্যে

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২০ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের লক্ষ্যে

শিক্ষাই আলো। কিন্তু সে আলো যদি না করে আলোকিত চারধার তবে অন্ধকারের সীমানা বিস্তৃত হতে থাকে। আবার জ্ঞানই আলো। তবে সে আলোর ঝর্র্ণাধারায় বেড়ে না ওঠে যদি আলোর অপর পিঠও তাহলে তো বিপদ নামে চারদিক থেকে। আর অন্ধকারের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হতে থাকে সব কিছু। শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো যদি প্রজ্বলিত না হয় শিক্ষার্থীর মন ও মানসিকতায়, জীবনচারণে, তবে আঁধারের যাত্রী হয়ে আরও ঘন অন্ধকারই ছড়াতে থাকবে। শিক্ষা মানুষের চেতনাকে প্রসারিত করে। জ্ঞান পূর্র্ণ করে প্রজ্ঞার ভা-ার। সুশিক্ষা যদি গ্রাস হয়ে যায় কুশিক্ষায় তবে বিড়ম্বনা বাড়ে। বিভেদ-বিরোধ বাড়তে থাকে। কুশিক্ষা আবহাওয়া, পরিবেশ, মানবজীবনকে বিষময় করে তোলার সহায়কে পরিণত হয়। আর সুশিক্ষা একজন সম্পন্ন মানব তৈরিতে হয় সহায়ক। চিন্তা, চেতনা, মননের ক্ষেত্রে সুশিক্ষার অবদান ব্যাপক। তাই সুশিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তোলার কাজটি করতে হয় গভীর মনোযোগ ও মনোনিবেশসহকারে। কুশিক্ষার প্রভাব অমানুষ তৈরি করে। সন্ত্রাসী খুনীতে পরিণত হতে দ্বিধা করে না। তাই দেখা যায়, জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কমকা-ে জড়িয়ে পড়েছে কোন কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। শিক্ষক যদি হন অন্ধকারের জীব তবে শিক্ষার্থীর মনে আলোকরশ্মি জারিত হতে পারে না। আর তা হয় না বলেই জঙ্গীপনা তথা বিকারগ্রস্ত খুনীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে দীপ্ত তরুণ। আলোকিত মানুষ না হয়ে পরিণত হচ্ছে রক্তলোলুপ মানবপ্রাণ হরণকারীতে। অধঃপতনের এই এক কাল শিক্ষাঙ্গনকে গ্রাস করছে। এর ভয়াবহতা শুধু দেশীয় সমাজজীবন নয়, বিশ্ব পরিম-লকেও আক্রান্ত করছে। নিরীহ মানুষকে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে যারা হত্যা করছে, তারা উচ্চশিক্ষায়ও শিক্ষিত। কম শিক্ষিতের হাতে যে অস্ত্র উঠে আসছে এতদিন ধরে, সেই একই অস্ত্র উচ্চ শিক্ষিতজনের হাতে যখন ঠাঁই পায়, তখন ভয়াল অন্ধকারের থাবা থেকে নিষ্কৃৃতি পাওয়া হয়ে যায় দুরূহ। অথচ তরুণ প্রজন্ম তথা শিক্ষার্থীরাই এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে অগ্রগামী হিসেবে সেই একাত্তর সালে একটি দেশ, জাতি ও পতাকাকে ধারণ করেছিল। এদেশের প্রতিটি সংগ্রাম-আন্দোলনে, এমনকি দেশ রক্ষার কাজেও তরুণ প্রজন্মই সর্বাগ্রে নেমেছিল পথে-প্রান্তরে। আবার সে সময় একদল তরুণ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষিত হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিকামী মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। তারা বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ নানাবিধ অপকর্ম চালিয়েছিল। ধর্মকে বর্ম বানিয়ে ধর্মবিরোধী হেন কাজ নেই যে, তারা করেনি। সেই পথ ধরে তাদের উত্তরসূরিয়া মানুষ হত্যায় নেমে পড়েছে। একাত্তরের মতো তারাও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, এই একতরফা হত্যাযজ্ঞকালে তারা ‘মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী।’ তাদের ‘মগজ ধোলাই’ এমনভাবে করা হয়েছে যে, পিতা-মাতাসহ পরিবার-পরিজনও তাদের কাছে তুচ্ছ, অতি তুচ্ছ। ধর্মের বাণীকে বিকৃত করে কথিত জিহাদের নামে অনায়াসে যেতে পারবে বেহেশতে। বিভ্রান্তির বেড়াজালে তাদের এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা হচ্ছে যে, সর্বপ্রাপ্তির আশায় তারা জীবন বিসর্জন দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না, যেমন হয় না দেশী-বিদেশী নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ হত্যায়। এই যে ধর্মীয় শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা, এমনকি ইংরেজী মাধ্যমে শিক্ষিত হয়ে ওঠা যুবকরা অলীক আশার কুহকে নিমজ্জিত হয়ে পতনের পথে ক্রমশ ধাবিত হচ্ছে, তার নেপথ্যে রয়েছে তাদের শিক্ষা এবং শিক্ষকও। তাই জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটছে কুষ্ঠরোগের মতো, ক্যান্সারের মতো। দেশে গত ক’বছর ধরে যে গুপ্তহত্যা, অতর্কিতে হামলা চালিয়ে মানুষকে জিম্মি করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তারা কারও ভাই, কারও সন্তান, কারও ছাত্র, কারও স্বজন, বন্ধু। তাদের এ পথ থেকে ফেরাবে কে? দেশের শিক্ষানীতি ও জঙ্গীমুক্ত করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে জঙ্গীবাদবিরোধী কমিটি গঠনসহ ১২ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছে পুলিশ তাদের অনুসন্ধানী কার্যক্রমের পর। জঙ্গীদের প্রতিরোধের পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নতুন জঙ্গী সৃষ্টি না হওয়ার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস। সেই প্রয়াসকে এগিয়ে নিতে পুলিশের প্রস্তাবগুলো বিবেচনাযোগ্য।
×