ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর পৌরসভার নতুন ড্রেনে সুফল পাবে না শহরবাসী

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৭ মে ২০১৬

যশোর পৌরসভার নতুন ড্রেনে সুফল পাবে না শহরবাসী

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ পৌরসভার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ড্রেনেজ ব্যবস্থার সুফল পাবে না যশোর শহরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষ। এ বছরও জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হবে ওই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। ড্রেনের পানি বের হওয়ার পথ সঙ্কীর্ণ ও উঁচু হওয়ায় এ জলাবদ্ধতা দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ। অবশ্য এ কথা স্বীকারও করেছেন যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি দাবি করেন, পৌরসভার বাইরে গিয়ে তাদের উন্নয়নকাজ করার সুযোগ না থাকায় এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যশোর শহরের পানি নিষ্কাশনে এডিবির অর্থায়নে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় গড়ে তোলা হচ্ছে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বড়বাজার, লোন অফিসপাড়া ও বারান্দীপাড়া তথা ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড বাদে বাকি ৭টি ওয়ার্ডে চলছে ড্রেন নির্মাণের কাজ। এসব এলাকার প্রধান সড়ক, পার্শ্ব সড়ক সর্বত্র চলছে এ কাজ। ৪০ কোটি টাকার এ মেগা প্রোজেক্টের আওতায় ২০ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এ প্রোজেক্টের কাজ শেষপর্যায়ে এলেও নতুন করে জলাবদ্ধতার শঙ্কায় শহরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষ। সরেজমিন দেখা যায়, শহরের পানি বের করার জন্য মাস্টারপ্ল্যানে তিনটি এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি যশোর মুজিব সড়ক হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশ দিয়ে হযরত গরিব শাহ (র)-এর মাজারের পাশ দিয়ে ভৈরবে পড়বে। এছাড়া শহরের আশ্রম রোড হয়ে রায়পাড়া পশু হাসপাতালের সামনে দিয়ে বাইপাস সড়কের পাশ দিয়ে শঙ্করপুর বটতলা মসজিদ এলাকার আরেফিন ফিলিং স্টেশনের সামনে দিয়ে হরিণার বিল হয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়বে। আর অপর এক্সিট পয়েন্টটি হলো বেজপাড়া, নাজির শঙ্করপুর হয়ে শঙ্করপুর জমাদ্দারপাড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের মসজিদের সামনে দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে। কিন্তু নক্সা প্রণয়ন হলেও পৌরসভার বাইরে বাধাহীনভাবে পানি বের হয়ে নদীতে পৌঁছানোর কোন গতি করা হয়নি। এজন্য কী করতে হবে তাও নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পৌরসভার শেষ প্রান্তে থাকা মানুষগুলো। শঙ্করপুর জমাদ্দারপাড়া এলাকার সোহরাব হোসেন বলেন, প্রতি বছর আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতে আমাদের এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েকদিন ধরে এলাকায় ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এ কাজ দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলাম, অন্তত এ বছর আর হাঁটুপানি নিয়ে ঘরে বসবাস করতে হবে না। কিন্তু যা শুনছি তাতে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ড্রেনটি বাস টার্মিনালের মসজিদের সামনে কালভার্টে নিয়ে যুক্ত করা হবে। এর পর কী হবে তা কেউ বলতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, কালভার্টটির পরই নির্মাণ করা হয়েছে একটি মসজিদ। এর পর রয়েছে সব ব্যক্তি মালিকানার জমি। টার্মিনাল হওয়ার আগে ওই সব জমি পরিত্যক্তই থাকত। ফলে শহরের পানি বিলে ছড়িয়ে পড়ত এবং কোন এক সময় মুক্তেশ্বরী নদীতে গিয়ে মিলত। কিন্তু এখন সে পরিবেশ নেই। ময়লা-আবর্জনা আর তেল-মবিলের গাদে কালভার্টের পর থেকে বিস্তীর্ণ এলাকা উঁচু হয়ে গেছে। ফলে কয়েক বছর ধরে ওই স্থান দিয়ে ভালভাবে পানি বের হয় না। যে কারণে আমরা শহরের উপচেপড়া নোংরা পানিতে বদ্ধ হয়ে কষ্টকর জীবনযাপনে বাধ্য হই। সোহরাব হোসেন মনে করেন, শহরে যেমন ড্রেন তৈরি করা হয়েছে তেমনি যদি মুক্তেশ্বরী নদী পর্যন্ত তৈরি করা যায় তাহলেই এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার নিরসন হবে। শঙ্করপুর বটতলা মসজিদ এলাকার শহিদ, সলেমান ও বাবু মিয়া বলেন, আরেফিন ফিলিং স্টেশনের জায়গাটি এক সময় খোলা জলাশয় ছিল। ফলে শহরের পানি এসে ওখানে জমা হওয়ার পর বাইপাস সড়কের কালভার্ট দিয়ে হরিণার বিলে পড়ত। তখন বিলও ছিল উন্মুক্ত। ফলে পানি নিষ্কাশনে খুব সমস্যা হতো না। অধিক বৃষ্টি হলেও রাতারাতি পানি নেমে যেত। কিন্তু গত ৪-৫ বছর ধরে সে পরিবেশ আর নেই। এখন আধা ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই শঙ্করপুর ও রায়পাড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। শহিদ মিয়া বলেন, আরেফিন ফিলিং স্টেশন স্থাপনের পর বাইপাসের পাশের ড্রেন সচল রাখতে তারা তিন ফিট ব্যাসার্ধের দুটি পাইপ দিয়ে উপরে মাঠি দিয়ে ভরে দেয়া হয়েছে। শহরের সব পানি ওখানে এসে থমকে যায়। আর উপচেপড়া পানিতে ভেসে যায় ওই এলাকার প্রতিটি বাড়ি। তিনি বলেন, পানি কালভার্ট পার হয়ে হরিণার বিলে পড়লেও আবারও সঙ্কীর্ণ নালার কারণে ধীরে প্রবাহিত হয়। কারণ ওই স্থানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ঘের। ফলে দুই ঘেরের মাঝখানের ছোট নালাটিই পানি বের হওয়ার একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে সঙ্কীর্ণ নালা হয়ে পানি এগিয়ে এলেও মুক্তেশ্বরী পর্যন্ত যেতে পারে না। পানি নিষ্কাশনের এ প্রতিবন্ধকতার কথা স্বীকার করেছেন যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ হাসানও। তিনি বলেন, এডিবি মাস্টারপ্ল্যান করার আগে সার্ভে করেছে। তারা যেভাবে পরামর্শ দিয়েছে সেভাবেই কাজ চলছে।
×