সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে। আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে ডিপোতে থাকা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে। ডিপো কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না বলেও মনে করছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। সরকারী এ প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দিনের হাতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সীতাকু-ের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের কারণ অনুসন্ধানে সরকারের নির্দেশে তদন্ত কমিটি করা হয়।
এই তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ ও এ ধরনের দুর্ঘটনার প্রতিরোধে করণীয় সুপারিশ প্রদান করেছে। আমরা এ প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাব। সেখান থেকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হবে।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব কন্টেনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে সেগুলোতে রফতানির জন্য সিল্ড করা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছিল। এসব রাসায়নিক স্মার্ট গ্রুপের মালিকাধীন আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে গত একবছর ধরে প্রস্তুত করা হচ্ছে। কমিটি আল-রাজী কেমিক্যালের সমস্ত উপাদান প্রক্রিয়াটিও পর্যবেক্ষণ করেন।
সব মিলিয়ে ২৪ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের জবানবন্দীও রেকর্ড করা হয়। তবে বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জিয়াউল হায়দার এবং জিএম মার্কেটিং নাজমুল আখতার খান তদন্ত শুনানিতে অনুপস্থিত ছিলেন। দুজনকে নোটিস দিলেও তারা শুনানিতে অনুপস্থিত থাকেন। এমনকি লিখিত বক্তব্যও প্রেরণ করেননি।
জানা যায়, জিয়াউল হায়দার বিএম ডিপোর প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাহী পরিচালক এবং ডিপোর সর্বময় কর্তৃত্ববান। ৩১ মে সর্বশেষ তিনি ডিপোতে আসেন। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর আছেন। অপরদিকে নাজমুল আখতার খান দুর্ঘটনার পর পুলিশের দায়ের করা মামলা আসামি হয়ে এখনও পলাতক।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তে বিবেচ্য বিষয় ছিল তিনটি। এগুলো হলো ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের কারণ অনুসন্ধান, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন।
কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার পর কমিটি গঠন করে দুর্ঘটনার কারণ, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এ থেকে উত্তরণে সুপারিশ প্রণয়ণের দায়িত্ব দেয়া হয়।
আমরা এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করেছি। প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়েছি এবং কারা এর জন্য দায়ী তা নির্ধারণের চেষ্টা করেছি। এটাকেই চূড়ান্ত বলা যাবে না। এ ঘটনায় বৃহত্তর তদন্তও হতে পারে।
তদন্ত কমিটি বিএম ডিপোর ঘটনা থেকে সতর্ক হয়ে অন্য ডিপোর জন্য সুনির্দিষ্ট ২০টি সুপারিশ করা হয়। এতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে আনারও সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ কন্টেনার ডিপোর অনুমোদন, পরিচালনা ও তদারকিতে যে ২৫টি সংস্থা রয়েছে, তাদের সমন্বয় থাকলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকু-ের বিএম কন্টেনার ডিপোতে আগুন লাগার পর বিস্ফোরণের ঘটনায় এই পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫১ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। দুর্ঘটনার পর মোট ছয়টি তদন্ত কমিটি হলেও প্রতিবেদন দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের গঠিত কমিটি।
আরও একটি দেহাবশেষ উদ্ধার ॥ সীতাকু-ের বিএম কন্টেনার ডিপোতে অগ্নিকা- ও বিস্ফোরণের এক মাস পর আরও একজনের দেহাবশেষ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এর আগে সোমবার বিকেলে ডিপো থেকে একজনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছিল।
এ নিয়ে ডিপোতে অগ্নিকা-ের ঘটনায় মোট ৫১ জন নিহত হয়েছে। বুধবার ডিপোর শেডের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করার সময় আগুনে পোড়া মাথার খুলি ও হাড় পাওয়া যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকু- সার্কেল) আশরাফুল করিম।