ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতি কেজিতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা

রোজার আগেই অস্থির চিনির বাজার

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ৪ মে ২০১৬

রোজার আগেই অস্থির চিনির বাজার

এম শাহজাহান ॥ আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে অস্থির হয়ে উঠছে চিনির বাজার। প্রতিকেজি প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। আর খোলা চিনি কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা পর্যন্ত। তবে এই দামেও সামনের দিনগুলোতে চিনি পাওয়া যাবে না বলে ক্রেতাদের আগাম জানিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। আগামী বাজেটেও চিনির দাম কমানোর কোন পদক্ষেপ থাকছে না। বরং দেশীয় চিনি শিল্প রক্ষার ঘোষণা দিয়ে এ পণ্যটির আমদানি নিরুৎসাহিত করার কৌশল নেয়া হতে পারে। ফলে আসন্ন রমজানে চিনির দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেই হিসাব কষতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। ওই সময় যাতে চিনি থেকেই অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নেয়া যায় সেই কৌশলও রয়েছে তাদের। বাড়ছে চিনির মজুদ। এতে করে আগেভাগে বেড়ে যাচ্ছে চিনির দাম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, রমজানে যে কয়েকটি ভোগ্যপণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি কারসাজির আশ্রয় নিয়ে থাকে তার মধ্যে চিনি অন্যতম। ইতোপূর্বে চিনি নিয়ে ব্যবসায়ীদের বহু ছিনিমিনি করার নজির এদেশে রয়েছে। ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কলঙ্ক রয়েছে দেশের চিনি ব্যবসায়ীদের। তবে গত কয়েক বছর চিনি নিয়ে তেমন কোন কারসাজি না হলেও এবার আবার কারসাজি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে চিনির দাম বাড়তে শুরু করেছে। যদিও গত ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনি আমদানিতে নতুন করে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপ করে। একইসঙ্গে ওই সময় পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির আমদানি মূল্যও টনপ্রতি ৩০ ডলার বাড়ানো হয়। এর ফলে অপরিশোধিত চিনির আমদানিমূল্য প্রতি টন ৩২০ ডলার থেকে বেড়ে ৩৫০ ডলার, আর পরিশোধিত চিনির আমদানিমূল্য প্রতি টন ৪০০ থেকে বেড়ে ৪৩০ ডলার দাঁড়িয়েছে। এতে করে অভ্যন্তরীণ মার্কেটে বেড়ে যাচ্ছে চিনির দাম। এছাড়া সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের টিসিবি) তথ্যমতে, গত এক বছরে চিনির দাম ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক বছর পূর্বে প্রতিকেজি চিনি ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৪ টাকায়। যদিও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি প্যাকেট চিনি কোম্পানি ভেদে ৬৫-৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী বাজেটে দাম কমানোর কৌশল না নেয়া হলে অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, দেশে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। গ্রীষ্ম ও রোজায় সিংহভাগ চিনি বিক্রি হয়। সরকারী মিলগুলোয় বছরে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টন চিনি উৎপাদন হলেও বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকেন দেশের ভোক্তারা। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দামের ওঠানামা ছাড়াও সরবরাহ সঙ্কটের কারণে অনেক সময় বাজার বেড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, আসলেই চিনির দাম বেড়ে গেছে। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্কারোপের ফলে দাম বেড়ে যাচ্ছে। রমজানে চিনির দাম আরও বাড়ার আভাস দিয়ে তিনি বলেন, দেশীয় চিনি শিল্প রক্ষায় সরকারকে এ কৌশল নিতে হয়েছে। তবে দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তখন কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে। এখন সহনীয় মূল্যে চিনি বিক্রি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এদিকে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রতি টন অপরিশোধিত চিনিতে দুই হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনিতে সাড়ে তিন হাজার টাকা শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তার এই প্রস্তাবের ফলে চিনির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়। আর তাই ওই সময় ওই শুল্ক আর বাড়ানো হয়নি। কিন্তু দেশীয় চিনি শিল্প রক্ষার ঘোষণা দিয়ে নতুন করে আবার শুল্কারোপ করা হয়েছে। এদিকে চিনির সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, পণ্যটির দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। রমজানে চিনির দাম আরও বাড়বে। ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুগদা পাড়ার বাসিন্দা জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, প্যাকেট চিনির দাম প্রতি সপ্তায় বাড়ছে। এছাড়া খোলা চিনিও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমানোর ব্যাপারে সরকারী পদক্ষেপ না নেয়া হলে এর বড় মূল্য দিতে হবে সাধারণ ভোক্তাদের। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে রমজানে এই পণ্যটির দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেই অভিযোগে মৌলভী বাজার ও খাতুনগঞ্জের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।
×