ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

উর্মি রহমান

কলকাতার চিঠি

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

কলকাতার চিঠি

পারদের মাত্রা চড়ে চলেছে। এত গরম নাকি অনেক বছরে দেখা যায়নি। এমনকি চিড়িয়াখানার পশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। মাঝে মাঝেই তাদের পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের খাদ্য তালিকার পরিবর্তন করা হয়েছে। যেসব খাবারে শরীর গরম হয়, সেগুলো কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সবাই বলছে এ রকম গরম অনেকদিন পড়েনি। বাঁকুড়ায় গরমে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। কারও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে, কারো বা সান স্ট্রোকে। একবার এই এপ্রিল মাসেই বিলেত থেকে আসা পুত্র রূপককে নিয়ে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে গিয়েছিলাম মল্ল রাজাদের সময়কার প্রাচীন টেরাকোটা মন্দিরের সারি দেখতে। ওকে জানিয়েছিলাম তাপমাত্রা খুব বেশি থাকবে। সেবার লন্ডনে তখনও বেশ ঠা-া, ও বলেছিল গরমে ওর অসুবিধা নেই। ও বরং গরমই চায়। সেবার ৪১ ডিগ্রী তাপমাত্রা ছিল। রূপক গাড়ির স্ক্রিনের সেই উত্তাপের রিডিংয়ের ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিল ওর সহকর্মীদের দেখাবে বলে। সেবার খুব যে খারাপ লেগেছিল তা বলব না। কিন্তু এবার তো গরমে সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। অনেক জায়গায় এই তাপমাত্রা ৪৫ ছাড়িয়ে গেছে। একদিকে নির্বাচন, অন্যদিকে উত্তপ্ত আবহাওয়া। ফলে পরিস্থিতি প্রচ- গরম। এর আগে আপনাদের ভুল বলেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে ছয় দফা নয়, সাত দফায় ভোট হচ্ছে। এবার নির্বাচনের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক যেটা আমার মনে হয়েছে, সেটা হচ্ছে রূপান্তরকামীদের স্বীকৃতি। তাঁরা এবার ফর্মে তাঁদের লিঙ্গের জায়গায় ‘স্ত্রী’ বা ‘পুরুষ’ না লিখে ‘অন্য’ লিখতে পারছেন। তাঁদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারও কথা ছিল, কিন্তু তাঁরা প্রার্থী দিতে পারেননি। কিন্তু প্রিসাইডিং অফিসার হবার সুযোগ পেয়েছেন। সমাজ যত তাড়াতাড়ি তাঁদের আপন করে নেবে, ততই সমাজেরই মঙ্গল। এখনকার সবচেয়ে বড় খবর হচ্ছে খরা। ভারতের প্রায় ১০টি রাজ্যের ২৫৬টি জেলা খরার কবলে পড়েছে। পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীর পানি নেমে গেছে, কুয়োর পানি শুকিয়ে গেছে। দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্ভবত মহারাষ্ট্র। সেখানকার ১৪,৭০৮টি গ্রাম খরার কবলে পড়েছে, বলা যায় এই শতাব্দীর সবচেয়ে তীব্র খরা সেখানে এবার হয়েছে। মাড়াঠাওয়াড়ার প্রতিটি গ্রাম খরার কবলে পড়েছে। খাবার পানি বা সেচের পানির তীব্র অভাব রয়েছে। কাছাকাছি পানীয় জলের উৎসগুলো সব শুকিয়ে যাবার ফলে গ্রামের নারীদের পানির সন্ধানে অনেক দূর পর্যন্ত হাঁটতে হচ্ছে। তবে কোন কোন রাজ্য খরার কথা ঘোষণা করতে খুব একটা উৎসাহী নয়। কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করতে পারে কিনা, তা নিয়ে কথা উঠেছে। এ ব্যাপারে কি কোন আইন আছে? শোনা গেছে, এটা বিপর্যয় মোকাবেলা সংক্রান্ত আইনের আওতায় পড়ছে। তবে কেন্দ্র অবশ্যই এর জন্য তহবিল বরাদ্দ করতে পারে। আইনী প্যাঁচে না গিয়ে বলা যায় কিছু একটা করা দরকার যাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসে, তাঁদের জীবন রক্ষা পায়। আর কেউ না হলেও এ ব্যাপারে রেল মন্ত্রণালয় এগিয়ে এসেছে। মন্ত্রণালয় খরা বিধ্বস্ত এলাকায় ট্রেনে করে পানি সরবরাহ করছে। এ ব্যাপারে প্রথম ট্রেনটি মিরাট থেকে লাতুরে পৌঁছে গেছে পাঁচ লাখ লিটার পানি নিয়ে। ট্রেনে করে পানি সরবরাহের ব্যাপারটা আমার কাছে একেবারে নতুন। লাতুরে কিছু কিছু কুয়া এই পানি ধরে রাখার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেখানে এই পানি জমা করা হয়েছে। একজন রাজনীতিক তাঁর ২২ লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কুয়াকে বিনা খরচে ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন। শুধু তিনি নন, আরও অনেকে এগিয়ে এসেছেন চলচ্চিত্র এবং থিয়েটার জগতের লোকজন খরা বিধ্বস্ত মানুষের সাহায্যে। এ ব্যাপারে সবার আগে এগিয়ে এসেছেন নানা পাটেকর। তিনি ও মাকরন্দ আনাসপুরে তাঁদের ফাউন্ডেশন থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। নানা পাটেকর একদিনেই ৮০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন। অক্ষয় কুমার ৯০ লাখ টাকা দান করেছেন। আমির খান মারাঠাওয়াড়ার দুটি গ্রাম দত্তক নিয়েছেন। তাঁর পানি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তিনি সত্যমেব জয়তে ওয়াটার কাপ উদ্যোগ শুরু করার পরিকল্পনা করেছেন। এই উদ্যোগে তিনটি জেলার গ্রামগুলোয় পানি সংরক্ষণের টেকনিক শেখানো হবে। যারা এই কাজে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হবে, তাদের পুরস্কৃত করা হবে। এ ছাড়াও আমির খান চলচ্চিত্র শিল্পে তাঁর পরিচিত বন্ধুদের অনেককে একত্রিত করেন, যাঁদের মধ্যে সাইফ আলি খান, রাজকুমার হিরানি, রীতেশ দেশমুখ, কঙ্গনা রানাওয়াত, তাঁর সাবেক স্ত্রী রিনাসহ প্রায় ৬০ জনের মতো ছিলেন। অতিথিদের সকলেই সাহায্যের ব্যাপারে অঙ্গীকার করেছেন।
×