ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের দুই সাহিত্যিককে এক সুতোয় গাঁথার চেষ্টা করেছি -ড. মুকিদ চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের দুই সাহিত্যিককে এক সুতোয় গাঁথার চেষ্টা করেছি -ড. মুকিদ চৌধুরী

নাট্যকার ও নির্দেশক ড. মুকিদ চৌধুরী। নাটক নিয়েই যার পথচলা। দেশের গ-ি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও সমানতালে সুনাম কুড়িয়ে চলেছেন। নিরলস শ্রম ও মেধা দিয়ে শায়েস্তাগঞ্জে গড়ে তুলেছেন নাট্যসংগঠন মুভমেন্ট থিয়েটার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় সংগঠনের ১১তম প্রযোজনা ‘একটি আষাঢ়ে স্বপ্ন’ নাটকের সপ্তম মঞ্চায়ন হবে। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘এ মিড সামার নাইটস ড্রিম’ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’ অনুসৃত এ নাটকটির রচনা, নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি নিজেই। শিল্প দর্শন ও নাট্যসৃজন নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। ‘একটি আষাঢ়ে স্বপ্ন’ নাটকটি কেমন? ড. মুকিদ চৌধুরী : এই নাটকে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের দু’জন সাহিত্য-সম্রাটকে এক সুতোয় গেঁথে মালাটি পরিয়ে দিতে চেয়েছি। রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’ যেখানে শেষ হলো, নাটকের শুরুটা সেখান থেকেই। মণিপুর-রাজ্যজুড়ে উৎসবের আমেজ। রাজকুমারী চিত্রাঙ্গদা ও মহাবীর অর্জুনের বিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু তখনই প্রধান উজির মনু অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হন, সমস্যা: তার কন্যা অন্যপাত্রে আসক্ত। শুরু হয় নাটকের মূল কাহিনী। এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে পরীরাজ, পরীরানী ও কৃষ্ণপরী। ত্রিভুজ-প্রেম হয়ে ওঠে মূল সমস্যা। অবশেষে সবকিছুরই সমাধানও পাওয়া যায়। শুনেছি আপনি একটি নৃত্যনাট্য নিয়ে কাজ করছেন? ড. মুকিদ চৌধুরী : হ্যাঁ, নৃত্যনাট্যটি মঞ্চায়নের দ্বারপ্রান্তে। বাঙালী সংস্কৃতির সুমহান ঐতিহ্যের অমর গাথা, বাংলা লোক-সাহিত্যের দিকপাল, লোক-সঙ্গীতের রসরাজ রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ (১৮৩৩Ñ১৯১৬)-কে নিয়ে আমি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। এই মহামানবকে নিয়ে আমি নাটক ও নৃত্যনাট্য সৃষ্টি করেছি যথাক্রমে ‘রাধারমণ বয়ান’ ও ‘রাধারমণের পদাবলী’। ‘রাধারমণ বয়ান’ করছে ‘দেশ নাট্যগোষ্ঠী’ আর ‘রাধারমণের পদাবলী’ করছে ফারজানা মিতা ও তার দল। ‘রাধারমণ বয়ান’টি সৃষ্টি করা হয় পালা-গানের আদলে, যা রাধারমণের জীবনী আর ‘রাধারমণের পদাবলী’ হচ্ছে রাধারমণের দর্শন নিয়ে, অর্থাৎ রাধা-কৃষ্ণকে ভিত্তি করে। উভয় ক্ষেত্রেই রাধারমণ ঢঙে আমার কিছু গান রয়েছে। বিদেশের মাটিতে আপনার নাটকের সাড়া কেমন? ড. মুকিদ চৌধুরী : বেশ সাড়া পেয়েছি। কলকাতার অনীক থিয়েটার আমার ‘অশোকানন্দ’ নাটকটি মঞ্চস্থ করেছে। গিরীশচন্দ্র মঞ্চসহ পশ্চিম-বাংলার বিভিন্ন থিয়েটার মঞ্চে তা পরিবেশিত হয়। ফলে একইসঙ্গে আমার নাটক তিন দেশে পরিবেশিত হয় গত বছরে। আমার নাট্যচর্চা শুরু হয় ১৯৯১ সালে লন্ডনে। এরপর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে শুরু হয় আমার নাটক। ২০১৮ সালে গ্লোব থিয়েটারে আমার ‘যোদ্ধা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা আছে। আমার নাটক ‘ঋতু’ (১৯৯৮) ও ‘মৌসুমী’(১৯৯৭) এডিনবরা আর্ট ফেস্টিভ্যালে মঞ্চায়ন হয়। লন্ডনে এ সিজন অব বাংলা ড্রামার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে গত ১৩ বছর ধরে। এতে আমার ‘কতরঙ’ (২০১১), ‘একটি আষাঢ়ে স্বপ্ন’ (২০১২), ‘অপ্রাকৃতিক প্রকৃতি’ (২০১৩) ও ‘জলের ভেতর জলের বিসর্জন’ (২০১৫) মঞ্চায়ন হয়। এবারও আশা করছি ‘একমুঠো জন্মভূমি’ নাটকটি মনোনীত হবে। এছাড়াও লন্ডনের বিভিন্ন উৎসবে আমার নাটক পরিবেশিত হয়ে আসছে, যেমন, ‘বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ’ (১৯৯৮), ‘তালতরঙ্গ’(১৯৯৯), ‘শ্যামা’ (১৯৯১), ‘চ-ালিকা’ (১৯৯১), ‘সাগরিকা’ (১৯৯৫) প্রভৃতি। এ থেকে অনুধাবন করা যায় যে, কিভাবে নাট্য-জগতে আমার আগমন ঘটে। নাটকে দর্শক স্বল্পতাকে উত্তরণের জন্য এ মুহূর্তে কী করণীয় বলে মনে করেন? ড. মুকিদ চৌধুরী : বিশ্বনাটকের প্রভাব বাঙালী নাট্যকর্মীদের উপরও পড়েছে একথা সত্য। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের নাটক ইউরোপীয় নাটকের অনুকরণজাত শিল্পফসল। বাঙালীর স্বতন্ত্র শিল্পতত্ত্বের বিনির্মাণ সক্ষমভাবে ঘটাতে পারলেই দর্শক স্বল্পতাকে উত্তরণ করা সম্ভব; কারণ, প্রাচীন বাংলার শিল্পোৎসবকেন্দ্রিক নাটক, বৌদ্ধ সংস্কৃতি প্রভাবিত নাট্যচর্চা এবং দীর্ঘ ব্যাপ্ত মধ্যযুগের আখ্যান পরিবেশনার মধ্যে বাঙালীর নাট্যচিন্তা পরিপুষ্ট হয়েছে; আর এর সবকিছুই সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সম্পূর্ণ হয়েছে। আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলেন। ড. মুকিদ চৌধুরী : বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশজাত শিল্পভাবনার প্রেরণায় ইউরোপীয় নাট্যরীতির প্রচল ভেঙে, ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক ‘বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার’ শিল্পধারাটি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার একটি করে তৃণমূল পর্যায়ের নাট্যদলের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়ে নাটকের সাংগঠনিক শক্তি এবং সচেতনতা তৈরি করায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা। একইসঙ্গে জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত, জনগণের জন্য রচিত এবং জনগণের বিনোদনের জন্য পরিবেশিত ‘বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার’ শিল্পধারার সুকুমার-শিল্প নাটকগুলোকে ক্রমাগত নাট্য-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। -গৌতম পাণ্ডে
×