ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কার্পাসডাঙ্গা থেকে মৃত্যুক্ষুধা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৮ মে ২০১৬

কার্পাসডাঙ্গা থেকে মৃত্যুক্ষুধা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চল কার্পাসডাঙ্গায় এসেছেন, থেকেছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন। পদ্ম গোখরোর মতো বিখ্যাত গল্প, কলসী ডুবে যায় ও লিচু চোর কবিতা লিখেছেন কার্পাসডাঙ্গায় বসে। ভৈরব নদের তীরে কবি যে বাড়িতে থাকতেন, সেটি এখনও আছে। চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের পাশে কার্পাসডাঙ্গা। পাশেই ভৈরব নদ। ১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে অগ্নিযুগের বিপ্লবী হেমন্ত কুমার সরকারের আমন্ত্রণে নজরুল কলকাতা থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে কৃষ্ণনগরে আসেন। সেখানে থেকে তিনি কয়েকবার কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। নজরুল ইসলাম কমিউনিস্ট নেতা মোজাফফর আহমেদের সঙ্গে গঠন করেন ‘শ্রমিক প্রজা কৃষক পার্টি’। কার্পাসডাঙ্গায় তখন চলছিল কৃষক আন্দোলন। মূলত সে কারণে তিনি কার্পাসডাঙ্গায় আসেন এবং স্বদেশী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক করেন। কার্পাসডাঙ্গায় নজরুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী প্রমীলা এবং পুত্র বুলবুলকে নিয়ে ওঠেন হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বাড়িতে। খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী হর্ষপ্রিয় সে সময় নদীয়া জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া নজরুল ইসলাম আরও একবার কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। কার্পাসডাঙ্গা মিশনের প্রধান সে সময় ছিলেন দ্বারিকানাথ সরকার। তাঁর ছেলে মহিম সরকারের মেয়ে আভা রাণী এবং শিউলী ছিলেন নজরুলের গানের ছাত্রী। তাঁদের কলকাতায় বাড়ি ছিল আর্মহার্স্ট স্ট্রিটে। নজরুল ইসলাম বাস করতেন কলকাতায় তাঁর বাড়ির পাশে। এঁদের আমন্ত্রণে নজরুল কার্পাসডাঙ্গায় এসেছেন এবং থেকেছেন প্রমীলা ও বুলবুলকে নিয়ে। যে বাড়িতে নজরুল থেকেছেন সেই বাড়ি এখনও আছে। ওই বাড়িতে এখন বসবাস করেন হর্যপ্রিয় বিশ্বাসের নাতির ছেলে প্রকৃত বিশ্বাস বকুল। ভৈরবের তীরে নিশ্চিন্তপুর মৌজায় যামিনী বাবুদের বৈঠকখানা ছিল। সেখানে বসে কবি ভৈরবী ও শ্যামাসঙ্গীত গেয়ে অনেক রাত কাটিয়েছেন। ভৈরব নদের যে ঘাটে বসে তিনি কবিতা লিখতেন সেখানে এবং আশপাশে একাধিক স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯৩০ সালে ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এতে অশিক্ষিত দরিদ্র মুসলমান ও খ্রীস্টান সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। ধারণা করা হয়, এই উপন্যাসের পটভূমি ছিল কার্পাসডাঙ্গা। হর্যপ্রিয় বিশ্বাসের নাতির ছেলে প্রকৃত বিশ্বাস বকুল বলেন, বিদ্রোহী কবি যে আটচালা ঘরে থাকতেন, পুকুর পাড়ে গল্প কবিতা ও গান লিখতেন সেই স্থানগুলোতে সরকার কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাইলে আমরা জমি দান করতে প্রস্তুত আছি। -রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা থেকে
×