ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তিল দিবসের জমায়েতে হামলাকারী যেভাবে ঢোকে

ফ্রান্সের নিস শহরে নীরবে ঘাঁটি গেড়েছিল জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১৭ জুলাই ২০১৬

ফ্রান্সের নিস শহরে নীরবে ঘাঁটি গেড়েছিল জঙ্গীরা

রিভেয়েরা রিসোর্টের মতো বিলাসবহুল পর্যটন আকর্ষণ স্থাপনা থাকার পরও ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ফ্রান্সের নিস শহরের মুসলিম চরমপন্থীরা ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। জায়গাটি হয়ে উঠেছে জিহাদী গ্রুপগুলোর কর্মী সংগ্রহের একটি কেন্দ্রে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এরকম তথ্যই দিয়েছেন। ইউরোপে পর্যটকদের আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলোর একটি ছিল নিস শহর। খবর এএফপি ও ওয়েবসাইটের। ওমর দিয়াবি গত মাসে সিরিয়ায় একটি ফরাসী টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, তিনি ‘কাতিবা’ নামে গোপন একটি সেলের প্রধান। এই সেলে প্রায় ৩০ জন ফরাসী যোদ্ধা রয়েছে। ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গা থেকে এদের রিক্রুট করা হয়েছে। আল কায়েদার সিরীয় শাখা আলনুসরা ফ্রন্টে যোগ দেয়ার জন্য দিয়াবি ২০১৩ সালে নিস শহর ত্যাগ করেন। ২০১২ সালে ফরাসী সামরিক ও ইহুদী স্থাপনা টার্গেট করে হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে ১৯ জন ইসলামী চরমপন্থী তখন বিচারাধীন ছিল। দিয়াবি যখন ফ্রান্স ত্যাগ করেন এ ঘটনাটি তার কাছাকাছি সময়ের। ওই চরমপন্থীদের ঘাঁটি ছিল কান শহরের রিভেয়ারা এলাকায়। কোন কোন নিরাপত্তা বিশ্লেষকের ধারণা কানভিত্তিক জঙ্গী গ্রুপগুলোর কিছু সদস্য সিরিয়া যুদ্ধের পর আবার ফ্রান্সে ফিরে এসেছে। ফরাসী প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভাল শুক্রবার বলেছেন, ‘নিস হামলার সঙ্গে উগ্র ইসলামের যোগসূত্র থাকতে পারে।’ তবে তিনি এর বিস্তারিত কিছু জানাননি। দিয়াবি নিজেকে ওমর ওমসেন নামেও পরিচয় দিয়ে থাকেন। ফ্রান্স ছাড়ার আগে তিনি নিসের লা নোরসা নামে একটি বেকারিতে কাজ করতেন। ওই বেকারির বিষয়েও এখন খোঁজ খবর চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে বাস্তিল দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে ট্রাক হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৮৪ জন নিহত হয়েছেন। অনুষ্ঠানস্থল প্রমেনেদ দে এ্যাঞ্জলিয়াসের আশপাশে ট্রাক ও বাস চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও আইসক্রিম বিক্রির কথা বলে হামলাকারী সেখানে ঢুকে প্রায় এক মাইল পর্যন্ত ১৯ টনি ট্রাকটি চালিয়ে নিয়ে যায়। হামলাকারী ট্রাক ড্রাইভারের নাম মোহাম্মদ লাহউইজ বুহেলাল ছিল বলে ফরাসী পুলিশ জানিয়েছে। ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে তিনি ভিড়ের মধ্য দিয়ে চলতে থাকেন। ট্রাকের নিচে পিষ্ট হয়ে একের পর এক মানুষ মারা যেতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ তাকে গুলি করে মেরে ফেলে। তিউনিসিয়ার নাগরিক বুহেলাল পেশায় একজন লরিচালক। তিনি ২০০৫ সাল থেকে নিসে বাস করেন। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সহিংসতার দায়ে চলতি বছর জানুয়ারিতে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। মার্চে বিচারে তার ছয় মাসের কারাদ- হয়েছিল। কিন্তু সেই দ- স্থগিত থাকায় স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে তার কোন সমস্যা হয়নি। ৩১ বছর বয়সী বুহেলাল বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক। তবে তার সন্তানরা তার সঙ্গে থাকত না। ধারণা করা হচ্ছে সম্ভবত স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটেছিল। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোন গ্রুপ দায় স্বীকার করেনি। তবে জিহাদী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নজরকারী মার্কিন সন্ত্রাসদমন সূত্রগুলো জানিয়েছে, আইএস এ হামলার দায় স্বীকার না করলেও এ ঘটনায় তারা উল্লসিত। টুইটারে নিস হ্যাশটাগে ফলোয়াররা তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এ হামলার ঘটনায় ফ্রান্সে শনিবার থেকে তিন দিনের জাতীয় শোক পালন শুরু হয়েছে।
×