ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘সদিচ্ছা থাকলে এখানে ক্রিকেটের বড় আসর বসানো সম্ভব’ –খসরু

আন্তর্জাতিকমানের বরিশাল স্টেডিয়ামে নেই কোন খেলা

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

আন্তর্জাতিকমানের বরিশাল স্টেডিয়ামে নেই কোন খেলা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ আন্তর্জাতিক মানের খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার সকল অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও নগরীর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে হচ্ছে না জেলা পর্যায়েরও কোন খেলা। প্রতিযোগিতামূলক জনপ্রিয় ক্রিকেটের আসর আয়োজনে ভর করা ‘শনির দশা’ আজও কাটেনি। এ নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই জেলার খেলোয়াড়, সংগঠক ও ক্রীড়ামোদীদের। সূত্রমতে, নগরীর বান্দ রোডে ২৯ একর ১৫ শতক জমির ওপর নির্মিত বরিশাল বিভাগীয় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয় ১৯৬৬ সালে। তখন স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ছিল মাত্র দুই হাজার। অতীত থেকেই বরিশালের খেলোয়াড়দের দাপট ছিল দেশজুড়ে। এ কথা বিবেচনা করে ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলার আয়োজন এবং দর্শকের বাড়তি চাপ সামলাতে বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিষদ ২০০৬ সালে স্টেডিয়ামটিকে আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে উন্নয়নের কাজ করেন। সে সময় স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইট, ৩৫ হাজার দর্শকের জন্য গ্যালারি, পাঁচতলা প্যাভেলিয়ন, মিডিয়া সেন্টার সবকিছুই নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে থেমে যায় সবকিছু। বড় ম্যাচ আয়োজনে বরিশালে আন্তর্জাতিকমানের আবাসিক ব্যবস্থা না থাকা আর বিমান না চলার অজুহাত ছিল এতদিন। ইতোমধ্যে সে সব সঙ্কটও কেটে গেছে। বরিশালে নির্মিত হয়েছে পাঁচ তারকা আবাসিক হোটেল, নিয়মিত চলাচল করছে বিমান। বরিশাল বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সহসভাপতি আসাদুজ্জামান খসরু বলেন, বরিশালের ছেলেরা গত বছর ক্রিকেটে জাতীয় লীগে ভাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সদিচ্ছা থাকলে এখানে ক্রিকেটের বড় আসর বসানো সম্ভব। তার মতে, দেশজুড়ে ক্রিকেট সাফল্যের শরিক হতে চায় বরিশাল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড স্টেডিয়ামের দায়িত্ব নিয়ে বরিশালে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করবে এমনটাই প্রত্যাশা বরিশালবাসীর। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুরুজ বলেন, আমাদের এখানে বড় ধরনের কোন নেতৃত্ব নেই, যে আমাদের এই বিষয়টি তুলে ধরবে বা প্রেসার ক্রিয়েট করবে। তিনি আরও বলেন, এগুলো রাজনৈতিক বিষয়, তাই রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করতে হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক নূরুল আলম বলেন, এটাকে আনার জন্য সেন্ট্রালে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা লাগবে। আর এটার পিছনে দরদ দিয়ে লেগে থাকতে হবে। আয়োজন করা হয়নি প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট আসর ॥ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ও সমীহ জাগানো দল হিসেবে পরিচিত করেছে দেশের ক্রিকেটারা। বরিশাল নগরীতে প্রচুর প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকার পরও জাতীয় ক্রিকেটে খুব কম সংখ্যক নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছে। কোন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের আসর না হওয়ার কারণে বিভাগের অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়ে হারিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর গত মৌসুমে এ স্টেডিয়ামে দায়সারাভাবে প্রিমিয়ার লীগ হলেও এবার আয়োজনের কোন লক্ষণ নেই। ক্রিকেটের মৌসুম শেষের পথে হলেও এবারে বরিশাল প্রিমিয়ার লীগসহ প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগের কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট উপ-পরিষদ। আদৌ হবে কিনা, সে বিষয় নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন ক্রিকেটাররা। একাধিক ক্লাবের নিয়মিত ক্রিকেটাররা জানান, ক্রিকেটে বিভাগের মধ্যে সব চাইতে ভালমানের স্টেডিয়াম হলো শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামে জাতীয় মানের পিচ, ভাল গ্যালারি, প্যাভিলিয়ন, ফ্লাড লাইটসহ সকল সুবিধা রয়েছে। কিন্তু স্টেডিয়ামে ক্রিকেট বাদে নিয়মিত জাঁকজমকপূর্ণতার সঙ্গে অন্য খেলার প্রতিযোগিতা হয়। ক্রিকেট খেলা না হওয়ার কারণে স্টেডিয়ামের সুযোগ-সুবিধাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গ্যালারি কিশোর-কিশোরীদের অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর স্থান, প্যাভিলিয়ন ও তার ছাদ ক্ষমতাসীনদের মদ ও জুয়ার আসরের স্থান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অব্যবহৃত লাইট অন্যত্র খুলে নেয়া হয়েছে। ক্রিকেট নিয়ে এ বিড়ম্বনা পুরানো জানিয়ে সূত্রটি আরও জানায়, ক্রিকেটারদের আন্দোলনে সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল আলমের নির্দেশে তিন বছর পর গত মৌসুমে জমজমাট প্রিমিয়ার লীগ হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থা গত বছর সাবেক জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বাধ্য হয়ে লীগের আয়োজন করলেও এবার আর হয়নি। মৌসুমের শেষের দিকে এসেও প্রিমিয়ার লীগ শুরুর কোন পরিকল্পনাই নেই ক্রীড়া সংস্থার। সূত্রমতে, অতিসম্প্রতি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ও প্রাইম ব্যাংক ইয়াং টাইগার্স স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। প্রিমিয়ার লীগ শুরুর জন্য ক্রিকেটাররা একাধিকবার জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান সদস্য সচিব মোঃ নুরুল আলম নুরুর কাছে গিয়েছেন। ক্রিকেট ক্লাবের কাছে জিম্মি প্রমাণ করে নিয়ম ভেঙ্গে প্রথম বিভাগ লীগ আয়োজন করতে চাইছেন তিনি। ক্রিকেটাররা জানান, ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার নিয়ম অনুসারে প্রথমে প্রিমিয়ার লীগ ও সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা দ্বিতীয় বিভাগ। প্রিমিয়ার লীগ থেকে দুটি দল বাদ হয় তারা খেলেন প্রথম বিভাগে। প্রথম বিভাগ থেকে পয়েন্টের ভিত্তিতে বাদ দুই দল খেলবে দ্বিতীয় বিভাগে। একইভাবে দ্বিতীয় বিভাগের চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দল খেলবে পরবর্তীদের প্রথম বিভাগে এবং প্রথম বিভাগের চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপরা যোগ হবে প্রিমিয়ার লীগের দলের তালিকায়। বর্তমান প্রিমিয়ার লীগের জন্য আটটি ক্লাব রয়েছে। আবাহনী ক্রীড়া চক্র, নজরুল পাঠাগার, দক্ষিণ আলেকান্দা একাদশ, সাংস্কৃতিক মজলিস, ভুট্ট স্মৃতি ক্লাব, ইয়াকুব আলী স্মৃতি ক্লাব, ধান গবেষণা একাদশ এবং এনাম স্মৃতি ক্লাব। গত বছর প্রিমিয়ার লীগে উত্তর আলেকান্দা ও সুপার নোভা তালিকাভুক্ত হওয়ায় প্রথম বিভাগে মোট ১৫টি ক্লাব রয়েছে। প্রিমিয়ার লীগের আটটি ক্লাব অনিয়মিত আসরের কারণে কোন পৃষ্ঠপোষক না থাকায় ব্যয় মেটানোর অভাবে খেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এছাড়া বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার পদবিদার এক প্রভাবশালী খেলার নামে বরাদ্দ আত্মসাতের কারণে কৌশলী চাপও রয়েছে। ক্রীড়া সংস্থার দেখানো পথে তাই এখন ক্লাব এ্যাসোসিয়েশন তৈরি করে লীগ বাদ দিয়ে প্রথম বিভাগের আগ্রহ দেখানো হচ্ছে। অথচ প্রিমিয়ার লীগ থেকে বাছাইকৃতদের জাতীয় লীগে জেলার স্কোয়াডের খেলোয়াড় পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব মোঃ নুরুল আলম নুরুর সঙ্গে প্রিমিয়ার লীগের বিষয়ে আলাপের জন্য ইতোমধ্যে কথা বলেছেন ক্রিকেটাররা। তিনি জানিয়েছেন, প্রিমিয়ার লীগের জন্য দুইবার সভা করা হয়েছে। কিন্তু ক্লাব রাজি নয়, তিনি রাজি থাকলে তো শুরু হবে না। প্রিমিয়ারের আটটি ক্লাব প্রথম বিভাগে খেলতে আগ্রহী রয়েছেন। এ ব্যাপার জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। ক্রিকেটাররা যদি খেলার আয়োজনের আরজি নিয়ে আমাদের কাছে আসেন তবে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। ক্রীড়ামোদি ও খেলোয়াড়রা বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক মানের খেলা আয়োজন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তা, দক্ষিণাঞ্চলের কৃতী সন্তান বর্তমান সংসদের মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, রাশেদ খান মেনন ও জেলা আ’লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×