ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদ রাহী

ঠিক সন্ধ্যার আগে

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২৪ জুন ২০১৬

ঠিক সন্ধ্যার আগে

কবির জীবন ঘিরেই কবিতা। কবিতার আত্মা আছে, দেহ আছে। মানে মনোভাষা দেহভাষা এক হলে যথার্থ কবিতা হয়ে ওঠে। দেহাত্ববাদী কবিতা আবেগের ওপর নির্ভরশীল। আত্মবাদী কবিতা ভাবের ওপর নির্ভরশীল। ‘অস্তিত্বের মর্মমূলে। কখনো তীক্ষè হাহাকারে কখনো প্রবল আনন্দে জাপটে ধরি জীবন আশৈশব চেনা মৃত্তিকা দেখায় পথ, বলিবারে বারে- একটাই জীবন-চুমুকে চুমুকে পান করি অনুক্ষণ’ মাহবুব আজীজের কবিতা ভিন্ন; অভিন্ন নয়। তাঁর কবিতা পড়ে এ কবিতা অন্য কেউ লিখতে পারত এই প্রশ্ন জাগে না। তার কবিতা অনায়াসে প্রথম পাঠেই বোঝা যায় স্বতন্ত্র। ভাবে ভাষায় বলার ভঙ্গি তার কবিতাকে করে তুলে তুমুল জাগ্রত। অতুল চন্দ্র গুপ্ত বলেছেন, ‘ভাব, বস্তু, রীতি, ও অলঙ্কার এদের যথাযথ সমবায়েই কাব্যের সৃষ্টি । এ-সবার অতিরিক্ত কাব্যের আত্মা বলে আর ধর্মান্তর নেই।’ উপরোক্ত লাইনগুলো তারই প্রমাণ। কাব্য নির্মাণ কৌশলে বিভাব, অনুভাব, সঞ্চারী বিবেচনায়ও মাহবুব আজীজের কবিতা সফল ও সার্থক। দুই. মাহবুব আজীজ মৃত্তিকাপ্রেমী কবি। ‘বিশ্বাস ও কর্তিত ’ তবুও জীবনকে তিনি জাপটে ধরেন। দুর্দিনে যেভাবে সুদিনেও সেভাবে। ভালবাসা, মায়া, আবেগে জীবনকে নিয়ে তিনি মেতে থাকেন। কারণ তিনি জানেন জীবন ক্ষণস্থায়ী। ‘একটাই জীবন।’ সহজাত দার্শনিকতায় পাঠককে চমকে উঠতে হয়। পাঠকের হৃদয়ে কবিতা নেচে উঠে অন্যরকম আনন্দ ছড়ায়ে। ক. ‘রোরুদ্যমান আয়ুক্ষয়ী দৌড়-শেষ হয় না এর রেশ; বুঝবার আগেই-শুরু হয় দৌড়; জীবনব্যাপী চলে। মুহূর্তমাত্র থামা যায় না, থামলেই যেন সব শেষ; জীবনভর একটাই ভয়-কোন্্ সিঁড়ি থেকে যে পা টলে! খ. ‘এইসব দুঃখ-ব্যথা, ছোট ছোট না-পাওয়া; ব্যর্থতা সমগ্র... কী যায় আসে! সন্ধ্যার আকাশ নিমগ্ন নির্ভার। একখানা আস্ত মানুষ জীবন পাওয়া গেলÑ আশ্চর্য সুন্দর।’ গ. যারা আছেন এখনও ঘাসের উপরে; জীবনেÑ তাদের অনেকেই তীব্র বিষে নাম কেটে দিয়েছেন আমার। আমিও কারও কারও নাম কেটেছি প্রবল ঘৃণায়। অর্থাৎ আমরা পরস্পরের কাছে এখন মৃত। অন্ধকার নেমে আসার আগেÑ সেইসব মুখ দীর্ঘশ্বাসের মতো মনে পড়ে! আহ, জীবন এত জটিল কেন? ড. বাসন্তী কুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘যারা বলেন, কবির অভিজ্ঞাতাই কবিতা, তারাও এ কথা মানেন যে একজন মানুষের জীবনে যা কিছু ঘটে সেটাই তার অভিজ্ঞতা নয়, কবির মন যখন তাকে রূপান্তরিত করে নেয় তখন তা অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়।’ উপরোক্ত লাইনগুলো তার জলন্ত প্রমাণ। লাইনগুলোতে মাহবুব আজীজের বোধের গভীরতা ধরা পড়ে। যেখানে পরতে পরতে সাজানো ভাষা সম্পদ, কবিতার ঐতিহ্য সম্বন্ধে সচেতনা এবং জীবন জগত সম্বন্ধে গভীর ও ব্যাপক ধারণা। কবির যাপিতজীবন ঘিরে নানা অভিজ্ঞতা, নানান উপাদান ছড়ানো থাকে। তাই বিশেষ মুহূর্তে শব্দে, বাক্যে সৃষ্টি হয়ে ওঠে। ‘বস্তুর বাস্তবতা অনন্ত।’ ‘জীবন’ একটি শব্দ। মাহবুব আজীজের কবিতায় তা শব্দের ব্যঞ্জনায়, নব ব্যঞ্জনায়, দার্শনিকতায় বিশেষ রূপ পায়। ক. উদ্ধৃতিতে জীবনের অভিজ্ঞতা ধরা পড়ে। মানুষ জন্ম থেকেই দৌড়ে থাকে। পেছনে তাকাবার সুুযোগ নেই। স্বপ্ন আশাকে পুঁজি করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এ চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়, কণ্টকে ঘেরা। কখনো সখনো অস্তিত্বকে নাড়া দেয়। হৃদয়ে হাহাকার সৃষ্টি করে তবু মানুষ থামে না কারণ তার সামনে থাকে মৃত্তিকার মায়া, বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষা। মাহবুব আজীজ চেনা শব্দে, নতুন দৌত্যনায় এই সত্যকে কবিতায় নানন্দিকভাবে তুলে ধরেছেন। আমরা জানি শব্দ ব্যবহারে পুরনো হয়, ফলে নব-ব্যঞ্জনা খুঁজে। মাহবুব আজীজ সফলভাবে শব্দের সখ্যতা গড়ে তোলেন। ‘তীক্ষè হাহাকারে’, ‘চেনা মৃত্তিকা’, ‘অস্তিত্বের মর্মমূলে’ পাঠককে কবির স্বতন্ত্র জগতে প্রবেশের দ্বার খুলে দেন। খ. জীবন ঘিরে ছোট ছোট অনেক দুঃখ লুকিয়ে থাকে। জীবন মানে খানাখন্দ, নানা দ্বন্দ্ব। চাওয়া-পাওয়ার হিসাবে গরমিল। তবু জীবন চলন্ত ট্রেন। কবি সব দুঃখ ব্যথা, ব্যর্থতা সমগ্র পেছনে ফেলে ছুটে চলেন আশ্চর্য সুন্দর জীবনের দিকে। ‘সন্ধ্যার আকাশ নিমগ্ন নির্ভার, ‘কবি আশ্চর্য সন্ধ্যা ঘিরে থমকে দাঁড়ায়। দুদ- শান্তি খোঁজে চাঁদের আলোয়। ‘একখান আস্ত মানুষ জীবন পাওয়া গেল’ বলে গর্বিত হয়। মাহবুব আজীজের সহজাত এ দার্শনিকতায় আমরা বাউলের দর্শন খুঁজে পাই। গ. মাহবুব আজীজের কবিতায় গল্প লুকিয়ে থাকে। গল্পের ভেতর দিয়ে তিনি পাঠককে ডেকে নেন জ্যোৎ¯œাজ্বলা মাঠে। পাঠকও দেখতে পান কুয়াশা জগত নয়, জ্বলে ওঠা জোনাকীর ভিড়। জীবন কতগুলো মানুষের সমষ্টি। ওঠা-বসা চলার পথে মানুষই চালিকাশক্তি। আবার এ চলার পথে মানুষের সঙ্গেই ভুল বোঝাবুঝি, মতের অমিল, স্বার্থের দ্বন্দ্ব। মাহবুব আজীজের উপরোক্ত কথায় তারই প্রমাণ মিলে। তিনি লিখেছেন, মরে গেলে শুধু মৃত নয়, সম্পর্কচ্যুত হলেই মৃত। দার্শনিক বাক্য। পাঠকের চিন্তার সঙ্গে চমৎকার অনুষঙ্গী। তিন. নিঃসঙ্গ সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সাহিত্যে নিঃসঙ্গ উঠে আসে বৃহত্তর ক্যানভাসে। আমরা জীবনানন্দের কবিতায় নিজের মুদ্রা দোষে একা হওয়ার মেসেজ পাই। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায়Ñ ‘সহে না সহে না আর জনতার জঘন্য মিতালী।’ বুদ্ধদেব বসু’র কবিতায়Ñ‘ প্রান্তরে কিছুই নেই।’ এই যে বিচ্ছিন্নতা, হতাশা, একা হওয়ার যন্ত্রণা সবকিছুর রাজা ‘মাননীয় নিঃসঙ্গ।’ মাহবুব আজীজের কবিতায় ও নিঃসঙ্গ বিচিত্র ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। পরাবাস্তবতার হাত ধরে উঠে এসেছে অন্তর্গত বহির্জগতের বয়ান। ক. ‘একা পোড়ে মাটি; নিঃসঙ্গ বয়ে চলা। কোথাও কি কেউ থাকে? বুক ঝিম সময় আসে; এসে যায়। কে ডাকে? চিনি তাকে? সন্ধ্যার মায়ায়।’ খ. ‘আমি, নিঃসঙ্গ কফিন, শুয়ে আছি মেঘে Ñআমাকে বৃষ্টিতে ভাসিয়ে ঝরাও Ñআমাকে রুদ্র বারান্দায় হাঁটাও। আমারই মতো তুমিও থাকো রাত জেগে।’ গ. ‘কই যাই? কার কাছে? এই অবেলায়! আমার তো সবই অবেলাÑ নিঃস্ব দিন শেষের এইসব সন্ধ্যাÑ আরও একটি দিন যায়। শুধুই যায়।’ মাহবুব আজীজের কবিতায় নিঃসঙ্গ নানা ব্যঞ্জনায় ছড়িয়ে পড়ে। কখনো হতাশা, কখনো কারো সঙ্গের একাকীত্ব, কখনো একাকীত্ব ঘিরে হা-হুতাশ। তবে মাহবুব আজীজ মায়াবী শব্দে নিঃসঙ্গের যে মুর্তি গড়ে তা শৈল্পিক। পাঠকও শব্দের তসবিহ গুনতে গুনতে প্রবেশ করে কবিতার এক মায়াবী জগতে। যেখানে নিঃসঙ্গ নানন্দিকÑএ যেন মরুভুমিতে মরুদ্যান। ক-তে মাটি পোড়া দৃশ্যের সঙ্গে নিঃসঙ্গ মানুষের বয়ে চলার বয়ান উঠে আসে। কবি সন্ধ্যার মায়ায় কাকে যেন খুঁজে, মনে হয় কে যেন তাকে ডাকে । মন খারাপ করা হু হু বিরহ নিয়ে কবি সন্ধ্যার মায়ায় বসে থাকে। তার ভেতর থেকে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় ‘কে ডাকে? চিনি তাকে?’ এই যে প্রিয় মানুষের জন্য হাহাকার, একাকী পথচলা, আয়নায় নিজের ছায়া খুঁজে ফেরা তা অসাধারণ। খ. কবি টুকরা টাকরা সাদা মেঘ হয়ে কালো মেঘে শুয়ে থাকে। পরাবাস্তব এ চিত্র, ‘নিঃসঙ্গ কফিন প্রতীকাশ্রয়ী শব্দ মনোমুগ্ধকর। কবি একাকীত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্তি চাই। তাই তিনি দয়িতা বলে বৃষ্টিতে ভাসিয়ে ঝরাতে, রৌদ্রমাখা বারান্দায় হাঁটাতে। কবি চায় দয়িতাও তার একাকীত্বেও সঙ্গী হোক। ব্যক্তি আমি ‘কে’ সমষ্টিতে ছেড়ে দিলে লেখা সবারই মনোভাষ্য হয়ে ওঠে। মাহবুব আজীজ এতে সফল। গ. মানুষ যখন জীবনের সবকিছু হারিয়ে ফেলে, হিসাব মেলাতে পারে নাÑ তখন তার কাছে সুন্দর সময়ও অবেলা মনে হয়। অবেলায়, আকালে সব মানুষই দিশেহারা। উচ্চারণ করেÑ ‘কই যাই? কার কাছে?’ তবুও সময় থেমে থাকে না। দিন শেষে সন্ধ্যা নামে, দিন আসে। মানুষ ভাঙ্গনের সাঁকোতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেÑ ‘আমারেনি নিবা তুমি, মাঝি!’ চমৎকার। চার. মৃত্যু সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সাহিত্যের সব শাখায় তার উজ্জ্বল উপস্থিতি। জীবন যদি মায়া হয়, মৃত্যু বিরহ। ‘মৃত্যু পর্যন্ত অন্যমনস্ক বাঁচিয়া থাকার মধ্যে জীবনের অনেক কিছুই যেন তাহার অপচয়িত হইয়া যাইবে। শুধু তাহার নয়, সকলের। জীবনের এই ক্ষতি প্রতিকারহীন।’ মৃত্যু প্রতিকারহীন ব্যাধি। ক. ‘বাবা কোথায় চলে যাচ্ছে? ঐ আকাশে? ঐ অন্ধকারে? ঐ নক্ষত্র দূরত্বে?’ খ. কেন পুড়িয়ে মারছো আমাকে তুমি? আমি তো সামান্য মানুষ; বেঁচে-বর্তে আছি কোন মতে। আজন্ম চেনা ভূমি কেন আজ লকলকে আগুনের আবর্তে? গ. যেখানেই থাকো; নিশ্চিত জানি- ঐ একি দূর মফস্বলে তোমাদের পিতার কবরের পাশে তোমার ঠিক দাঁড়াবে একদিন!’ আমরা জানি, কবি টেনিসন বন্ধু হ্যালামের মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েন। প্রায় বছর দশেক লেখালেখিতে মনোযোগ দিতে পারেননি। এ রকম আরো উদাহরণ টানা যেতে পারে। প্রিয়জনের মৃত্যু হৃদয়ে এমনি দাগ কাটে। কÑতে কবির বাবা হারানোর যন্ত্রণা উজ্জ্বলভাবে উঠে এসেছে। তিনি গল্প বলার ভঙ্গিতে ‘দৃশটিকে মনে রেখে’ কবিতায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণ করেছেন। কবি বাবার মৃত্যুতে দার্শনিক জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হয়েছেন। ‘বাবা কোথায় চলে যাচ্ছে?’ মানুষ মৃত্যুর পরে সত্যিকারে কোথায় যায়? আকাশে? অন্ধকারে? নক্ষত্রদূরত্বে? কবির বেদনা, জিজ্ঞাসা ব্যক্তিজগত পেরিয়ে সমষ্টি জগতে বিরাজমান। খÑকবি এখানে তার সময়কে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। এই যে কুটিল সময় ! প্রকৃত কবিতা সব সময় সময়ের দর্পণ। কবি মাহবুব আজীজের কবিতা এর ব্যতিক্রম নয়। কবি জ্ঞানে প্রজ্ঞায় নষ্ট সময়কে ধরতে চেয়েছেন। হরতাল, গুম, রাহাজানি, খুন, মতের দ্বন্ধ, ধর্মান্ধবাদ যেভাবে মানুষের ভেতর ছড়িয়ে পড়ছে তা ভাবের বিষয়। কবি তাই প্রতিপক্ষকে জিজ্ঞাসা করতেছেনÑ ‘কেন পুড়িয়ে মারছো আমাকে তুমি?’ কবি কোন উত্তর না পেয়ে আবারও প্রশ্ন করেন- ‘ কেন আমি তোমার প্রতিপক্ষ? এদেশে জন্ম বলে!’ মানুষের হাতে মানুষের মৃত্যু, রক্তাক্ত জনপদ কবিকে ভাবিয়ে তুলে। গÑমৃত্যু অনিবার্য। কবিকে ও মরতে হবে। তাই মাহবুব আজীজ বাবার কবরে দাঁড়িয়ে নিজের মৃত্যু কথা ভাবে। তাঁর স্মরণে আসে রূপকথা, নীলপদ্ম। তাঁর দুই কন্যা। তাই তিনি সন্তানদের বলতে চান তোমরাও একদিন পিতার কবরে এসে দাঁড়াবে। মুত্যু বিচিত্রভাবে মাহবুব আজীজের মস্তিষ্কে হল্লা করে। ফলে আমরা কাগজের কবিতা নয়, মগজের কবিতাই পাই। পাঁচ. মাহবুব আজীজের কবিতায় প্রেম এক রৈখিক নয়, বহু রৈখিক। তাঁর কবিতায় প্রেম সৌন্দর্যে, সুসষমায়, স্মৃতিকাতরতায় অদ্ভুত এক বোধের জগত তৈরি করে। যেখানে লুকানো সহজাত দার্শনিকতা। ক. ‘কবেকার ফুল পড়ে ছিল এক কোণে- ভুলে সে পথে গিয়েছিলাম সেদিন। নেটওয়ার্কের বাইরে; সহজে মেলে না ফোনে; আঁকাবাঁকা পথ। তবুও মুগ্ধতাÑশৈশবের ঋণ। খ. তুমি : ভোরের ঘাসে ঘাসে পা ফেলা... তুমি : দুপুরের ক্লান্ত প্রহরে অফুরন্ত হাসি। তুমি : সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর উড়ন্ত ঝিঁঝি, তুমি : মধ্যরাতে না ঘুমানো দূরের ঐ চাঁদ...’ গ. ‘এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে চলো আমরা ভালবাসি- ভালবাসাই একমাত্র সত্য- আর সব জলে ফেলি। ক. প্রেম মাহবুব আজীজের কবিতায় স্মৃতিকাতরতা ডেকে আনে। বুক জুড়ে নস্টালজিয়া অদ্ভুত খেলে যায়। কবি ‘ফুল’ রূপকার্থে বান্ধবীর কথা বলেছেন। সেই কবেকার সম্পর্ক ম্লান হয়ে গেছে। কবি সেই স্মৃতিকে খুঁজতে গেছেন আঁকাবাঁকা পথে। প্রেমের কবিতায় প্রকৃতির অসাধারণ চিত্রকল্প। যা পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। খ. জীবন ভালবাসার এক ভিন্ন নাম। প্রতিটি মানুষ বেঁচে থাকে একটি প্রিয় মুখের জন্য। একটি সর্বনামের জন্য। মাহবুব আজীজ ‘তুমি’ সর্বনামকে বেঁধেছেন নানা ভাললাগায়। ‘তুমি’ কবির কাছে ‘ভোরের ঘাসে ঘাসে পা ফেলা।’ যা অদ্ভুত শিহরণ ডেকে আনে। ‘তুমি’ কবির কাছে ‘দুপুরের ক্লান্ত প্রহরে অফুরন্ত হাসি।’ মানুষ অথবা প্রেমিক যখন দিশেহারাÑ তুমি বা প্রেমিকাই তখন শান্তির ফোয়ারা। মাহবুব আজীজ এসত্য কে কবিতায় চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর কবিতায় ‘তুমি’ হৃদয়ের ভাষ্য-দেহের নয়। লিবিড়ো চেতনাকে তিনি কৌশলে পাশ কেটে যান। গ. ভালবাসা ঘিরেই মানুষের পথচলা। ভালবাসার সাঁকোয় মানুষের বর্তমান। ভালবাসার হাত ধরে মানুষের ভবিষ্যত। কবি যথার্থই বলেছেন ‘ভালোবাসা একমাত্র সত্য।’ ভালবাসাই মরুভূমিতে মরুদ্যান সৃষ্টি করতে পারে। ছয়. মাহবুব আজীজের কবিতায় উপমা প্রকৃতি ঘেঁষা। চেনা-জানা জগত থেকেই তিনি উপমা সৃষ্টি করেন। যেখানে লুকায়িত থাকে বর্তমান সময়ের ক্ষত। যে কারণে তাঁর উপমা বৃদ্ধিদীপ্ত এবং চৌকস। ১.সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির মতো কুয়াশা জমা সম্পর্ক ২.বাঘের ছোবলে ক্লান্ত হরিণীর মতো ৩.আজও শিশুর চোখের মতোই ভিজে ওঠে দুই চোখ। ৪.তসবিহ দানার মতো ভবিষ্যত গুনতে গুনতে সাত. এ ছাড়াও মাহবুব আজীজের কবিতায় বিচিত্র বিষয়। ঘর-বাহির। জীবনের ফুল শয্যা থেকে হূল শয্যা পর্যন্ত তার স্পর্শে কবিতা। তিনি যাপিত জীবনের দুঃসময়, সুসময়, হতাশা, হাহাকার, আনন্দ, বেদনা থেকে নিজস্ব জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় কবিতা তুলে আনেন। তার কবিতায় উঠে আসে- মানুষ, সম্পর্ক, ভাঙ্গন, অস্তিত্ব, বর্তমান সময় ,আলো, অন্ধকার, প্রকৃতি, রং,স্মৃতি, পরাবাস্তবতা, সুন্দর, যাপিতজীবন ইত্যাদি। তিনি কবিতায় ছড়িয়ে রাখেন ইন্দ্রিয়ের বয়ান। যেখানে লুকায়িত থাকে কবিতার ‘হয়ে ওঠা’। ফলে সৈয়দ শামসুল হকের কথা সারÑ ‘অত্যন্ত নিচু গলায় জীবনের কিছু অনুভব তিনি ধরে উঠেছেন শব্দের ধ্বনিতে। আধো প্রেমে আধো আলিঙ্গনে তাঁর উ”্চারিত পঙ্ক্তিমালা আশা করছি পাঠককে স্পর্শ করবে। তারপর অনেক পথ ঘুরে নৌকাটি যখন ভিড়বে তখন কবি যেমন চমকে উঠবেন আয়নায় নিজেরই ছায়া দেখে, পাঠকও মনোময় হয়ে উঠবেন সেই বিস্ময়ে যাকে বলি জীবন। মাহবুব আজীজকে শুভেচ্ছা।’
×